কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের হামলায় এক শিক্ষার্থী নিহতের গুজব

সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে কোটা সংস্কার বা সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন তীব্র বেগবান হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত আন্দোলনে যোগদান করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এরই প্রেক্ষিতে আজ (১১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “ব্রেকিং নিউজ, পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত ৭ জনের এক জন এই মূহুর্তে মারা গেছে! ঘটনা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ” শীর্ষক দাবি ব্যাপকভাবে প্রচার হতে লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

তাছাড়া, উক্ত একই ঘটনার প্রেক্ষিতে “কুমিল্লায় ছাত্রদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় ২ জন নি’হ’ত।” শীর্ষক দাবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হতে লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি কুমিল্লায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়নি। বরং, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত দাবিগুলোর স্বপক্ষে কোনো বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির স্বপক্ষে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

আলোচিত দাবির পোস্টগুলোতে মৃত্যুর স্থান কুমিল্লা মেডিকেল উল্লেখ থাকায় এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, “পুলিশের হামলায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার খবরটি সঠিক নয়। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ৮ জন ভর্তি হয়েছিল। যার মধ্যে ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “আজকের ঘটনায় কেউ মারা যাননি।”

উক্ত দাবির বিষয়ে কুমিল্লায় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত তৌহিদুল ইসলাম জিসান নামের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সাথেও কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি।

তাছাড়া, আলোচিত দাবির বিষয়ে ফেসবুকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কুমিল্লা জেলা পুলিশ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এর বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব আলোচিত দাবির একটি স্ক্রিনশট নিজেদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে জানায়, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় একজন নিহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।”

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের বরাতে আলোচিত দাবির বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি-কুবিসাস নিজেদের ফেসবুক পেজে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানায়, “ব্রেকিং… | পুলিশের হামলায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার খবরটি সঠিক নয়। | সূত্র: কুমিল্লা মেডিকেলের পরিচালক।”

তাছাড়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবির বিষয়ে ফেসবুক পোস্ট আকারে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কুবি কর্তৃপক্ষ জানায়, ” বিজ্ঞপ্তি | বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে যে, কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ জাতীয় সংবাদ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট নেই। | প্রচারিত সংবাদটি ভিত্তিহীন ও গুজব। এ জাতীয় গুজব রটানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। -কুবি কর্তৃপক্ষ”

কুমিল্লা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বরাতে কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহতের খবরটি সম্পূর্ণ গুজব বলে জানানো হয়।

মূলত, আজ ১১ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরই প্রেক্ষিতে আজ (১১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “ব্রেকিং নিউজ, পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত ৭ জনের এক জন এই মূহুর্তে মারা গেছে! ঘটনা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ” শীর্ষক দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া একটি পোস্টে দুইজন নিহতের দাবিও করা হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে, আজ কুমিল্লায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে কোনো শিক্ষার্থী মারা যাননি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলায় একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img