সম্প্রতি ‘প্যাগোডা ফুল’ ৪০০ বছরে ১ বার ফোটে, হিমালয়ের তিব্বত অংশে দেখা যায়’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ফুল ভর্তি গাছের ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিমালয়ের তিব্বত অংশে ৪০০ বছরে একবার ফোটা প্যাগোডা ফুল দাবিতে প্রচারিত ছবিটিতে থাকা ফুলটির নাম প্যাগোডা নয় বরং প্যাগোডা ফুলের রং, গঠন এবং আকৃতির সঙ্গে এই ফুলের কোনো মিল নেই। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্যাগোডা ফুল দেখতে কেমন? ফুটে কখন?
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার Florida Museum এ ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ‘Pagoda Flower‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়, প্যাগোডা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum paniculatum। এটির স্থায়ী নিবাস ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
এটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
পাশাপাশি প্যাগোডা ফুলের ফোটার সময় নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ফুলটি প্রতিবছরের গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে।
অর্থাৎ প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সঙ্গে সত্যিকারের প্যাগোডা ফুলের কোনো সামঞ্জস্য নেই এবং প্যাগোডা ফুল ৪০০ বছর পরপর নয় বরং প্রতি বছরই গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে।
প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি কিসের?
প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে ok.ru নামের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর তৈরী করা ‘BEAUTIFUL FAIRY TALES (রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুদিত)’ শীর্ষক একটি অ্যালবাম খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যালবামটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অ্যালবামটিতে চলতি বছরের গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ছবিটিতে বিস্তারিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ‘BEAUTIFUL FAIRY TALES (রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুদিত)’ শীর্ষক অ্যালবামটি ঘেটে দেখা যায়, এই অ্যালবামটি প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরী বিভিন্ন প্রাণী, ফুল, গাছের ছবিতে পূর্ণ।
পাশাপাশি Fotostrana নামের আরেকটি রাশিয়ান ওয়েবসাইটেই গত ৮ এপ্রিল About everything শীর্ষক শিরোনামে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির শিরোনামে এটিকে জাপানের Wisteria নামের একটি গাছ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ছবিটির সূত্রে পরবর্তীতে Wisteria নামের গাছের অনুসন্ধানে ছবিটির সঙ্গে Wisteria গাছের হুবহু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে আরও পড়ুন এখানে। এ পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে ছবিটির সুনিশ্চিতভাবে প্রকৃত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ৪০০ বছর পর প্যাগোডা ফুল ফোটার দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেটি প্যাগোডা ফুলের কোনো ছবি নয়।
কোনো ফুল কি ৪০০ বছর ফুটে?
অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান AAP FactCheck এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে একাধিক বিশেষজ্ঞের বরাতে জানাচ্ছে, হিমালয় বা পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন কোনো ফুলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যেটি ফুটতে ৪০০ বছর সময় লাগে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের Smithsonian Museum of Natural History এর গবেষক লরেন্স ডরকে উদ্ধৃত করে জানায়, তিনি এমন কোনো উদ্ভিদ কল্পনা করতে পারেন না, যাতে প্রতি ৪০০ বছরে ফুল ফোটে। তবে উদ্ভিদের এমন কিছু প্রজাতি আছে, যেগুলো এতদিন বেঁচে থাকতে পারে।
এ নিয়ে AAP FactCheck এর নেওয়া অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মন্তব্য পড়ুন এখানে।
এছাড়া গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে ধীরে ফোটা ফুলের উদ্ভিদ বলিভিয়ার পুয়া রাইমন্ডি। এই গাছের ফুল পুয়া রাইমন্ডির গাছের জীবদ্দশার ৮০-১৫০ বছরের মধ্যে দেখা যায়।
মূলত, সম্প্রতি ৪০০ বছরে একবার ফুটে এমন তথ্য উপস্থাপন করে প্যাগোডা ফুল দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে যে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রকৃত প্যাগোডা ফুলের কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। পাশাপাশি প্যাগোডা ফুল প্রতি বছরই গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে। অপরদিকে প্যাগোডা ফুল দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেই ছবিটিকেও তথ্যসূত্রহীনভাবে ইন্টারনেটে প্রচার হতে দেখা যায়। এছাড়া রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে হিমালয় বা পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন কোনো ফুলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যেটি ফুটতে ৪০০ বছর সময় লাগে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে ভিন্ন আরেকটি ফুলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেটি নিয়েও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে একটি ফুলের ছবি সংগ্রহ করে ৪০০ বছর অন্তর অন্তর ফোটা প্যাগোডা ফুল দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Florida Museum: Pagoda Flower
- almostedenplants: Pagoda Flower Blooming Season
- ok.ru(1): BEAUTIFUL FAIRY TALES
- ok.ru (2): https://m.ok.ru/group/53483423989862/album/923594581350/928379753318
- Fotostrana: About everything
- gardenia.net: White Japanese Wisteria
- AAP FactCheck: No, a Himalayan flower doesn’t bloom every 400 years
- Guinness World Records: Slowest flowering plant