সম্প্রতি, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “প্রধানমন্ত্রীসহ ৫ জন পুলিশ ও মন্ত্রীর ভিসায় নিষেধাজ্ঞা ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করলো আমেরিকা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ২ হাজার ৭০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৫ জন পুলিশ ও মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি
এবং দেশটি ভিসা নিষেধাজ্ঞার কোনো তালিকাও প্রকাশ করেনি বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করা হয়না। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন দুইটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবি সম্বলিত উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫ জন পুলিশ ও মন্ত্রীর ওপর আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে আমার বাংলা (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের একটি ভিডিও এবং কালবেলায় প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখানো হয়।
ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই – ০১
আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বার্তা বাজারের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ জানুয়ারি “ভিসা রেস্ট্রিকশন এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত প্রথম ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথোপযুক্ত হয়নি দাবি করে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আশংকা রয়েছে বলে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন।
ভিডিও যাচাই – ০২
ভিডিটিওতে আমরা কালবেলার একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে পাই। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর “বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে আমেরিকা। US Visa Restrictions। Kalbela” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিওটি প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে কালবেলার ওয়েবসাইটে একই দিনে “বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে আমেরিকা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ওইদিন এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে উক্ত বিবৃতিতে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি।
পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
মূলত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “প্রধানমন্ত্রীসহ ৫ জন পুলিশ ও মন্ত্রীর ভিসায় নিষেধাজ্ঞা ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করলো আমেরিকা ” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৫ জন পুলিশ ও মন্ত্রীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি এবং ভিসানীতি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনা। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৫ জন পুলিশ ও মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Barta Bazar : ভিসা রেস্ট্রিকশন এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে
- Kalbela : বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে আমেরিকা। US Visa Restrictions। Kalbela
- Kalbela : বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে আমেরিকা
- Jugantor- যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র
- US Embassy – Website