সম্প্রতি “এইমাত্র পাওয়া! এবার শিশু বক্তা মাদানীকে নিয়ে জাতিসংঘ কঠিন বিপদে পড়লেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এরকম ভিডিও দেখুন এখানে।
ভিডিওটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী ইস্যুতে জাতিসংঘের পদক্ষেপ নেয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে ‘নাহিয়ান মিডিয়া’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে “এইমাত্র পাওয়া! এবার শিশু বক্তা মাদানীকে নিয়ে জাতিসংঘ || কঠিন বিপদে পড়লেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামের ভিডিওটি পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওর মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
তথ্যযাচাই
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ইস্যুর খন্ডিত ভিডিও প্রযুক্তির সাহায্যে যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওর শুরুতে একজন উপস্থাপক রফিকুল ইসলাম মাদানীকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পড়া অবস্থায় আদালতে নেয়ার ব্যাপারে বলেন এবং উক্ত ঘটনায় জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।
পরবর্তীতে ভিডিওর ৪৫ সেকেন্ড সময় থেকে মাওলানা সিকান্দর হোসেন আকবরী নামক একজন ইসলামীক বক্তার বক্তব্যের কিছু অংশ দেখানো হয়।
উক্ত বক্তব্যে সিকান্দর হোসেন আকবরী রফিকুল ইসলাম মাদানীর একটি বক্তব্য বিশ্লেষণ করেন এবং নিজের জেলখানায় থাকার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও ভিডিওর ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময় থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, নির্বাচন ইত্যাদি ইস্যুতে জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধির কাছে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এবং প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের প্রতিনিধি জানান, জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।
তবে উক্ত বক্তব্যের কোথাও শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের ইস্যুতে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
পরবর্তীতে, ভিডিওর ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময়ে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। উক্ত বক্তব্যে রুমিন ফারহানা সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগের ব্যাপারে বক্তব্য প্রদান করেন। তবে উক্ত বক্তব্যের কোথাও শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
অধিকতর অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে মাদানীকে গ্রেফতারের ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
মূলত, উক্ত ভিডিওটি মাওলানা সিকান্দর হোসেন আকবরী নামক একজন ইসলামীক বক্তার বক্তব্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে জাতীসংঘের একজন প্রতিনিধির বক্তব্য এবং বিএনপির নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্যের কিছু খন্ডিত অংশ ব্যবহার করে শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়ার দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক কথাবার্তা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল আটক করা হয় এবং প্রায় ১০ মাস পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মোট ৭ টি মামলার তিনটিতে তিনি জামিনে আছেন এবং বাকি মামলাগুলো ট্রাইবুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঘটনায় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর খন্ডিত অংশ প্রযুক্তির সাহায্যে যুক্ত করে শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়ার দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধান।
- বিডিনিউজ ২৪ : আরেক মামলায় মাদানী অভিযুক্ত