হাফেজ তাকরিম তার পুরস্কারের টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের দান করেননি

সম্প্রতি, “বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিম ১ম পুরস্কারের ৭১ লক্ষ টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে উৎসর্গ করলেন” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

Screenshot from Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং, এখানে

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৬তম দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম তার পুরস্কারের ৭১ লক্ষ টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দান করেননি বরং তাকরীমের ওস্তাদ মুরতাজা হাসান মাসুম বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের তাকরীমের প্রথম হওয়ার অর্জনটি উৎসর্গ করেন। এই কথাটিই পরবর্তীতে বিবর্তিত হয়ে পুরস্কারের ৭১ লাখ টাকা উৎসর্গ বা দান করা হয়েছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।

বিভ্রান্তির শুরু যেভাবে

বিভ্রান্তির সূত্রপাত খুঁজতে গিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ‘Kalbela’ এর  ফেসবুকে পেজে এ গত ৭ এপ্রিল “তাকরীমের বিশ্বজয় ‘উপহার’ দিলেন বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের” শীর্ষক  ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ৪ এপ্রিল দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৬তম কুরআন প্রতিযোগিতায় ক্ষুদে হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম বিশ্বসেরা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের সময়ের। 

সেই ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহানুভূতি জানিয়ে হাফেজ তাকরিমের শিক্ষক মুর্তজা হাসান ফয়েজি মাসুম বলেন”ক্ষতির কবলে পড়া ব্যবসায়ীদের মনোব্যথা লাঘবের জন্য তাকরিমের বিশ্বসেরার প্রথম হওয়ার পুরস্কারটি তাদের উপহার দিচ্ছি।” তিনি মূলত তাকরিমের বিশ্বজয়ের ব্যাপারটি অর্থাৎ তার অর্জনটি উপহার বা উৎসর্গের কথা বলেছেন। সেখানে তিনি পুরস্কারের অর্থ দান করার ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।

পরবর্তীতে হাফেজ তাকরিমের শিক্ষক মুর্তজা হাসান ফয়েজি মাসুমের বক্তব্যটি বিবর্তিত হয়ে তাকরিম তার পুরস্কারের অর্থ বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে উৎসর্গ বা দান করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

Shakawat Hossain নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী কালবেলা’র ভিডিওটি পোস্ট(আর্কাইভ) করেন এবং ক্যাপশনে লিখেন,

“বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিম ১ম পুরস্কারের ৭১ লক্ষ টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে উৎসর্গ করলেন বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরীমের দেওয়া উপহারের টাকার সংখ্যা উল্লেখ ছিল না এজন্য ভিডিওটি ভাইরাল হয়নি | কারণ আমরা বাঙালি জাতি সস্তা জিনিস ভাইরাল করতে পছন্দ করি”

Screenshot from Facebook

এছাড়া, Free Motion(আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একই দাবিতে কালবেলার’র ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

Screenshot from Facebook

আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে গণমাধ্যম, হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমের শিক্ষক মুর্তজা হাসান ফয়েজি মাসুমের ফেসবুক পেজে উক্ত দাবিতে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot from Facebook.

উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে কোনো তথ্য না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমের শিক্ষক মুর্তজা হাসান ফয়েজি মাসুমের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

মুর্তজা হাসান ফয়েজি মাসুম রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এ জাতীয় অসত্য তথ্য কে ছড়াচ্ছে জানিনা। কথাটা সম্পূর্ণ অসত্য।”

অর্থাৎ, হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম প্রথম পুরস্কারের ৭১ লক্ষ টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে উৎসর্গ করেননি। 

মূলত, সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৬তম দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে ৭১ লক্ষ টাকা পুরস্কার জিতেন বাংলাদেশি হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম। পুরস্কার গ্রহণ শেষে গত ০৪ এপ্রিল দেশে ফিরেন তাকরিম। বিমানবন্দরে তাকরিমকে স্বাগত জানাতে যাওয়া তাকরিমের শিক্ষক মুর্তজা হাসান ফয়েজি মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষতির কবলে পড়া ব্যবসায়ীদের মনোব্যথা লাঘবের জন্য তাকরিমের বিশ্বসেরার প্রথম হওয়ার পুরস্কারটি তাদের উপহার দিচ্ছি।” অর্থাৎ, তাকরিমের শিক্ষক তাকরিমের পুরস্কার অর্জনের বিষয়টি বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে উৎসর্গ করেন। উক্ত বিষয়টি কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়, তাকরিম তার পুরস্কারের অর্থ বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে উৎসর্গ বা দান করেছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

সুতরাং, বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিম তার প্রথম পুরস্কারের ৭১ লক্ষ টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দান বা উৎসর্গ করলেন শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img