জীবিত রাফির ভুয়া বক্তব্যের সাথে গণঅভ্যুত্থানে নিহত মোঃ জাহিদুল ইসলামের ছবি প্রচার

সম্প্রতি, ‘আমার বাবা মারা গেছেন। আপনারা প্লিজ আমার বোনটাকে দেখে রাখবেন এটাই ছিল রাফির শেষ কথা, মৃত্যুর আগমুহূর্তে। এই জুলাই মাসে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি রাফির মতো সেসব মানুষকে, যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য।’ শীর্ষক ক্যাপশনে পতাকায় ঢাকা একটি বালকের ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

দাবি করা হচ্ছে, পতাকায় ঢাকা ব্যক্তিটি রাফি। তিনি কোটা সংস্কার গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিহত হয়েছেন। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে মোড়ানো দেহটি  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফির নয়। বরং, ছবিটি গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পাবনায় নিহত মোঃ জাহিদুল ইসলামের বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া, রাফি মারা যায়নি; তিনি গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়েছিলেন।

বক্তব্য যাচাই 

গত বছরের আগস্ট মাসে একই মন্তব্য রাফির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। যা নিয়ে সেসময়ই সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। মূলত, পাবনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি মারা যায়নি বরং তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং বর্তমানে সুস্থ আছেন। রাফির মা নেই, তবে বাবা বেঁচে আছেন৷ ছোট বোনকে দেখে রাখার বিষয়েও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। 

বর্তমানে প্রচারিত ছবি যাচাই 

সম্প্রতি, একই মন্তব্য রাফির দাবিতে একটি ছবি যুক্ত করে আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো এক তরুণের নিস্তেজ দেহ পরে আছে দাবি করা হচ্ছে, পতাকায় দিয়ে মোড়ানো দেহটি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত কথিত রাফির। 


অনুসন্ধানে ‘S R S Sumon’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ০৭ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত পাঁচটি ছবির মধ্যে থাকা একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে।

উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, পতাকায় ঢাকা ছবিটি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পাবনা জেলার নিহত জাহিদের। 

পরবর্তীতে, এস আর এস সুমনের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সুমন জানান, তিনি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত জাহিদুল ইসলামের চাচাতো ভাই। আলোচিত পোস্টটি দেখালে তিনি জানান, জাহিদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। জাহিদুলের নামে প্রচারিত মন্তব্যটি সঠিক নয় এবং ছবিটি জাহিদুল ইসলামের, রাফির নয়। 

বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য মোঃ জাহিদুল ইসলামের আপন ভাই মোঃ তৌহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ছবিটি জাহিদুল ইসলামের। মন্তব্যটির বিষয়ে বলেন, ‘জাহিদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিহত হন। সুতরাং ওর কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না।’ 

সুতরাং, প্রচারিত ছবিটি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত পাবনার মোঃ জাহিদুল ইসলামের। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের তালিকা ঘেটে দেখা যায়, ৪০ নং শহিদের তালিকায় নাম রয়েছে মোঃ জাহিদুল ইসলামের। 

সুতরাং, প্রচারিত ছবিটি মোঃ জাহিদুল ইসলামের।  জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পাবনায় নিহত জাহিদুলের ছবিকে একই ঘটনায় আহত রাফির ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। এছাড়া রাফির নামে প্রচারিত মন্তব্যটিও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img