সম্প্রতি, ‘জাতিসংঘের নির্দেশ ৩২০০ পুলিশ হত্যার বিচার না হলে সকল উপদেষ্টাদের গ্রেফতার করা হবে বিস্তারিত কমেন্টে’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘ ৩২০০ পুলিশ হত্যার বিচার না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল উপদেষ্টাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষক তথ্যটি সঠিক নয় এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা সমসাময়িককালে বাংলাদেশে ৩২০০ পুলিশ হত্যার মতো ঘটনা ঘটে নি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে ‘amardeesh247’ নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। অপরদিকে আমার দেশের আসল ডোমেইন নাম ভিন্ন। উক্ত ‘amardeesh247’ নামের এই ব্লগস্পটের সাইটে ‘জাতিসংঘের নির্দেশ: ৩২০০ পুলিশ হত্যার বিচার না হলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসসহ সকল উপদেষ্টাকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতির হুঁশিয়ারি’ শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ গত ৬ মে, ২০২৫ প্রকাশ করা হয়েছে।
কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রাণ হারানো ৩২০০ পুলিশ সদস্যের বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ সমস্ত উপদেষ্টাদের বাধ্যতামূলক অব্যাহতির মুখোমুখি হতে হবে এমন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক দপ্তর এক যৌথ বিবৃতির বরাতে বলা হয়, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর সংগঠিত ও পরিকল্পিত হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত না হলে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের ওপর জাতিসংঘের আস্থা থাকবে না। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস এখনো এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য জানান তারা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ইতোমধ্যে তদন্ত তদারকির প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে, উপদেষ্টাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
তবে, জাতিসংঘ এমন কোনো নির্দেশ দিলে কিংবা৩২০০ পুলিশ হত্যার মতো কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হওয়ার কথা। তবে, দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।
২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট পুলিশের সদরদপ্তরের মিডিয়া বিভাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহত ৪৪ পুলিশ নিহতের তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইম এর বরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৩২০৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ফ্রি ডোমেইনের ব্লগসাইট ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ানোর এই পদ্ধতি গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্প্রতি রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বেরিয়ে এসেছে এসব সাইটের পেছনে কারা আছেন, কারাই বা এসব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন এবং কাদের এসব অপতথ্যের শিকার বানানো হচ্ছে। পড়ুন এখানে।
সুতরাং, জাতিসংঘ ৩২০০ পুলিশ হত্যার বিচার না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল উপদেষ্টাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis