যুগান্তরে প্রচারিত ফাটল ধরা পিলারের ছবিটি জবির নতুন একাডেমিক ভবনের নয়

গত ১৩ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরের প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে “ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলে পাঠদান প্রশাসনিক কার্যক্রম” শিরোনামে একটি ফাটল ধরা পিলারের ছবি সংযুক্ত করে “নতুন একাডেমিক ভবনে পিলারে ফাটল” ক্যাপশনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “নতুন একাডেমিক ভবনে পিলারে ফাটল” ক্যাপশনে প্রকাশিত ছবিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একাডেমিক ভবনের বাস্তব কোনো পিলারের নয় বরং এটি জবির চারুকলা বিভাগের “৩য় বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী- ২০২২”এ প্রদর্শিত একটি ভাস্কর্যের ছবি।

কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাক এর প্রিন্ট সংস্করণে ১৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে “আশফিকের স্থাপত্য প্রশংসা কুড়িয়েছে” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। 

সংবাদ বিবরণীতে বলা হয়েছে “বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের একটি ভিত্তির এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে সবাই আশ্চর্য হলেও পরে এটি নিয়ে চলে নানা হাস্যরস। কেউ হাত দিয়ে টেনে ছেঁড়ার চেষ্টারত অবস্থায় ছবি তুলছে, কেউবা আবার মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় ঘুসি দিয়ে ফাটল ধরিয়েছে, এমন পোজে ছবি তুলছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায়, এটি মূলত একটি স্থাপত্যকর্ম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে এমন অভিনব স্থাপত্য সবাইকে কৌতূহলী করে তুলেছে মূল রহস্য জানার জন্য। স্থাপত্যকর্মটির স্রষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি আশফিকুর রহমান। চিত্রকর্মটির নাম টাইম অব আস্পেক্ট অর্থাৎ সময়ে দৃষ্টিভঙ্গি।”

পরবর্তীতে যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে দেওয়া জগন্নাথ বিশ্বপবিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমাম হোসাইন সুমন এর একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বছরের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত একটি ভাস্কর্য এটি। এমএফএ পর্বের এই প্রজেক্ট ওয়ার্কটি ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষক জনাব জাহিদুল হক এর তত্তাবধায়নে শিক্ষার্থী আশফিকুর রহমানের ‘ইলিউশন’ সিরিজের একটি কাজ। বাকিটা আমার বলার ইচ্ছা হচ্ছে না। কেবল বলব প্রাক্তন সংবাদপত্রের কর্মী হিসাবে সত্যিই অবাক হলাম!! এই অপেশাদারিত্ব কি ভাবে সম্ভব হলো একটা প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিকের সম্পাদনায়!! শিল্পকর্মটির সাথে নাটকীয় ভাবে ছবি তুলছেন জনাব মঈনুল আবেদিন (শিল্পসংগ্রাহক, স্থপতিবিদ ও শিল্পগুরু জয়নুল আবেদিন এর পুত্র) এবং পরের ছবিতে চারুকলা বিভাগের শিক্ষক রেজাউল সাদাত ও জাহিদুল হক এর সাথে শিক্ষার্থী আশফিকুর রহমান ও জনাব মঈনুল আবেদিন।”

স্থাপত্যকর্মটির নির্মাতা আশফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু ঘটে। যার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আমাদের কাছে থাকে না। যার কিছুটা রহস্যে ঘেরা, বিভ্রান্তিমূলক, কিন্তু দৃঢ় সত্যের মতো উপস্থিতি। সব মিলিয়ে একটা বিভ্রম জাগানো পরিস্থিতি, যা আমরা দেখি বা বুঝি, শুনি ও টের পাই, এইসব দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের পূর্ব-ধারণা, জ্ঞান ও পারিপার্শ্বিকতা দিয়ে প্রভাবিত হয়। ইলিউশন হচ্ছে মানুষের মনের এমন এক বিভ্রম, যা মূলত ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে বিবেচিত। আমি এই শিল্পকর্মটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছি, যা মানুষের দেখার স্বাভাবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে!”

মূলত, ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ কলেজ ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর একটি নতুন ভবন হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির বাকি ভবনগুলোর বয়স প্রায় দেড় শত বছর। কিছু কিছু ভবনে ফাটলও রয়েছে। 

অন্যদিকে, প্রতি বছরের মতো এবছরও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শণী। ঐ প্রদর্শনীতেই ব্যতিক্রমধর্মী একটি ভাস্কর্য প্রদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির চারুকলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশফিকুর রহমান। এই ভাস্কর্যের ছবিটিকেই জবির পুরোনো ভবনগুলোর ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে সংবাদ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের পিলারে ফাটলের ছবি দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর।

উল্লেখ্য, ভুল ছবি ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে যুগান্তর তাদের ওয়েবসাটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ছবিটি সরিয়ে নিয়েছে। তবে এই সংশোধনীর বিষয়ে যুগান্তরের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তারা একই বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে এবং উক্ত সম্পাদকীয়তে অন্য একটি ছবি ব্যবহার করে।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে ভুল ছবি ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো শনাক্ত করে রিউমার স্ক্যানার টিম পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, জবি শিক্ষার্থী আশফিকুর রহমানের তৈরি ভাস্কর্যের ছবিকে জবির নতুন একাডেমিক ভবনের পিলার ফাটলের ছবি দাবি করে দৈনিক যুগান্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img