গতকাল (২৩ আগস্ট) পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। এই সফলকে কেন্দ্র করে সাভার ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ চলছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সাভার ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং প্রচারিত ভিডিওটি সাভারেরই নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা ইসিবি চত্ত্বর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল পুলিশ ও আনসার কর্তৃক ছত্রভঙ্গ করার ভিডিও।
অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ২৯ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে পুরো ভিডিওর কোনো অংশে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে, একটি অংশে ‘অনলাইন সিটি সড়ক, ইসিবি চত্ত্বর, মাটিকাটা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট’ লিখা যুক্ত একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়।
Screenshot: Protidiner Bangladesh YouTube Channel
পরবর্তীতে, গুগল ম্যাপে বিশ্লেষণে উক্ত স্থানটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। যা সাভার ক্যান্টনমেন্ট থেকে অন্তত ২৩ কিলোমিটার দূরে।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল পুলিশ ও আনসার সদস্য কর্তৃক ছত্রভঙ্গ করার দৃশ্যকে সম্প্রতি সাভার ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে গত ২৩ আগস্ট দুপুরে ঢাকায় এসেছেন। এরই প্রেক্ষিতে, “পাকিস্তানী উপ-প্রধানমন্ত্রী কে শুভেচ্ছা জানতে যাচ্ছে জিন্নার রেখে যাওয়া কিছু বাঙালি জা’র’জ সন্তান” ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি বরং, গত ১৬ জুন শাহবাগ ও কাটাবন এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ১৬ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মিছিলের ভিডিও।
উল্লিখিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র কি ওয়ার্ড সার্চ করে একই দিনে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ওয়েবসাইটে “নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেপ্তার ১” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৬ জুন (সোমবার) ভোরে রাজধানীর শাহবাগ ও কাটাবন মোড় মধ্যবর্তী এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। মিছিল চলাকালে শাহবাগ সড়ক সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেটের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সেসময় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ (১,২,৩) প্রচার করা হয়।
সুতরাং, গত জুন মাসে রাজধানীর শাহবাগ ও কাটাবন এলাকায় ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের ভিডিওকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশে মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘অবশেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত! পিআর পদ্ধতিতে ভোট ঐক্যমত না হলে গণভোট’ শিরোনামে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবিযুক্ত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘পিআর পদ্ধতিতে ভোট ঐক্যমত না হলে গণভোট’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেননি। প্রকৃতপক্ষে, কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বানোয়াট এই উক্তিটি তার নামে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, পিআর পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে এমন কোনো তথ্যও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে তাতে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে কোনো গণমাধ্যমের লোগো বা নামেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সাধারণত কোনো গণমাধ্যম কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করে থাকলে, প্রচারিত ফটোকার্ডে গণমাধ্যমটির নাম বা লোগোর সংযুক্তি থাকে৷
প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত তথ্যের সমর্থনে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সাক্ষাতের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের সাথে তার কথা বলার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, প্রধান উপদেষ্টার সাথে তার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন আলাপ হলেও নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তার সাথে কোনো আলাপ হয়নি। এছাড়াও আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে তাকে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন বিষয়ে গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট রাজশাহীর লোক প্রশাসন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাজশাহীর অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, “আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। যেহেতু এটা সংবিধানে নেই সেহেতু এর বাইরে তারা যেতে পারবেন না। এ নিয়ে রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক চললেও নির্বাচন কমিশনের এগুলো কাজ নয়।” তবে আইন পরিবর্তন হলে এই পদ্ধতিতে ভোট হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
অর্থাৎ, আসন্ন নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি অনুরণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এ-সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি৷
সুতরাং, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে প্রচারিত তথ্যটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, হোটেল রুমে এক নারীর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হোটেল রুমে উপদেষ্টা আসিফ ও এক নারীর ভাইরাল ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, উপদেষ্টা আসিফ এবং রিদিতা নামের এক নারীর পৃথক দুইটি ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার কয়েকটি এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, ছবির হোটেল রুমটি অস্বাভাবিকভাবে নিখুঁত দেখা যায়। মানুষের মুখে সাধারণত যে প্রাকৃতিক দাগ, ব্রণ, ছিদ্র বা সূক্ষ্ম ভাঁজ থাকে, তা ছবিতে অনুপস্থিত। এছাড়াও, মেয়েটির গালে হাত রাখার ভঙ্গিটিও অস্বাভাবিক মনে হয়, কারণ সাধারণত এ ধরনের ভঙ্গি ধরে রাখতে কোনো বস্তুতে ভর দেওয়া প্রয়োজন হয়।
পরবর্তীতে, গুগলে আসিফ মাহমুদের নাম সার্চ করেই একটি ছবি পাওয়া যায়, যেখানে তার পরা পাঞ্জাবির রং ও ডিজাইনের সঙ্গে আলোচিত ছবির পোশাকের মিল পাওয়া যায়। যাচাই করে দেখা গেছে, ছবিটি গত বছরের ১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে তোলা।
কথিত ছবিতে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে থাকা নারীর পরিচয় রিদনির ইসলাম রিদিতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার হিসেবে গতকাল (২৩ আগস্ট) আপলোড করা একটি ছবির সঙ্গে আলোচিত ছবিতে মিল দেখা যায়। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই ছবিতেই তিনি একই ভঙ্গিতে রয়েছেন। এছাড়া, হাতে থাকা মেহেদি, কানের দুল, চুল বাঁধার ধরন এবং হাতে থাকা ফুলেও মিল লক্ষ্য করা যায়। তবে কিছু অসংগতি ধরা পড়েছে। যেমন, প্রোফাইল ছবিতে হাতে থাকা ফুল ও কানের দুল স্পষ্ট থাকলেও আলোচিত ছবিতে তা অসম্পূর্ণ ও বিকৃতভাবে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের অসঙ্গতি সাধারণত এআই-নির্মিত ছবিতে লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner.
অর্থাৎ, পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট যে, আসিফ মাহমুদ এবং রিদিতা নামের নারীর পৃথক দুইটি ছবি ব্যবহার করে প্রযুক্তির সাহায্যে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে ছবিটি এআই শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করা হয়। টুলটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
Screenshot: Hive Moderation.
সুতরাং, হোটেল রুমে উপদেষ্টা আসিফ ও এক নারীর ভাইরাল ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে গত ২৩ আগস্ট দুপুরে ঢাকায় এসেছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট অন্তত রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোলাগুলির শব্দসমেত একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “এই মুহুর্তে সাভার ক্যান্টরমেন্টে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ চলছে, পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরের প্রতিবাদে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এবং রাজাকারের বাচ্চাদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে… ইউনুছ হঠাও বাংলাদেশ বাঁচাও। এগুলো দালাল মিডিয়া প্রচার করবে না।”
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উপরোল্লিখিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে ৩০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সেনাবাহিনীতে কোনো বিদ্রোহ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি অন্তত গত সেপ্টেম্বর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গোলাগুলির দৃশ্য দাবিতে অনলাইনে বিদ্যমান রয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে ‘কামরুল হাসান’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “আবারোও অশান্ত পাহাড় | খাগড়াছড়িতে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, দোকান-বসতবাড়িতে আগুন। গভীর রাতে খাগড়াছড়ির দিঘিনালায় চারিদিকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাহাড়ে আবারও অধিকসংখ্যক সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হউক।। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে শান্তি ফিরে আসুক পাহাড়ে।। ভালো থাকুক পার্বত্য জেলার শান্তিপ্রিয় সকল মানুষগুলো।।”
এছাড়াও, অনুসন্ধানে ভিডিওটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘটনাদাবিতেপোস্ট হতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, “খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪) রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।”
তবে, ভিডিওটির উৎস বা প্রেক্ষাপটের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের বা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
সুতরাং, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহের দৃশ্য দাবিতে অন্তত ১১ মাস পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গাছের সঙ্গে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহের একটি ভিডিও ‘নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে দুর্বৃত্তরা’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। পোস্টগুলোতে ঝুলন্ত মরদেহের ব্যক্তিকে আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে দাবি করা হয়।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পেজ থেকেও একই পোস্টটি শেয়ার করা হয়। তার পেজ থেকে শেয়ার করা পোস্টটি দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত মরদেহের ভিডিওটি আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আন্ডারচর ইউনিয়নে মো. মাহফুজুর রহমান মাহফুজ নামের একজন ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হলেও তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে কিংবা আলোচিত ভিডিওটির সাথে সম্পর্কিত নন। প্রকৃতপক্ষে, নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের সাব্বির নামের এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Saidul Islam Akash নামের এক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২০ আগস্ট করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়ের পেজে শেয়ার করা পোস্টটির একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে দাবি করেন, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মরদেহটি নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতির নয়। বরং, এটি নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার চরদিঘলদী ইউনিয়নের সাব্বির নামের একজন ছেলের মরদেহ। পারিবারিক অশান্তির কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলেও পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়। উক্ত পোস্টের মন্তব্যের ঘর পর্যালোচনা করেও একাধিক ব্যক্তিকে এটি চরদিঘলদী ইউনিয়নের ঘটনা বলে ইঙ্গিত দিতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে সাইদুল ইসলাম আকাশ নামের ওই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে মৃত সাব্বিরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং মরদেহের স্পষ্ট ছবি ও ভিডিওসহ আরও কিছু ছবি সরবরাহ করেন। সরবরাহকৃত Arnob Sabbir নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে উক্ত ব্যক্তির কয়েকটি ছবির সন্ধান পাওয়া যায়।
আলোচিত লাশের ভিডিওটির সাথে সাব্বির নামের ওই ছেলের চেহারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়। দুজনের চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ব্যক্তির চুল ও দাড়ির সাদৃশ্যও লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, আলোচিত ভিডিওর ঝুলন্ত মরদেহটি সাব্বির নামের এই ব্যক্তিরই।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে গত ৯ আগস্ট MD Shukkur Ali নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডিতে করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটির ১৫ মিনিট পরেই করা আরেকটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি সবাইকে সাব্বিরের মরদেহের ভিডিও যারা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তাদের সেটি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়াও সাব্বিরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনার স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সাথে তার ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি পোস্টটিতে করা তার মন্তব্য এবং সাইদুল ইসলামের সরবরাহকৃত ছবি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
সাব্বিরের মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পাওয়া না গেলেও সাইদুল ইসলাম আকাশ এবং মোঃ শুকুর আলীর সাথে যোগাযোগ করে ভিডিওর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, এটি সাব্বিরের মরদেহের ভিডিও।
পরবর্তীতে নোয়াখালী আন্ডারচর ইউনিয়নে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ঝুলন্ত মরহেদ উদ্ধার করা হয়েছে কিনা জানতে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভির ওয়েবসাইটে গত ১৭ আগস্ট রাজমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় হত্যা শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নে কাজির চর গ্রামে নিজ বাড়ির রান্না ঘরের পেছন থেকে মো. মাহফুজ নামের এক রাজমিস্ত্রির মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন দুপুরে পুলিশ তাদের ঘর থেকে মাহফুজের মরদেহটি উদ্ধার করে।
প্রতিবেদনটিতে নিহতের চাচার বরাতে বলা হয়, রাতে মাহফুজ বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার মা হাজেরা বেগম বাড়ির উত্তর দিকে রান্না ঘরের পিছনে পেয়ারা গাছের সঙ্গে মাহফুজকে বাঁধা অবস্থায় দেখে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে মৃত অবস্থা দেখে পুলিশে খবর দেয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
অর্থাৎ, মাহফুজ নামের ওই ব্যক্তির মরদেহটি ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়নি। এছাড়াও তার মরদেহ রাতে পাওয়া যায়। যা পরদিন দুপুরে পুলিশ এসে বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন। অপরদিকে আলোচিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ভিডিওটি দিনের আলোয় ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মাহফুজের ছবির সাথে আলোচিত মরদেহের চেহারার সাদৃশ্য পাওয়া যায়না। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আলোচিত ঝুলন্ত মরদেহের ভিডিওটি নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়নের মাহফুজের নয়।
এছাড়াও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন পোস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় মাহফুজ ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও মো. মাহফুজকে নিজেদের কর্মী উল্লেখ করে দেয়া একটি শোক বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
সুতরাং, নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার দাবিটি মিথ্যা।
২৪ আগস্ট, ২০২৫ : ভিডিওটি গত ১৬ আগস্ট থেকে বিভিন্ন পোস্টে আন্ডারচর ইউনিয়নের মো. মাহফুজের মরদেহ হিসেবে পোস্ট হতে দেখা যায়। অন্য কোনো দাবিসহ ভিডিওর আর কোনো পোস্ট সেসময় না পাওয়ায় এবং ছাত্রলীগ সভাপতি দাবির পোস্টগুলোতেও আন্ডারচর ইউনিয়নের নাম উল্লেখ থাকায় প্রাথমিকভাবে এটিকে মাহফুজের মরদেহ ধরে প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভিডিওটি নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের সাব্বির নামের এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহের বলে জানা যায়। তাই সেই অনুযায়ী প্রতিবেদনটি সংশোধন করা হলো।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জনকণ্ঠের ফাটোকার্ডে থাকা ছবিটি কর্ণফুলী টানেলের নয় বরং বান্দরবান বাস টার্মিনাল টানেলের।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফটোকার্ডে থাকা জনকণ্ঠের লোগোর সূত্র ধরে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজে ২০২৫ সালের ১৯ আগস্ট প্রচারিত “তিন বছর না যেতেই ঝরনার মত পানি পড়ছে দৃষ্টিনন্দন টানেলে” শীর্ষক ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ডের মন্তব্য ঘরে পাওয়া একই শিরোনামের প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত বান্দরবানের বর্তমান বাসস্ট্যান্ড থেকে হাফেজঘোনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল যাওয়ার পথে নির্মিত ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য টানেলটি তিন বছর না যেতেই বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ঝরনার মত পানি বের হচ্ছে। এ টানেলটিতে বিগত সরকারের আমলে উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যোগসাজশে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অর্থাৎ, কর্ণফুলী টানেল নয়, জনকণ্ঠের সংবাদে উক্ত ছবিটি বান্দরবান বাস টার্মিনাল টানেলের বলা হয়েছে।
সুতরাং, জনকণ্ঠের ফটোকার্ডে থাকা বান্দরবান বাস টার্মিনাল টানেলে পানি চুইয়ে পড়ার ছবিকে কর্ণফুলী টানেলের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাতকড়া পরিহিত ব্যক্তির কালো বস্তু থেকে মৃত কুকুর বের করার ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণ ভিয়েতনামের কা মাউ প্রদেশের পুলিশ গিয়া রাই ওয়ার্ড থেকে ১২টি মৃত কুকুর এবং পোষা প্রাণী চুরিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু সরঞ্জাম সহ ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা।
ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের আগে দক্ষিণ ভিয়েতনামে কুকুর মাংস খাওয়া একটি প্রধান সংস্কৃতি ছিল না। এটি মূলত উত্তর ভিয়েতনাম থেকে আসা কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচলিত ছিল (যেমন ১৯৫৪ সালের জেনেভা চুক্তির পর), এবং সাধারণত এটি নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত অভ্যাস ছিল। ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের আমলে শহুরে সংস্কৃতি পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। ফলে, অনেক জায়গায় কুকুর মাংস খাওয়াকে ‘অসভ্য’ বা ‘অমার্জিত’ কাজ হিসেবে দেখা হতো।’ ( অনূদিত)
অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে লোকেশন হিসেবে ভিয়েতনাম দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, গত ৭ আগস্ট ‘Vũ Việt Vương’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশন বর্ণনায় বলা হয়, ‘পুরোনো সাইগনে এই ধরনের কোনো কার্যক্রম ছিল না। উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি যখন থেকে শহরের নাম পরিবর্তন করে ‘হো চি মিন সিটি’ রাখে, তখন থেকেই এই ধরনের ঘটনা ব্যাপক আকারে এখানে প্রবেশ করে।’ ( অনূদিত)
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভিয়েতনামের সবাদ মাধ্যম ‘Báo Tuổi Trẻ’ -এর ইংরেজি সংস্করণের ওয়েবসাইটে গত ৫ আগস্ট ‘2 arrested in southern Vietnam for organized dog theft, 12 dogs found dead’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুজে পাওযা যায়। প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ঘটনার সাদৃশ্যতা দেখা যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, দক্ষিণ ভিয়েতনামের কা মাউ প্রদেশের পুলিশ গিয়া রাই ওয়ার্ড থেকে কুকুর চুরির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ১২টি মৃত কুকুর এবং পোষা প্রাণী চুরিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু সরঞ্জাম জব্দ করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন লাম হাই ট্রুং (৩৭) এবং কুয়াচ ডাং বিনহ (৪৫), দুজনেই কা মাউ প্রদেশের বাসিন্দা।
ভয়েস অফ ভিয়েতনাম (VOV) -এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, মৃত কুকুর উদ্ধারের এই ঘটানাটি বাংলাদেশের নয়। তাই এর সাথে বাংলাদেশের কোনো রেস্টুরেন্টের কাচ্চি বিরিয়ানি পরিবেশনের সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, দক্ষিণ ভিয়েতনামে মৃত কুকুরসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনার ভিডিও দিয়ে বাংলাদেশে কাচ্চি বিরিয়ানির জন্য কুকুর সংগ্রহের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “দিল্লী নয় পিণ্ডি নয়, চাই কেবল চান্দা। লণ্ডনে বসে বসে এই আমার ধান্দা” শিরোনামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে তারেক রহমানের কথিত কন্ঠে বলতে শোনা যায়, “দিল্লি নয় পিন্ডি নয় চাই কেবল চান্দা, লন্ডনে বসে বসে এই আমার ধান্দা”
একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া উক্ত দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয় চাই কেবল চান্দা, লন্ডনে বসে বসে এই আমার ধান্দা’ শীর্ষক বক্তব্য তারেক রহমান দেননি। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৮ মে রাজধানীর পল্টনে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে তারুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমানের দেওয়া ভাষণের ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ভুয়া অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে BNP Media Cell এর ফেসবুক পেজে গত ০১ জুন ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোন দেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া গেলেও অডিওতে অমিল পাওয়া যায়।
একই ভিডিও অন্যান্য গণমাধ্যমেও (SOMOY TV, GTV) খুঁজে পাওয়া যায়। এসব ভিডিওতেও অডিওর একই অমিলের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
ভিডিওটি বিশ্লেষণে তারেক রহমানকে বলতে শোনা যায়, “দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোন দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।” অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে মূল অডিও বদলে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বক্তব্যে চাঁদাবাজির বিষয়ে অন্য কোথাও এমন মন্তব্য তারেক রহমানকে করতে দেখা যায়নি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই অডিওটি ভুয়া।
এছাড়া, আলোচ্য বিষয়ে দেশিয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৮ মে বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সুতরাং, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয় চাই কেবল চান্দা, লন্ডনে বসে বসে এই আমার ধান্দা’ শীর্ষক বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা দখল, বিচারবহির্ভূত হ’ত্যা ও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণ পেয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে না চললে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আসবে এমন হুশিয়ারী দিয়েছে ভলকার তুর্ক।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা দখল ও বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণ পেয়েছে উল্লেখ করে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে না চললে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আসবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে কোনো ভিডিও বার্তা প্রদান করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দমন-পীড়নের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ভলকার টুর্কের আহ্বান জানানোর ভিডিও বার্তাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন ও বিবরণী থেকে জানা যায়, সেসময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহ সহিংসতার খবরের মধ্যে বিক্ষোভ দমনের তথ্য জরুরিভাবে প্রকাশ করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান ভলকার টুর্ক। সেসময় আনুমানিক ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে উল্লেখ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার এক্স হ্যান্ডেলে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব থেকেই আলোচিত ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে৷
ভলকার টুর্কের উক্ত বার্তার কথা উল্লেখ করে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ইংরেজি সংস্করণের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই ‘Disclose details about crackdown on protests: Volker Türk’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্কের সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তা দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে ভলকার টুর্কের আহ্বানের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।