সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”। তার এই মন্তব্যকে অপমানজনক দাবি করে ১৫ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ ওঠে।
এরই প্রেক্ষিতে, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত” শীর্ষক দাবিতে একজন আহত ব্যক্তি হাসপাতালের স্ট্রেচারে শুয়ে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় চবিতে একজন শিক্ষার্থী নিহতের দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি একজন ব্যক্তির। এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগে বেশ কয়েকজন আহত হলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ মারা যায়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা ব্যক্তির ছবিটির সূত্র খুঁজে বের করা হয়। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানের ফেসবুক পেজে গতকাল রাত ৮টা ২৬ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবিসহ আরও তিনটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

মো. রাশেদ তার ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে।”
উক্ত পোস্টে সংযুক্ত বাকি ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে একটি ছবিতে সিকিউরিটি গার্ডের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির গলায় ঝুলানো পরিচয়পত্রের ফিতায় ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল লেখা দেখা যায়।
এছাড়া মো. রাশেদ খানের ফেসবুক পেজে আলোচ্য পোস্টের প্রায় এক ঘণ্টা পূর্বে ৭টা ৩৮ মিনিটে “কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের দেখতে হাসপাতালে” শীর্ষক শিরোনামে একটি লাইভ ভিডিও প্রচারিত হয়। এই ভিডিওতে মো. রাশেদ খানকে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল লেখা একটি ব্যানারের সামনে কথা বলতে দেখা যায়।
গতকাল দিবাগত রাত ১২টা ৩১ মিনিটে মো. রাশেদ খান নিজের ফেসবুক পেজে “কেউ মারা যায়নি। গুজব ছড়াবেন না” শীর্ষক একটি পোস্ট করেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা ব্যক্তির নাম সম্রাট। তার ফেসবুক আইডি থেকে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রাজনীতির সাথে জড়িত।
তার স্ট্রেচারে শুয়ে থাকার ছবি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত দাবিতে ছড়ানোর পরেও তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত দাবিতে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি একজন ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
এর আগে গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় চবি শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ওই প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধিও বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এই আন্দোলনে কোনো শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ফাঁকা গুলি এবং ককটেল হামলার আওয়াজ আমরা পেয়েছি। তবে কেউ আহত বা নিহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। দেশের কোথাও থেকে এমন তথ্য আমরা পাইনি।
মূলত, চলমান কোটা আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ ওঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দাবিতে একজন ব্যক্তির স্ট্রেচারে শুয়ে থাকার ছবি প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সম্রাট নামের একজন ব্যক্তির। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হলেও এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি।
সুতরাং, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় চবিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে দাবিতে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি একজন ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Facebook posts by Md Rashed Khan – 1,2,3
- Facebook post by ইঞ্জিনিয়ার এম এম সম্রাট – 1
- Somoy TV – কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গুজব, সতর্ক থাকার পরামর্শ