সম্প্রতি, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এই বিষয়টি প্রচার করতে গিয়ে “দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম ১০০% বিদ্যুতের দেশ বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি তথ্য দেশীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিন এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম শতভাগ বিদ্যুৎ এর দেশ শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং বাংলাদেশের পূর্বে দক্ষিন এশিয়ায় ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
‘দক্ষিণ এশিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতায়নে বাংলাদেশ প্রথম’ শীর্ষক দাবিটি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার উক্ত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কাজ শুরু করে এবং পরবর্তীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গতকাল ২১ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ১০০ ভাগ বিদ্যুতের দেশ বাংলাদেশ।”
পরবর্তীতে, একই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হতে প্রচারিত পোস্টে বাংলাদেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম শতভাগ বিদ্যুতের দেশ উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ হতে গতকাল ২১ মার্চ দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের তথ্য নিয়ে ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম ১০০% বিদ্যুতের দেশ বাংলাদেশ”

প্রথম আলো ছাড়াও দেশীয় অসংখ্য মূলধারার গণমাধ্যম প্রতিদিনের সংবাদ, ডেইলি বাংলাদেশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, আমাদের সময়.কম, এনটিভি, সময় টিভি, নিউজ২৪, বৈশাখী টিভি, সময়ের আলো, বাংলা ট্রিবিউন, শেয়ার বিজ, সমকাল, দেশ টিভি, ইনকিলাব, বাংলা ভিশন, একাত্তর টিভি, সারা বাংলা, আরটিভি, এবি নিউজ২৪, ঢাকা প্রকাশ ও প্রতিদিনের সংবাদ সহ অনেক ভূইফোঁড় পোর্টালে একই দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়।
তাছাড়াও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দক্ষিন এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম শতভাগ বিদ্যুতের দেশ শীর্ষক দাবিটি নিয়ে অসংখ্য পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।



অনুসন্ধানের মাধ্যমে রিউমর স্ক্যানার টিম বিশ্ব ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর শতকরা বিদ্যুতায়নের তালিকা খুঁজে পায় এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা তথ্য যুক্ত সে তালিকায় দেখা যায় ২০১৮ সালে ভুটান, মালদ্বীপ এবং ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কা শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।

পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করার মাধ্যমে, Daily Bhutan নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৮ মার্চে “Bhutan Has Achieved 100% Electricity Access – Here’s How” শীর্ষক শিরোনামে ভুটানের শতভাগ বিদ্যুৎ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া, শ্রীলঙ্কার একটি সরকারি ওয়েবসাইটে তাদের শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয় নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সেসময়ে তারাও নিজেদের দক্ষিন এশিয়ায় একমাত্র শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছিলো। যদিও প্রকৃতপক্ষে তাদের পূর্বেই ভুটান ও মালদ্বীপ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
এছাড়াও দেশীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর এর অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ১৯ আগস্টে ‘বিদ্যুতের আলোয় ৯৯.৯৯% মানুষ‘ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি পাওয়া যায়।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও পাহাড়বেষ্টিত ভুটানে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে ২০১৯ সালে।

Also Read: এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার মান সর্বনিম্ন হওয়ার দাবিটি মিথ্যা
অর্থাৎ, দক্ষিন এশিয়ায় বাংলাদেশের পূর্বে আরো তিনটি দেশ (ভুটান,মালদ্বীপ,শ্রীলঙ্কা) শতভাগ বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
সুতরাং, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতের দেশ’ শীর্ষক সরকারি ঘোষণার বিষয়টি সত্য হলেও ‘দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম ১০০% বিদ্যুতের দেশ বাংলাদেশ’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত দাবিটি মিথ্যা।
হালনাগাদ
উল্লিখিত প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরবর্তী সময়ে ইনকিলাব এবং বাংলাভিশনে একই ভুল দাবিতে সংবাদ প্রচার করলে, উক্ত সংবাদগুলো এই প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয়।