সম্প্রতি “আজকে দুপুরে না ফে_রার দেশে চলে গেলেন রফিকুল ইসলাম মাদানি – আজকের তাজা খবর” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত এরকম ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর তথ্যটি সত্য নয় বরং চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচারিত হচ্ছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, ভিডিওর শুরুতে একটি মৃতদেহ নিয়ে অনেকগুলো মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। এছাড়াও ভিডিওতে সেসময় বলা হয়, “দর্শক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, রফিকুল ইসলামকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে আজকে পুলিশের নির্মম হত্যাচারে মারা গিয়েছে। দেখেন, তার জানাজার জন্যে কত লোক হাজির হয়েছে।”
তবে ভিডিওর ৪৫ সেকেন্ড সময়ে ভিডিওর শুরুতে দেখানো অংশটিকেই মিথ্যা বলা হয় এবং রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর সংবাদটি চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার ভিত্তিহীনভাবে প্রচারিত হচ্ছে তা জানানো হয়।
এছাড়াও ভিডিওর ২ মিনিট অংশ থেকে ভিডিওর বাকি অংশে কয়েকজন ইসলামিক বক্তার বক্তব্যের খন্ডিত অংশ দেখানো হয় যেখানে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে তারা বক্তব্য রাখেন।
অর্থাৎ ভিডিওর প্রথম ৪৫ সেকেন্ড সময়ে রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর খবর প্রচার করা হলেও পরবর্তী অংশে তা মিথ্যা বলে জানানো হয়। এছাড়াও ২ মিনিট থেকে ৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্ত বিভিন্ন
বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে বক্তব্য দিলেও উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
এছাড়াও, উক্ত বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর তথ্যের কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি।
গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে রফিকুল ইসলাম মাদানী সম্পর্কে গত মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ১৭ জানুয়ারি “রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিচার শুরু” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরের বাসন থানায় রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকার্য শুরু করে আদালত।
তবে উক্ত ঘটনার পর রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নিয়ে নতুন কোনো সংবাদ প্রচারিত হয় নি।
মূলত, শিশুবক্তা হিসেবে পরিচিত ইসলামিক বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মামলার বিচারকার্যের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে কোনরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক কথাবার্তা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল আটক করা হয় এবং প্রায় ১০ মাস পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মোট ৭ টি মামলার তিনটিতে তিনি জামিনে আছেন এবং বাকি মামলাগুলো ট্রাইবুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের ঘটনায় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আলোচিত বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধান
- দৈনিক যুগান্তর: রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিচার শুরু