সম্প্রতি, ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আইসিসি বিশ্বকাপের ট্রফির প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০ টাকার একটি ধাতব মুদ্রার ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের ১০ টাকার নতুন কয়েন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ১০ টাকার এই ধাতব কয়েনটি বাংলাদেশের নতুন বা প্রচলিত কোনো মুদ্রা নয় বরং, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপ উপলক্ষে সে বছর অবমুক্ত হওয়া স্মারক মুদ্রা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্বকাপ ক্রিকেট: স্মারক মুদ্রা অবমুক্ত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন স্মরণীয় করে রাখতে ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয় ১০ হাজার স্মারক মুদ্রা। ১০ টাকা মূল্যমানের এ মুদ্রার সংগ্রহ মূল্য তিন হাজার টাকা।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বিশ্বকাপের স্মারক হিসেবে সংগ্রহের জন্য এসব মুদ্রা তৈরি করা হয়। রূপার এই মুদ্রার এক পিঠে লোগো ও ‘আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ ২০১১’ কথাটি লেখা রয়েছে। অপর পিঠে বাংলা ও ইংরেজিতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও দশ টাকা’ মুদ্রিত রয়েছে। ৩০ গ্রাম ওজনের গোলাকার একেকটি মুদ্রার ব্যাস ৩৮ মিলিমিটার। মুদ্রার নকশা করেছেন কেজি মুস্তফা।
এছাড়াও, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত স্মারক মুদ্রার তালিকায়ও আলোচিত মুদ্রাটি খুঁজে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানাচ্ছে, ২০১১ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি ১০ টাকার এই স্মারক মুদ্রাটি অবমুক্ত করা হয়েছিল। সেসময় এই মুদ্রার মূল্য ছিল ৬ হাজার টাকা।
তাছাড়া ব্যাংকিং সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট Banking News’এ ২০২০ সালের ০৮ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের স্মারক কয়েনের ইতিহাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও ১০ টাকার স্মারক মুদ্রার উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকেও আলোচিত মুদ্রাটির বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
পরবর্তীতে ই-কমার্স ওয়েবসাইট Ebay’তেও উক্ত স্মারক মুদ্রাটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে মুদ্রাটির মূল্য চাওয়া হয়েছে ২৪৯.৪৫ ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কোনো ১০ টাকার নতুন ধাতব মুদ্রা প্রকাশের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে গত ১৬ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ টাকা মূল্যমানের নতুন স্মারক ডাক টিকেট অবমুক্ত করেন।
অর্থাৎ, আলোচিত ১০ টাকার এই মুদ্রাটি বাংলাদেশের বাজারে নতুন কোনো মুদ্রা নয়। এটি ২০১১ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ উপলক্ষে অবমুক্ত হওয়া একটি স্মারক মুদ্রা।
প্রসঙ্গত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্থান ও ঘটনাসমূহকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে প্রতিকী মুদ্রা বা নোট ছাপে তা-ই ‘স্মারক মুদ্রা‘।
উল্লেখ্য, পূর্বে ৫০ টাকার স্মারক মুদ্রাকে প্রচলিত মুদ্রা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০১১ সালে অবমুক্ত হওয়া ১০ টাকার একটি স্মারক মুদ্রাকে বাংলাদেশের নতুন ১০ টাকার কয়েন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- bdnews24: বিশ্বকাপ ক্রিকেট: স্মারক মুদ্রা অবমুক্ত
- Bangladesh Bank: Commemorative Coin
- Banking News: বাংলাদেশের স্মারক কয়েনের ইতিহাস
- Ebay: Bangladesh 10 taka World Cricket Cup Sports PR69 PCGS silver coin 2011
- Jagonews24: স্মারক নোট বা মুদ্রা দিয়ে কি কেনাকাটা করা যায়?
- Rumor Scanner’s Own Analysis