ভিডিওটি পাকিস্তানে হিন্দু মেয়ে শিশুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করার নয়

সম্প্রতি, “পাকিস্তানে এক হিন্দু কিশোরী শিশুকে ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। শিশুটি চিৎকার দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলে অমানবিক নির্যাতন করে” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি পাকিস্থানে কোনো হিন্দু শিশুকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করার নয় বরং এটি একজন মুসলিম শিশুকে একজন কবিরাজ চিকিৎসকের ভুতুড়ে কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়ার ভিডিও।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে, Duniya News নামের একটি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে ২০২০ সালের ১০ আগস্টে “Fake pir arrested for electrocuting children in Peshawar শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া লোকটির মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Duniya News website

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,

 ‘পেশোয়ার পুলিশ এক ভুয়া পীরকে গ্রেফতার করেছে যে চিকিৎসা দেওয়ার নামে শিশুদের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করছিল। 

এমন ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পেশোয়ার পুলিশ তাকে শনাক্ত করে অচিনি বালা থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, কুদরতুল্লাহর ছেলে ভুয়া পীর মুহাম্মাদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অধিকতর তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

পেশাওয়ার পুলিশের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ৯ আগস্টের একটি টুইট থেকে তার গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়া যায়।

এর পূর্বেও একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এই কবিরাজ চিকিৎসক। প্রতিবেদন এবং টুইট থেকে তার পাওয়া নাম দিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ করার মাধ্যমে মুহাম্মদ উল্লাহ নামের সেই কথিত চিকিৎসকের ১১ লক্ষ ফলোয়ারের ফেসবুক পেজ এবং ৮০ হাজার সাবস্ক্রাইবারের ইউটিউব চ্যানেলের খোঁজ পাওয়া যায়। তার ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেওয়া চিকিৎসার অসংখ্য ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত তার কবিরাজি চিকিৎসা প্রদানের ভিডিওগুলো সে তার অনলাইন প্লাটফর্মে প্রকাশ করে থাকে।

তার এমন চিকিৎসার কয়েকটি ভিডিও দেখুন-

সেখানে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও উক্ত ভিডিওটির সাথে মোহাম্মদ উল্লাহ এর প্রকাশ করা অন্যান্য ভিডিওর সাথে ভিডিও ধারণকালীন পরিবেশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ ভিডিওটি পাকিস্তানের সেই কবিরাজি চিকিৎসক মোহাম্মদ উল্লাহ এর ভুতুড়ে চিকিৎসা দেওয়ার ভিডিও। 

গুজবের সূত্রপাত

ভারতীয় জনপ্রিয় কয়েকজন ব্যক্তির টুইটার অ্যাকাউন্টে ভুয়া দাবির সাথে ভিডিওটি প্রকাশ করার পর দ্রুতই তা ছড়িয়ে হয়ে যায়। ইসকনের মুখপাত্র এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট Radharamn Das তার টুইটার অ্যাকাউন্টেও ভিডিওটি টুইট করেছিলেন। বাংলাদেশে তার টুইটকে উৎস হিসেবে দেখিয়ে উক্ত গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে।

পাকিস্তানে
Screenshot from Radharamn Das Tweet Archive

মূলত, পাকিস্তানের পেশাওয়ার এর এক কবিরাজ চিকিৎসকের ভুতুড়ে চিকিৎসার নামে এক মুসলিম মেয়ে শিশুকে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার ভিডিওকেই পাকিস্তানে এক হিন্দু কিশোরী শিশুকে ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

Also Read: ভিডিওটি কোনো হিন্দু মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের নয়

এছাড়াও, ভারতীয় গণমাধ্যম India Today এবং Alt news ভিডিওটিকে মিথ্যা চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, একজন পাকিস্তানি কবিরাজি চিকিৎসকের এক মুসলিম শিশুকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ভুতুড়ে চিকিৎসা দেওয়ার একটি ভিডিওকে পাকিস্তানে এক হিন্দু কিশোরী শিশুকে ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]

  • Claim Review: পাকিস্তানে এক হিন্দু কিশোরী শিশুকে ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। শিশুটি চিৎকার দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলে অমানবিক নির্যাতন করে
  • Claimed By: Facebook Posts
  • Fact Check: False

[/su_box]

তথ্যসূত্র

  1. Duniya News: https://dunyanews.tv/en/Crime/558428-Fake-pir-arrested-for-electrocuting-children-in-Peshawar
  2. Capital City Police Peshawar:

  3. IndependentUrdu: https://www.independenturdu.com/node/66276/fake-pir-electrocuting-people-exorcism-aneela

আরও পড়ুন

spot_img