বুধবার, অক্টোবর 4, 2023
spot_img

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের দাবিটি বিভ্রান্তিকর

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য বহুবছর ধরে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

যা দাবি করা হচ্ছে

গত ১০ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে বেইল আউট এড়ানোর পথ দেখিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন অর্থনীতিবিদ (আর্কাইভ) শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নানকে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। আজ সোমবার রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স অর্থনীতিতে এ বছরের নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।” 

একই দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন – ডেইলি স্টার (আর্কাইভ), বিডি নিউজ (আর্কাইভ), বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (আর্কাইভ), জাগো নিউজ (আর্কাইভ), নিউজ বাংলা (আর্কাইভ), দেশ রূপান্তর (আর্কাইভ), যুগান্তর (আর্কাইভ), ইত্তেফাক (আর্কাইভ), নয়া দিগন্ত (আর্কাইভ), সময় নিউজ (আর্কাইভ), চ্যানেল আই (আর্কাইভ), জনকণ্ঠ (আর্কাইভ), ইনকিলাব  (আর্কাইভ), বাংলা ট্রিবিউন (আর্কাইভ), ঢাকা পোস্ট (আর্কাইভ), আরটিভি (আর্কাইভ), এনটিভি (আর্কাইভ), চ্যানেল ২৪ (আর্কাইভ), প্রথম আলো (আর্কাইভ), বাংলানিউজ২৪ (আর্কাইভ), বণিক বার্তা (আর্কাইভ), কালের কন্ঠ (আর্কাইভ), রাইজিং বিডি (আর্কাইভ), ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা (আর্কাইভ), ভোরের কাগজ (আর্কাইভ), ঢাকা ট্রিবিউন (আর্কাইভ), কালবেলা (আর্কাইভ), মানবকণ্ঠ (আর্কাইভ), ঢাকা টাইমস (আর্কাইভ), ঢাকা প্রকাশ (আর্কাইভ), সমকাল (আর্কাইভ), আজকের পত্রিকা (আর্কাইভ), সংবাদ (আর্কাইভ), ইউএনবি (আর্কাইভ), দৈনিক আমাদের সময় (আর্কাইভ), বার্তা২৪ (আর্কাইভ), সময়ের আলো (আর্কাইভ), বাংলা ইনসাইডার (আর্কাইভ), দৈনিক আজাদী (আর্কাইভ), এবিনিউজ২৪ (আর্কাইভ), নয়া শতাব্দী (আর্কাইভ), সময়ের কন্ঠস্বর (আর্কাইভ), সিলেট মিরর (আর্কাইভ), যমুনা টিভি (আর্কাইভ), বাংলাভিশন (আর্কাইভ), আলোকিত বাংলাদেশ (আর্কাইভ), একাত্তর টিভি (আর্কাইভ), বৈশাখী টিভি (আর্কাইভ), নাগরিক টিভি (আর্কাইভ), The Financial Express (আর্কাইভ), New Age (আর্কাইভ), Daily Sun (আর্কাইভ), যায়যায়দিন (আর্কাইভ), ডেইলি ক্যাম্পাস (আর্কাইভ), মানবজমিন (আর্কাইভ), ডিবিসি নিউজ (আর্কাইভ), বাংলা২৪লাইভ নিউজপেপার (আর্কাইভ), ক্যাম্পাস লাইভ২৪ (আর্কাইভ), দৈনিক শিক্ষা (আর্কাইভ),আমার সংবাদ (আর্কাইভ), শেয়ারবিজ (আর্কাইভ), ভোরের ডাক (আর্কাইভ), ঢাকা মেইল (আর্কাইভ), একুশে টিভি (আর্কাইভ), ডিএমপি নিউজ (আর্কাইভ), সংবাদ প্রকাশ (আর্কাইভ),বাংলাদেশ প্রতিদিন (আর্কাইভ), নিউজ২৪ (আর্কাইভ), দ্য রিপোর্ট (আর্কাইভ), অধিকার.নিউজ (আর্কাইভ), ডেইলি বাংলাদেশ (আর্কাইভ), বিডি২৪লাইভ (আর্কাইভ), অর্থসূচক (আর্কাইভ), ডেইলি অবজার্ভার (আর্কাইভ), বাংলাদেশ জার্নাল (আর্কাইভ), আমাদের সময় (আর্কাইভ), বিবার্তা২৪ (আর্কাইভ), পূর্ব পশ্চিম বিডি (আর্কাইভ)।

২০২১ সালে একই দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখুন যুগান্তর (আর্কাইভ), সময় নিউজ (আর্কাইভ)। 

২০২০ সালে একই দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখুন প্রথম আলো (আর্কাইভ), যুগান্তর (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের দাবিটি সঠিক নয় বরং আলফ্রেড নোবেল স্মরণে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুদানে দেওয়া এই পুরস্কারের নাম সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জাতীয় দৈনিক The Daily Star এর ওয়েবসাইটে There is no Nobel Prize in Economics শিরোনামে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, “অর্থনীতিতে কোনো নোবেল দেওয়া হয় না। ১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর আলফ্রেড নোবেল প্যারিসের সুইডিশ-নরওয়েজিয়ান ক্লাবে তার তৃতীয় এবং শেষ উইলে স্বাক্ষর করেন। উইলের উদ্ধৃতিতে, আলফ্রেড নোবেল নির্দেশ দেন যে তার অবশিষ্ট সমস্ত সম্পত্তি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য, শান্তি এই ৫টি ক্ষেত্রে পুরষ্কার প্রদানে ব্যবহার করা হবে।”

পরবর্তীতে নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইটে Nomination and selection of economic sciences laureates শিরোনামের একটি পাতায় এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “অর্থনৈতিক বিজ্ঞানের পুরস্কার কোনো নোবেল পুরস্কার নয়। ১৯৬৮ সালে, সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক‘ “The Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel” নমাের একটি পুরস্কার প্রবর্তন করে এবং নোবেল পুরষ্কারের মতো একই নীতি অনুসারে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস দ্বারা এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হলেও অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৬৯ সালে।”

এছাড়া, গত ১০ অক্টোবর নোবেল প্রাইজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ বছরের অর্থনৈতিক বিজ্ঞান পুরস্কার ঘোষণার বিষয়ে একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়।

উক্ত পোস্টে বলা হয়, “‘রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস’ বেন এস বার্নানকে, ডগলাস ডব্লিউ. ডায়মন্ড এবং ফিলিপ এইচ ডাইবভিগকে ব্যাংক এবং আর্থিক সংকটের উপর গবেষণার জন্য আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে ২০২২ সালের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে Sveriges Riksbank পুরস্কার প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

উক্ত পোস্টে ‘অর্থনীতিতে নোবেল প্রদান করা হয়েছে‘ শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

রিস্কব্যাংকের উদ্যোগ যেভাবে

১৯৫৫ সালে ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক’ এর গর্ভনর হিসেবে নিয়োগ পান পার অ্যাসব্রিন্ক। অ্যাসব্রিন্কই প্রথম অর্থনীতিতে নোবেলের নাম যুক্ত করে একটি পুরস্কার প্রদানের চিন্তা করেন। তাছাড়া, সেভেরিজেস রিক্সব্যাংকের ৩০০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও সামনে রেখে এই উদ্যোগ কার্যকর করতে চেয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করা হয়। পরবর্তীতে নোবেল ফাউন্ডেশন সেটি অনুমোদন দেয়। তবে এরপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে আলফ্রেড নোবেলের বয়োজ্যেষ্ঠ জীবিত বংশধরের সম্মতি গ্রহণের শর্ত ছিল। পরবর্তীতে ফাউন্ডেশন সদস্যরা ৮৭ বছর বয়সী নোবেলের একজন বংশধরের কাছ থেকে অনুমতি পান। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, পুরস্কারটিকে যেন বলা হয়, ‘আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানের পুরস্কার‘। ১৯৬৯ সালে রাগনার ফ্রিশ এবং জ্যান টিনবার্গেনকে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

মনোনয়ন ও বাছাই প্রক্রিয়া কী একই?

রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের ইকোনমিক সায়েন্স প্রাইজ কমিটি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে পুরস্কারের জন্য প্রার্থীদের নির্বাচন করে থাকে। তবে এই ক্যাটাগরির মনোনয়ন যারা দেবেন অর্থাৎ যারা নমিনেটর তারা নোবেলের পাঁচটি ক্যাটাগরি থেকে কিছুটা ভিন্ন। নোবেলের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ থাকলে অর্থনৈতিক বিজ্ঞান পুরস্কারে তাদের মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নেই। মূলত, রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য, পূর্বে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি, কমিটির সদস্য, নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের স্থায়ী অধ্যাপকরা সাধারণত এই মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। তবে বাকি সব প্রক্রিয়া একই অর্থাৎ নোবেল পুরস্কারের মতোই। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম এবং মনোনয়ন সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য পরবর্তী ৫০ বছর পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না। 

পুরস্কারের অর্থ কে বা কারা দেয়?

সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজের অর্থ নোবেল প্রদত্ত সম্পত্তি থেকে দেওয়া হয় না। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেভেরিজেস রিক্সব্যাংকের দেওয়া অনুদান থেকে প্রতি বছর এই প্রাইজের অর্থ প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থ নোবেল পুরস্কারের সমান, ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার।

মেডেলেও ভিন্নতা?

নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত “সুইডিশ” পদকগুলোর প্রতিটির ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম এবং ৬৬ মিলিমিটার ব্যাস সহ ২৩ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি হতো। পরবর্তীতে  ১৮ ক্যারেট পুনর্ব্যবহারযোগ্য সোনা দিয়ে তৈরি হয়ে আসছে মেডেলগুলো। নোবেল পুরস্কারের পাঁচটি ক্যাটাগরির পদকের ওজন ১৭৫ গ্রাম এবং অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে পুরস্কারের জন্য পদকের ওজন ১৮৫ গ্রাম।

গণমাধ্যমের দ্বিমুখিতা?

জাতীয় দৈনিক The Daily Star এর ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে (আর্কাইভ) বলা হয়, “অর্থনীতিতে কোনো নোবেল দেওয়া হয় না।” কিন্তু চলতি বছরের ১০ অক্টোবর পত্রিকাটি আরেক প্রতিবেদনে (আর্কাইভ) জানায়, এই বছরের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বেন এস বার্নাঙ্ক এবং দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড এবং ফিলিপ এইচ ডিবভিগ, “ব্যাংক ও আর্থিক সংকট নিয়ে গবেষণার জন্য।”

অর্থাৎ, একই গণমাধ্যম দুইটি প্রতিবেদনে একই পুরস্কারের দুইটি ভিন্ন নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।

মূলত, ১৯০১ সাল থেকে পাঁচ ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরষ্কার প্রদান শুরু হলেও ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে পুরষ্কার ঘোষণা করে। সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক কর্তৃক নোবেল ফাউন্ডেশনকে প্রদানকৃত অনুদানের উপর ভিত্তি করে ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতিবছর অর্থনীতিতে পুরষ্কারটি দেওয়া হয়। নোবেল পুরষ্কারের মতো নমিনেটর ব্যতীত অন্য প্রক্রিয়াগুলো একই নীতি অনুসরণ করে রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্স উক্ত পুরষ্কার বিজয়ীদের বাছাই করে। রিক্সব্যাংকের দেওয়া এই পুরষ্কারের পরিমাণও নোবেল পুরষ্কারের সমান। তবে নোবেল ও রিক্সব্যাংক প্রাইজের মেডেলের ডিজাইন ভিন্ন। কিন্তু বহু বছর ধরে এই পুরস্কার ঘোষণার পর গণমাধ্যমে এটিকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক অর্থনৈতিক বিজ্ঞান পুরষ্কার পেয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে দুইজন বাঙালিও (অর্মত্য সেন, অভিজিৎ ব্যানার্জি) রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের বিষয়ে পূর্বে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img