সম্প্রতি “হিন্দুত্ববাদী শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির বরখাস্ত করার আহবান জানাই” শীর্ষক শিরোনামে একটি বইয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া বইয়ের ছবিটি বাংলাদেশের মূলধারার কোনো শিক্ষাব্যবস্থার নয় বরং এটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরিচালিত জাগ্রত ছাত্র সমাজের উদ্যোগে প্রকাশিত একটি শিশুপাঠমূলক বইয়ের ছবি।
কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, Iskcon News-ইসকন সংবাদ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর “গুরুকুল শিশুপাঠ বই। নার্সারী ও ক্লাস ওয়ান এর শিশুদের জন্য। ইসকন ধর্মনগর। হরে কৃষ্ণ।” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গুগল ম্যাপে অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, ইসকন ধর্মনগর একটি মন্দির। যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পদ্মনগরে অবস্থিত।

পরবর্তীতে Kripambudhi Krishna Das নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৫ জুলাই “Book Review।। গ্রন্থ রিভিউ (গুরুকুল শিশুপাঠ)” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, গুরুকুল শিশুপাঠ বইটি ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে বইটি প্রকাশ করে জাগ্রত ছাত্রসমাজ (বিদ্যালয় প্রচার বিভাগ), স্বামীবাগ আশ্রম, স্বামীবাগ, ঢাকা। বইটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর প্রতিষ্ঠাতা অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
অন্যদিকে গৌতম সমাদ্দার গৌর আর্য্য নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০২০ সালের পহেলা অক্টোবর “গুরুকুল শিশুপাঠ গ্রন্থের জন্য জে সব মহান ব্যাক্তি দয়, চাহিদা প্রকাশ কোরেছেন আশা করছি ১৫ দিনের মধ্য দেশের সব প্রান্তে পৌছে দিতে পারবো। শুধুমাত্র বৈদিক বিদ্যালয় বা শ্রী গীতা ইস্কুল স্থ্যাপনের জন্য চাহিদা প্রকাশ কোলে বাধিত থাকবো। জয় শ্রীরাম।।” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

এই পোস্ট থেকে জানা যায়, গুরুকুল শিশুপাঠ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। বইটির সম্পাদনা করেন শ্রী গৌতম সমাদ্দার (গৌর)৷ বইটি বিক্রয়ের কোনো উদ্দেশ্য নেই এবং এটি সকল সনাতন হিন্দু ধর্ম্বালম্বীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই ছাপা, বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির বাংলা বই ও প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের সঙ্গে আলোচিত বইটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।


পাশাপাশি প্রাক প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের তালিকায় থাকা স্বরবর্ণ চার্ট ও ব্যাঞ্জন চার্টের সঙ্গেও এ বইটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।


এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমেও ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে গত ২৩ জুন বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নালে নতুন বছরের ইসলাম শিক্ষার বই প্রদর্শন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের যে নতুন শিক্ষাক্রম, সেই শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকে ধর্মশিক্ষা যেমন আছে, তেমনি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে দশটি বিষয় আছে সেখানেও ধর্ম শিক্ষা আছে। এমন কি আমাদের যে চারটি বড় ধর্ম আছে, ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এই চারটি ধর্মের জন্যই আলাদা আলাদা বই আছে।
মূলত, গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টি’র সংসদ সদস্য জনাব ফখরুল ইমাম পাঠ্যসূচিতে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত তথ্য বাদ দিয়ে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করে পাঠ্যসূচীতে হিন্দুত্ববাদ আনা হয়েছে অভিযোগ তুলে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শিশুদের বর্ণলিপি বইয়ে হিন্দুত্ববাদ যোগ করার দাবিতে কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ইসকনের লেখা গুরুকুল শিশুপাঠ নামের বইয়ের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, সাংসদ ফখরুল ইমাম গত ২ জুলাই সংসদে দেওয়া তার বক্তব্যকে প্রত্যাহারের জন্য সংসদের স্পীকার বরাবর আবেদন করেন। সেখানে তিনি বলেন, “গত ৩০ জুন-২০২২ সালে অধিবেশনে ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় আমার একটি বক্তব্যে একটি দৈনিক পত্রিকার (ইনকেলাব ডিজিটাল সংস্করনের) কিছু উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করি। ডিজিটাল সংস্করনের পত্রিকার প্রকাশিত তারিখ ছিল বর্তমান তারিখ কিন্তু যে রিপোর্টটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি তা ছিলো ২০১৬ (১৯ এপ্রিল ২০১৬) সালের যা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। পরে বর্তমানে আমি জানতে পারি যে আমার উপস্তাপিত তথ্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে আর সঠিক নয়। তারিখ বিভ্রাটের এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্তিতির জন্য আমি দুঃখিত।” ফখরুল ইমামের সংসদে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
উল্লেখ্য, এর আগেও শিশুদের হিন্দুত্ববাদ শেখানো হচ্ছে এমন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুরুকুলের এই বইটির ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল।
সুতরাং, বাংলাদেশের মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের বর্ণলিপি বইয়ে হিন্দুত্ববাদ যোগ করার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Facebook_Iskcon News-ইসকন সংবাদ: Iskcon News-ইসকন সংবাদ Post
Book Review: গুরুকুল শিশুপাঠ: https://youtu.be/pNFOFb13_fk
গৌতম সমাদ্দার গৌর আর্য্য Facebook Post: https://www.facebook.com/100044078622496/posts/pfbid084x1d6mgrNt3bYg3qLbnuoa9797VwT87w7RxBCTLYtsw5EaxZYYS4mvUJL7ZfQRel/
NCTB: প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির বাংলা বই
NCTB: প্রথম শ্রেণির বাংলা বই
NCTB: ব্যঞ্জন চার্ট
NCTB: স্বরবর্ণ চার্ট
Ekattor TV: Ekattor Journal