ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ এর দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ০৫ জানুয়ারি থেকেই ভিডিওটি ফেসবুকে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিওতে জনাব হারুন সদৃশ ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আমার আম্মা শেখ হাসিনা একটি মিথ্যুক। সে নিজেই ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে। আবার বিএনপি ভোট বর্জন করলে অসাংবিধানিক বলে আটক করতে বলে। কি যে বিপদে আছি। ০৭ তারিখ সারাদিন হরতাল পালন করুন। ওইদিন কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।”
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “একসময় সে নিজেই ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছিল। তখন সেটা খুব গণতান্ত্রিক অধিকার মনে হয়েছিল তার। আর এখন একই অধিকারের কথা বিরোধীরা বললে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে আটক করতে বলে। তার এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭ তারিখের ভুয়া নির্বাচন তীব্রভাবে বর্জন করুন। দেশ বাঁচাতে এর বিকল্প নেই।”
উক্ত ভিডিও সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার বিষয়ে ডিবি প্রধান হারুন কোনো মন্তব্য করেননি এবং এই ভিডিওটিও তার নয় বরং হারুনের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ছবি সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে হারুন অর রশিদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের প্রোফাইল পিকচারে একটি ছবির সন্ধান পাই যার সাথে ভিডিওতে দেখানো হারুনের পোশাক এবং আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর হুবহু মিল পরিলক্ষিত হয়।
আমরা জনাব হারুনের পেজটির সাম্প্রতিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। তার পেজ থেকে প্রায় প্রতিদিনই দিনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিষয়ে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তার ভিডিওগুলোর সাথে এই ভিডিওতে বলা তার মন্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি। এমনকি সাম্প্রতিক ভিডিওগুলোতেও তাকে এই পোশাকে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে বিভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যমে আলোচিত এই মন্তব্যটির বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ হয়েছে কিনা জানার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু কোনো গণমাধ্যমেই উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ মেলেনি।
অর্থাৎ, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ শাখার এই কর্মকর্তা ডিপফেকের শিকার হয়েছেন।
ডিপফেক হলো বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। ডিপফেক ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারোর সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।
মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ০৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ “০৭ তারিখ সারাদিন হরতাল পালন করুন। কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, হারুনের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ছবি ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনের ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘বিউটি বেগম’ও একইভাবে ডিপফেকের শিকার হয়েছেন৷ এ সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
সুতরাং, একটি ডিপফেক ভিডিওর মাধ্যমে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ “০৭ তারিখ সারাদিন হরতাল পালন করুন। কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- DIG Harunor Rashid: Facebook Profile Picture
- Rumor Scanner’s own analysis