সম্প্রতি ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমারের জন্মদিনকে ঘিরে সতীর্থ খেলোয়াড়ের সাথে তার আবেগঘন মুহূর্তে ধারণ করা একটি ছবির সঙ্গে একজন ফটোগ্রাফারের কান্নার ছবি সংযুক্ত করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফটোগ্রাফারের কান্নার ছবিটি ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমারের কোনো খেলার সময়ের নয় বরং ছবিটি ২০১৯ সালে ধারণ করা একজন ইরাকি ফটোগ্রাফারের।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা Asian Football Confederation (AFC) এর AFC Asian Cup এর অফিশিয়াল টুইটার একাউন্টে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ছবিটিতে থাকা ফটোগ্রাফার একজন ইরাকি। তাঁর এই ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপের “Round Of 16” কাতার বনাম ইরাকের ম্যাচে।
পাশাপাশি আরব আমিরাতের খেলাধুলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট Sports360 Arabiya এর টুইটার একাউন্টে একই বছরের ২৫ জানুয়ারি ‘مصور عراقي يبكي أثناء تأدية عمله وهو يشاهد خروج منتخب بلاده من كأس آسيا.‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়।
আরবি ভাষায় প্রদত্ত টুইটটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করে জানা যায়, ছবিতে থাকা ফটোগ্রাফারটি একজন ইরাকি। এশিয়ান কাপ থেকে তার দেশ ইরাকের বিদায়ে তিনি কান্না করছিলেন।
এছাড়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৪ মে ‘Fact Check-Photo shows crying photographer at Asian Cup 2019, not 2021 conflict in Jerusalem‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিতে থাকা ফটোগ্রাফারটি ইরাকি নাগরিক। তার কান্নার ছবিটি ২০১৯ সালের ২২ জুন এএফসি এশিয়া কাপের রাউন্ড অব ১৬ এর ইরাক বনাম কাতারের খেলার সময় ধারণ করা হয়। এই খেলায় ইরাক কাতারের কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয়।
এছাড়া Teller Report নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘An Iraqi photographer hides his grief with his lens‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কান্নারত ফটোগ্রাফারটি ইরাক ফুটবল ফেডারেশনের ফটোগ্রাফার মুহাম্মেদ আল আজ্জায়ী। তিনি রাউন্ড অব ১৬ এর খেলায় কাতারের সঙ্গে ইরাক হেরে টুর্নামেন্ট থেকে খালি হাতে বিদায় নেওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
অর্থাৎ, নেইমারের জন্মদিন উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ক্যামেরাম্যানের চোখে জল এনে দেওয়া কপাল পোড়ার জন্মদিন’ শীর্ষক শিরোনামে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে, ছবির সঙ্গে নেইমারের কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, এএফসি এশিয়ান কাপ মূলত এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন দ্বারা পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট।
এএফসির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জাতীয় দলগুলো নিয়ে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়।
নেইমারের কান্নার ছবিটি কবের?
অপরদিকে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফটোগ্রাফারের কান্নার ছবির সাথে যুক্ত নেইমারের কান্নার ছবিটি সম্প্রতি শেষ হওয়া কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর। এই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন নেইমার।
তার কান্নার ছবিটি ঐ ম্যাচেরই৷ বিস্তারিত দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ইরাকি ফটোগ্রাফারের আলোচিত এই ছবিটি আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির বার্সেলোনা থেকে বিদায়ী প্রেস কনফারেন্সে কান্নার মুহূর্তে ধারণ করা একটি ছবির সঙ্গে যুক্ত করেও প্রচার করা হয়। সেসময় রিউমর স্ক্যানার টিম ছবিটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে উল্লেখ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত হওয়ার নমুনা
মূলত, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এএফসি এশিয়ান কাপের “Round Of 16” ম্যাচে কাতারের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় ইরাক। এই ম্যাচের সময় মাঠে উপস্থিত ইরাক ফুটবল ফেডারেশনের ফটোগ্রাফার Mohammeed al-Azzawi নিজ ক্যামেরা সহ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার কান্নার এই দৃশ্যটিকেই ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমারের জন্মদিন উপলক্ষে তার ছবির সঙ্গে যুক্ত করে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ক্যামেরাম্যানের চোখে জল এনে দেওয়া কপাল পোড়ার জন্মদিন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, নেইমারের জন্মদিন উপলক্ষে একজন ফটোগ্রাফার নেইমারের জন্য কান্না করার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- AFC Asian Cup: Iraqi Cameraman crying
- Sports360 Arabiya: ‘مصور عراقي يبكي أثناء تأدية عمله وهو يشاهد خروج منتخب بلاده من كأس آسيا.
- Reuters: Fact Check-Photo shows crying photographer at Asian Cup 2019, not 2021 conflict in Jerusalem
- Teller Report: An Iraqi photographer hides his grief with his lens
AFC Asian Cup : Facebook