সম্প্রতি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফা ও শ্যারোন স্টোন শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির অভিনেত্রী মিয়া খলিফার বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা এবং বিবৃতি দাতার তালিকায় শ্যারন স্টোন নামের এক নারীর নাম থাকলেও তিনি নীল ছবির নায়িকা বা পর্নো তারকা নন বরং তিনি একজন মার্কিন অভিনেত্রী।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলা তে “ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি” শিরোনামে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা৷
এ বিষয়ে বিশ্বের ৪০ জন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। ৪০ বিশ্বনেতার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব৷”
একই তারিখে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায় এবং উক্ত প্রতিবেদনে বিবৃতিতে সই করা সবার নামের তালিকা পাওয়া যায়। উক্ত নামের তালিকায় নীল ছবির তারকা বা পর্নো তারকা মিয়া খলিফার নাম পাওয়া যায়নি। তবে শ্যারন স্টোন নামের একজন মার্কিন অভিনেত্রীর নাম পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানের PROTECT YUNUS নামের ব্লগ ওয়েবসাইটে গত ২৭ আগস্ট “Global Leaders and Nobel Laureates Call for Ending the Persecution of Muhammad Yunus” শীর্ষক শিরোনামে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
বিবৃতিটি পর্যবেক্ষণ করে বিবৃতি দাতাদের নামের তালিকায় সেখানে পর্নো তারকা মিয়া খলিফার নাম পাওয়া যায়নি। তবে, শ্যারন স্টোন নামের একজনের নাম পাওয়া যায়, যার পরিচয় হিসেবে ‘মা’ উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও, গত ২৭ আগস্ট শ্যারন স্টোনের পরিচয় অনুসন্ধানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে সম্পর্কিত এমন একই নামের একজন মার্কিন অভিনেত্রী পাওয়া যায়। ছবি স্টোরেজ প্রতিষ্ঠান Gettyimages এর ওয়েবসাইটে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে শ্যারন স্টোনকে মঞ্চে দেখা যায়। এছাড়াও আরও একাধিক অনুষ্ঠানে মার্কিন অভিনেত্রী শ্যারন স্টোনের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর ছবি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে উক্ত চিঠিতে মা পরিচয়ে উদ্ধৃত শ্যারন স্টোন নামের ব্যক্তি মার্কিন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
শ্যারন স্টোন সাইকো সেক্সুয়াল থ্রিলার ‘বেসিক ইনস্টিনক্ট’ এ অভিনয় করেছিলেন। লাভলেস ছবিতে তিনি একজন পর্নো তারকার মা এর চরিত্রে অভিনয় করেন। বায়োগ্রাফি ওয়েবসাইটে শ্যারন স্টোন সম্পর্কে জানা যায়, শ্যারন স্টোন হলেন একজন অস্কার-মনোনীত অভিনেত্রী যিনি টোটাল রিকল, বেসিক ইনস্টিনক্ট, স্লিভার, ক্যাসিনো এবং লাভেলেস সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তার ভূমিকার জন্য পরিচিত৷
অর্থাৎ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফার নাম নেই। শ্যারন স্টোন নামের একজন অভিনেত্রীর নাম রয়েছে, যিনি কিছু সাহসী ছবিতে অভিনয় করেছেন, তবে তিনি পর্নো তারকা নন বরং একজন সমাদৃত মার্কিন অভিনেত্রী।
মূলত, গত মার্চ ও আগস্ট মাসে শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তি দুইটি পৃথক বিবৃতি প্রকাশ করেন। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স রয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ড. ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির নায়িকা মিয়া খলিফা ও শ্যারন স্টোনের বিবৃতি দেওয়ার কথা প্রচার করা হয়। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দুই দফায় বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মিয়া খলিফা নামের কেউ ছিলেন না এবং শ্যারন স্টোনের নাম থাকলেও তিনি নীল ছবির নায়িকা বা পর্নো তারকা নন। তিনি একজন অভিনেত্রী। তবে দুই পৃথক বিবৃতিতেই হিসেবে ‘মা’ উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
এছাড়াও ৪০ বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বের দেওয়া বিবৃতির ওপর ‘ড. ইউনূস প্রসঙ্গে ৪০ বৈশ্বিক ব্যক্তির খোলা চিঠি : আসলে কী ঘটেছে?’ শিরোনামে রিউমর স্ক্যানার এর একটি ফ্যাক্ট স্টোরি দেখুন এখানে।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে নীল ছবির অভিনেত্রী মিয়া খলিফার বিবৃতি দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং শ্যারন স্টোন নামের একজন বিবৃতি দিলেও তিনি পর্নো তারকা নন।
তথ্যসূত্র
- DW Bangla – ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি
- PROTECT YUNUS- “Global Leaders and Nobel Laureates Call for Ending the Persecution of Muhammad Yunus”
- PROTECT YUNUS- Global Leaders Appeal to the Bangladeshi Prime Minister Regarding the Treatment of Professor Muhammad Yunus in An Open Letter
- Gettyimages- https://www.gettyimages.com/detail/news-photo/winner-of-this-years-nobel-peace-prize-2006-muhammad-yunus-news-photo/121038950