কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় চবি শিক্ষার্থী নিহতের গুজব

সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, ”মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”। তার এই মন্তব্যকে অপমানসূচক দাবি করে গেল রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। চবিতে গতরাত এবং আজ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগও উঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে, আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাধিক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, কোটা আন্দোলনে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। 

কোটা সংস্কার

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় চবিতে শিক্ষার্থী নিহতের দাবিটি সঠিক নয় বরং গেল রাত এবং আজ ছাত্রলীগ কর্তৃক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ নিহত হয়নি বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।  

অনুসন্ধানের শুরুতে গতরাতে চবিতে হামলার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয় রিউমর স্ক্যানার। চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক আজাদী জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মাঝরাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ক্যাম্পাসের কাটাপাহাড় রোডে পেছন থেকে ছাত্রলীগ হামলা করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টায় চবি জিরো পয়েন্টে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বিষয়ক মন্তব্যের প্রতিবাদে ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ স্লোগানে বিক্ষোভ শুরু করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। চবি সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, মিছিলের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এবং এতে দুই তিন জন আহত হয়। 

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার জানাচ্ছে, সেই সময় অন্তত চার থেকে পাঁচজনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানার বরাত দিয়ে এই সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী লাঠি নিয়ে হামলা করেন। আন্দোলনরত কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারেন। নারী শিক্ষার্থীদের গালাগাল করেন। এতে প্রায় চার-পাঁচজন আহত হন।

অর্থাৎ গেল রাতের ঘটনায় কেউ নিহত হননি। 

চবির কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আজ সকালে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল যে দুপুর আড়াইটার সময় শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর রেল স্টেশনে সমবেত হবেন। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবহণের প্রধান বাহন শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ছাড়তে পারেনি। ডেইলি স্টার বলছে, শাটল ট্রেনের চাবি ছিনিয়ে নিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি তাদের অফিশিয়াল পেজে একটি লাইভ ভিডিও প্রচার করেছে যেখানে দাবি করা হয়েছে, চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এই হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হওয়ার খবর জেনেছে রিউমর স্ক্যানার। তবে কারো মৃত্যুর খবর আসেনি। চবিতে দায়িত্বরত জাতীয় দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক রেদওয়ান আহমেদও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন যে, গতকাল বা আজ চবিতে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি৷ 

এদিকে কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছিল, চবির কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে গেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে পরবর্তী সময়ে চবি সাংবাদিক সমিতি পেজ থেকে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওতে প্রক্টর অফিস থেকে রাফিকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। 

মূলত, চলমান কোটা আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে, রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গেল রাত এবং আজ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে এক শিক্ষার্থীর নিহতের গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় চবিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img