ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়ে প্রচারিত পোস্টারটি ভুয়া

সম্প্রতি “প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরিয়া এত বড় একখানা প্রকান্ড ব্রিজ ব্রিটিশরাজ ব্যতীত আর কোন প্রকারে সম্ভবপর হইতো? উন্নয়নের স্বার্থে আমাদিগকে অবশ্যই ব্রিটিশদের পক্ষে থাকিতে হইবে! বাংলার স্বাধীন নবাবগণ অতীতে কি উন্নয়ন করিয়াছেন তাহাও আমরা দেখিয়াছি। তাই ব্রিটিশ শাসনের কোন বিকল্প নাই। একই সাথে আমরা “অধিক উন্নয়ন সীমিত স্বাধীনতা”য় বিশ্বাসী।” শীর্ষক শিরোনামে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এর ছবি সম্বলিত একটি পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে৷ 

হার্ডিঞ্জ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ছবি দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টারটি বাস্তবিক নয় বরং এই পোস্টারটি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে ২০২০ তৈরি করেছিলেন।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Ashraf Nipu নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বরে “এত বড় একখানা প্রকান্ড ব্রিজ ব্রিটিশরাজ ব্যতীত কোন প্রকারে সম্ভবপর হইতো? উন্নয়নের স্বার্থে আমাদিগকে অবশ্যই ব্রিটিশদের পক্ষে থাকিতে হইবে! বাংলার স্বাধীন নবাবগণ অতীতে কি উন্নয়ন করিয়াছেন তাহাও আমরা দেখিয়াছি। তাই ব্রিটিশ শাসনের কোন বিকল্প নাই। একই সাথে আমরা “অধিক উন্নয়ন সীমিত স্বাধীনতা”য় বিশ্বাসী।” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ব্যানারটির নির্মাতা Tashrik Hasan কে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ছবিটি কাল্পনিক। সত্য নয়৷ 

এই পোস্টের সূত্র ধরে পরবর্তীতে Tashrik Hasan এর ফেসবুক আইডিতে একইদিনে প্রচারিত মূল ব্যানারটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

পোস্টটির কমেন্ট বক্সে তিনি জানান, “ফটো কন্টেন্ট এক্সপ্লেইন করাটা একটু উইয়ার্ড। তারপরেও ভেঙে বলছি এই কারণে, বেশ অনেকেই কনফিউজড হয়ে যেতে পারেন। এই পোস্টারটা কিন্তু রিয়েল না, ইমাজিনারি। আইডিয়াটা অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছিল!”

পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম Newsbangla24 এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর “হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়ে ভুয়া পোস্টার ভাইরাল “ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে ছবিটির পোস্টদাতা তাসরিক হাসানকে উদ্ধৃত করে নিউজবাংলা জানায়, তাসরিক হাসান তার কাজের মাধ্যমে স্যাটায়ার করে থাকেন৷ তার কাছে ব্যঙ্গচিত্রের মতোই ফটো কন্টেন্টও এক ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ।

আরো পড়ুনঃ চীনের সংবাদ মাধ্যমে যমুনা সেতুকে পদ্মা সেতু দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা

এছাড়া ছবিটির এক কোনায় ব্যবহৃত “জয় ভিক্টোরিয়া” স্লোগান নিয়ে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদনটিতে ইতিহাস নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে কাজ করা জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ ‘ওয়াক বাংলাদেশ’ এর কো-ফাউন্ডার রাফিদ আল যাহুরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সময় রানি ভিক্টোরিয়ার জয়ধ্বনি করার কোনো কারণ নেই। কারণ এই ব্রিজ বানানোর কাজই শুরু হয় ১৯১০ সালে।

‘যদি কারো নামে জয়তু করার প্রয়োজন হয় সেটা হতে পারত লর্ড হার্ডিঞ্জের, যিনি ১৯১০ সাল থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তার নামেই মূলত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে।’

ছবিটি সম্পর্কে আরও জানতে পোস্টারটির নির্মাতা তাসরিক হাসানের সঙ্গে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই ছবিটি যখন ২০২০ সালে প্রথম প্রচার করেন, তখনই তিনি পোস্টটির কমেন্টবক্সে জানিয়ে দিয়েছিলেন এটি একটি স্যাটায়ার। 

মূলত, স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গ করে ছবিটির নির্মাতা তাসরিক হাসান ২০২০ সালে সর্বপ্রথম ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করেন৷ সে সময় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়লে তিনি তার পোস্টের মতামত অংশে ছবিটির প্রেক্ষাপট জানান। কিন্তু পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৭ জুন তিনি আবারও ছবিটি নিজের আইডিতে প্রচার করেন৷ কিন্তু এবার ছবিটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা না করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়ে প্রচারিত পোস্টারটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এই পোস্টারটির সাথে বাস্তব ইতিহাসের কোনো ভিত্তি নেই৷

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img