Home Blog Page 126

বাংলাদেশের ডাকাতির ভিডিও দাবিতে ইন্দোনেশিয়ার ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, রাজধানীসহ সারা দেশে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে, ডাকাতি করতে গিয়ে ফিল্মি স্টাইলে বিল্ডিং টপকানোর সময় গণধোলাইয়ে মৃত্যু দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন লোক একটি বিল্ডিংয়ের বারান্দা থেকে বৈদ্যুতিক তারের দিকে ঝাঁপ দেন এবং পাশের অন্য একটি বিল্ডিংয়ে যাওয়ার আগে তিনি কিছুক্ষণ তারে ঝুলে ছিলেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাকাতি করতে গিয়ে ফিল্মি স্টাইলে বিল্ডিং টপকানোর সময় গণধোলাইয়ে মৃত্যু দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয় বরং, গেল ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কামালি সমুদ্র সৈকত এলাকায় একটি হোটেলের ভবন থেকে বৈদ্যুতিক তারে ঝুলে পড়ার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি থেকে কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার ‘Tribun Tangerang’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল পাওয়া করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ পূর্ব সুলাওয়েসি (সুলত্রা) প্রদেশের বাউবাউ শহরের কামালি সমুদ্র সৈকত এলাকার ঘটনা। 

বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি হোটেলের বারান্দা থেকে শুধু আন্ডারওয়ার পরে লাফ দিয়ে তারের ওপর ঝুলে পড়েছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে ওই ব্যক্তি হোটেলের বারান্দায় কারো তাড়া খেয়ে দৌড়াচ্ছিলেন। এরপর তিনি নিচে থাকা শত শত মানুষের সামনে তারের ওপর লাফ দেন। তারের ওপর লাফ দেওয়ার পর, তিনি স্পাইডারম্যানের মতো অন্য একটি বিল্ডিংয়ে লাফ দেন।

তবে, সেখানে আটকে যাওয়ার পর, তিনি আরও দূরের একটি বিল্ডিংয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং নিচে পড়ে যান।

বাউবাউ পুলিশ প্রধানের জনসংযোগ কর্মকর্তা একেপি আব্দুল রহমত এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ভাইরাল ভিডিওর এই ঘটনার লোকটি সম্ভবত হতাশায় ভুগছিলেন।

এছাড়াও, ইন্দোনেশিয়ান গণমাধ্যম ‘Tribunnews Sultra Official’ এর ইউটিউব চ্যানেলে একই ঘটনার ভিন্ন অ্যাঙ্গেলের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি থেকেও আলোচিত ঘটনাটি সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়। 

এ বিষয়ে একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে ইন্দোনেশিয়ান গণমাধ্যম ডেটিকডটকম। 

সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ার ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ডাকাতি করতে গিয়ে ফিল্মি স্টাইলে বিল্ডিং টপকানোর সময় গণধোলাইয়ে মৃত্যু দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ধর্ষণ ও হত্যা বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতিবাদ দাবিতে টেলিফিল্মের দৃশ্য প্রচার

সম্প্রতি ‘ধর্ষন ও হত্যার বিচার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন!’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে৷ ভিডিওতে ইলিয়াস কাঞ্চনের গলায় একটি কালো ফলকে ‘আমিই কোহিনূরের বাবা কোহিনূর আমার মেয়ে আমি তার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই।’ লিখা দেখা যায় এবং তাকে একটি মশাল ও পানির বোতল হাতে ‘আমার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার চাই, আমার মেয়ের ধর্ষণকারীর বিচার চাই’ বলতে শোনা যায়৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷  

উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷ 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতিবাদ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। বরং, এটি একটি টেলিফিল্মের দৃশ্য, যা বাস্তব দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ০৫ মে ‘I really liked my character’: Ilias Kanchan’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল দেখা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের গলায় ‘আমিই কোহিনূরের বাবা কোহিনূর আমার মেয়ে আমি তার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই।’ লিখা কালো ফলক ও এক হাতে একটি বাঁশের মশাল রয়েছে। ছবিতে থাকা এ সকল বিষয়বস্তু ও পারিপার্শ্বিকতার ভিত্তিতে বলা যায়, উক্ত ছবি ও আলোচিত ভিডিওটি একই ঘটনার চিত্র৷ 

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, উক্ত ছবিটি ওটিটি প্লাটফর্ম বঙ্গ বিডির ‘বেসড অন বুকস’ প্রজেক্টের টেলিফিল্ম ‘মরণোত্তম’ এর একটি দৃশ্যের। টেলিফিল্মটি সে বছর ঈদ-উল-ফিতরে প্রচারিত হয়েছিল৷ 

পরবর্তীতে, বঙ্গ বিডির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ০৩ মে প্রকাশিত পোস্টে আলোচিত ভিডিওর মতো সাজসজ্জায় ইলিয়াস কাঞ্চনের একটি ছবির ক্যাপশন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

Screenshot: Facebook 

এছাড়া, পেজটি থেকে একই বছরের ১১ মে প্রকাশিত একটি ট্রেলারে আলোচিত দৃশ্যটির অনুরূপ দৃশ্য দেখা গিয়েছে৷  

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওচিত্রের দৃশ্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি ‘মরণোত্তম’ নামক টেলিফিল্মের দৃশ্য।

সুতরাং, ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতিবাদ দাবিতে তার অভিনীত একটি টেলিফিল্মের দৃশ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ডা. তাসনিম জারার ইউটিউব ভিডিও থাম্বনেল এডিট করে প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারার ইউটিউব ভিডিও এর থাম্বনেল দাবিতে একটি স্ক্রিনশট প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আপনাদের স্বাস্থ্য আপা | যার যার মোটা করতে ইচ্ছুক আপার সাথে যোগাযোগ করেন”।

অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ইউটিউব ভিডিও এর থাম্বনেলটি ডা. তাসনিম জারার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও এর। উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ইউটিউব ভিডিওটির থাম্বনেলটিতে “লিঙ্গ বড় এবং মোটা করবেন কিভাবে? সমাধান” শীর্ষক লেখা দেখতে পাওয়া যায় এবং ভিডিও এর শিরোনামে দেখা যায়, “লিঙ্গ মোটা বা বড় করবেন কিভাবে? – ডা. তাসনিম জারা (চিকিৎসক, ইংল্যান্ড)”। এছাড়া ভিডিওটি ১১ মাস আগে প্রচার করা হয়েছে বলে দেখা যায়৷

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা. তাসনিম জারার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও এর থাম্বনেলের স্ক্রিনশট দাবিতে প্রচারিত থাম্বনেলটি আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন একটি থাম্বনেল সম্পাদনা করে আলোচিত থাম্বনেলের স্ক্রিনশটটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবিতে ডা. তাসনিম জারার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, ডা. তাসনিম জারার ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি। তবে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রায় ১১ মাস পূর্বে গত ৮ মার্চ ২০২৪ তারিখে ডা. তাসনিম জারার ইউটিউব চ্যানেলে “স্বপ্নদোষ কেন হয়? সমাধান কী? – ডা. তাসনিম জারা, চিকিৎসক, ইংল্যান্ড)” শিরোনামে প্রচারিত একটি ইউটিউব ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ইউটিউব ভিডিওটির থাম্বনেলের টেক্সট হলো: “স্বপ্নদোষ কেন হয়? সমাধান”।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত থাম্বনেলের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত থাম্বনেলটির তুলনা করলে ব্যাকগ্রাউন্ড, রং, তাসনিম জারার ছবির সাদৃশ্য পাওয়া যায় তবে টেক্সট এবং ফন্টের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, প্রচারিত স্ক্রিনশটে ভিডিও এর দৈর্ঘ্য হিসেবে দেখা যায় ২ মিনিট ২ সেকেন্ড যার সাথে উক্ত ভিডিওটির দৈর্ঘ্যতার হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে থাম্বনেলসহ উক্ত ভিডিওটির স্ক্রিনশট নিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তা সম্পাদনা করে আলোচিত থাম্বনেল সম্বলিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, ডা. তাসনিম জারার ভিন্ন একটি ইউটিউব ভিডিও এর থাম্বনেলসহ নেওয়া স্ক্রিনশট ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে “লিঙ্গ বড় এবং মোটা করবেন কিভাবে? সমাধান” শীর্ষক থাম্বনেল সম্বলিত স্ক্রিনশট দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনা মানসিকভাবে অসুস্থ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি জয়, যমুনা টিভির নামে ভুয়া ফটোকার্ড

0

সম্প্রতি, “আমার মা মানসিকভাবে এখন অসুস্থ। তার কলরেকর্ডকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই” শীর্ষক মন্তব্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের দাবিতে যমুনা টিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) । 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘আমার মা মানসিকভাবে এখন অসুস্থ। তার কলরেকর্ডকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই’ যমুনা টিভিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং যমুনা টিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো রয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্রে যমুনা টিভি‘র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, যমুনা টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া উল্লেখ করে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘যমুনা টিভি এমন সংবাদ প্রচার করেনি; গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না’।

পূর্বেও একই দাবিতে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সে সময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

কলেজ শিক্ষার্থীর সাম্প্রতিক ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার দৃশ্য দাবিতে ২০২৪ সালের ভিডিও প্রচার

অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলার নাজুক অবস্থার কারণে গত কয়েকমাস যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার ব্যাপকতা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যার সবথেকে বেশি ভুক্তভুগি হচ্ছে রাজধানীতে বসবাসকারীরা। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, একজন কলেজ ছাত্রের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার দৃশ্য দাবিতে একটি সিসিটিভি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে কলেজ ছাত্রের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এখনকার নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত ভিডিওটি ২০২৪ সালের মে মাসের ঢাকার জিগাতলা এলাকার একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার। 

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২২ মে দিনদুপুরে চাপাতি দেখিয়ে ছিনতাই | Dhaka City | CCTV Footage | News | Prothom Alo শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সিসিটিভি ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, উক্ত ছিনতাইয়ের ঘটনাটি  ২০২৪ সালের মে মাসে রাজধানীর জিগাতলা থেকে ধানমন্ডি যাওয়ার পথে একজন পথচারীর সাথে ঘটে। 

এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ২০ মে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আই-এর সংবাদ বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল Channel i News এ প্রচারিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে উক্ত ভিডিওটির বিবরণীতে এটি সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।

Screenshot: Youtube

অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়ের ছিনতাইয়ের সিসিটিভি ভিডিও দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ভিডিওটি ২০২৪ সালের।

সুতরাং, ২০২৪ সালের মে মাসের ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে কলেজ ছাত্রের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ফেনীর এক ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়েকে বৈছাআ এবং ছাত্রদল নেতাকর্মী কর্তৃক ধর্ষণের তথ্যটি গুজব

0

সম্প্রতি, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদলের মেয়েকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ধর্ষণ করেছে দাবিতে একাধিক ছবিসহ একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদলের মেয়েকে ধর্ষণের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মূলত, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটি মহল তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এবিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে মোশারফ হোসেন বাদলের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি পর্যালোচনা করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পোস্টটিতে তিনি জানান, ফেনীর সমাচার নামের একটি পেজ থেকে একটি মহল তার মেয়েকে জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। উক্ত পেজ থেকে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও তার পোস্টে উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তার পরিবারকে ভুক্তভুগি করার জন্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। উক্ত পোস্টটিতে তাকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলোও ব্যবহার করতে দেখা যায়। 

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে জানতে মোশারফ হোসেন বাদলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এধরনের কোন ঘটনা-ই ঘটেনি। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে চাঁদা দাবি করার বিষয়টিও সত্য নয়।

পরবর্তীতে ফেনী সমাচার নামের পেজে প্রচারিত পোস্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত পোস্টটিতে কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়নি। বরং পোস্টটিতে শেষে উল্লেখ করা হয়, এটি একটি কপি পোস্ট। এছাড়াও পোস্টটিতে ব্যবহৃত হাসপাতালের বিছানার ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন-এর ফেসবুক প্রোফাইলে ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর প্রচারিত একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত পোস্টের ছবিটিতে শুধুমাত্র তার চেহারা অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উভয় ছবির বাকি সবকিছুর হুবহু মিল রয়েছে।

Image Comparison by Rumor Scanner 

সুতরাং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ফেনীর মঙ্গলকান্দির ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদলের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Mosaraf Hossain Badal Facebook Post
  • Meher Afroz Shaon Facebook Post

ফেব্রুয়ারিতে ২৬৮ ভুল তথ্য শনাক্ত 

0

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৬৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। ক্যাটাগরিভিত্তিক ভুল তথ্য শনাক্ত ছাড়াও গেল মাসে একটি ফ্যাক্ট স্টোরিও প্রকাশ করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (১২৭) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৪৭ শতাংশ। এছাড়া, জাতীয় বিষয়ে ৭৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১০টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৮টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে আটটি, শিক্ষা বিষয়ে পাঁচটি, প্রতারণা বিষয়ে ১৬টি, খেলাধুলা বিষয়ে সাতটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে।

এসব ঘটনায় তথ্যভিত্তিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ১০৮টি। এছাড়া ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৬৪টি এবং ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৯৬টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৬৪টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৪টি এবং বিকৃত হিসেবে ৪০টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবু্কে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২৫০টি। এছাড়া, এক্সে ৪৪টি, টিকটকে ১৬টি, ইউটিউবে ৩৮টি, ইন্সটাগ্রামে ২১টি, থ্রেডসে অন্তত তিনটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১০টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।  

গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল ফেব্রুয়ারিতেও এই ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে নয়টি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এমন ২০টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, সাড়ে ৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। 

ফেব্রুয়ারিতে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও। এর মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য তার পক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। অন্যদিকে ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল তথ্যগুলো তার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।

সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে নিয়ে চারটি (সবগুলোই বিপক্ষে), নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে), এবং আ ফ ম খালিদ হোসন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে একটি করে (সবগুলোই বিপক্ষে) এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানার গেল মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে (১৬) সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ভুল তথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া নয়টি ভুল (৭৮ শতাংশই পক্ষে) তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ১২টি ভুল তথ্য (৫৮ শতাংশই পক্ষে) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।  

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) জড়িয়ে গত মাসে একটি (বিপক্ষে) ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এই সময়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটি (বিপক্ষে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে একটি (পক্ষে) এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে চারটি (সবগুলোই বিপক্ষে) ভুল তথ্যের প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে গত মাসে ১৩টি অপতথ্য (বিপক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে জড়িয়ে এই সময়ে তিনটি অপতথ্য (সবগুলোই বিপক্ষে) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ১৬টি (সাড়ে ৮৭ শতাংশ বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এই দলের শীর্ষ পদ অর্থাৎ আহ্বায়ক পদে রয়েছেন সদ্যই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়ানো নাহিদ ইসলাম। তাকে জড়িয়ে একটি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে গত মাসে। এছাড়া, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নামে নতুন একটি ছাত্রসংগঠনও গঠিত হয়েছে গত মাসে। এই সংগঠনকে নিয়েও একটি ভুয়া তথ্যের প্রচার দেখা গেছে ফেব্রুয়ারিতে। 

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে দুইটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে সাতটি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর বাইরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে জড়িয়ে দুইটি ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল ফেব্রুয়ারিতে। 

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’  ফেব্রুয়ারিতে ১০টি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। একই সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে ১১টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে পাঁচটি, সারজিস আলমকে নিয়ে তিনটি এবং খান তালাত মাহমুদ রাফি, নুসরাত তাবাসসুম ও আব্দুল হান্নান মাসুদকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

গেল মাসের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে গত মাসে ১৪টি মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হয়েছে। 

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ঘটনায় রিউমর স্ক্যানার অন্তত ১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। গেল মাসে একক কোনো ঘটনায় এটিই সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনায় পুরোনো ভিডিও, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ঘটনা এমনকি ভিন্ন দেশের ঘটনার ফুটেজ ব্যবহার করে অপতথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন অন্তত নয়টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে গত মাসে। একই সময়ে ধর্ষণের ঘটনাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং এ সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে আসার হার বেড়েছে। এর ফলে জনমনে শঙ্কার অবকাশের সুযোগ নিয়ে একই কায়দায় অপতথ্যের প্রচার ছিল গত মাসে। এই ধরণেরও নয়টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।  

গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৪৭টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ৩২টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৫১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর নাম সবচেয়ে বেশি (৮) ব্যবহার করা হয়েছে। পত্রিকাটির পর চ্যানেল২৪ ও যমুনা টিভির নাম বেশি (৪) ব্যবহার করা হয়েছে।  

বার্তা প্রেরক 

তানভীর মাহতাব আবীর
জ্যেষ্ঠ ফ্যাক্টচেকার
রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ
[email protected]

থানায় ঢুকে ওসিকে হত্যার দাবিতে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘থানায় ঢুকে ওসিকে হত্যা’ শীর্ষক দাবিতে একটি লাশের পাশে পুলিশ সহকর্মীদের কান্নার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি থানায় ঢুকে ওসিকে হত্যা করার কোনো ঘটনার নয়। বরং, এটি ২০২৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যুর পর হাসপাতালে তার সহকর্মীদের শোকের মুহূর্তে ধারণকৃত ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Salauddin Kader Lablo নামক ফেসবুক প্রোফাইলে ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল দেখা যায়৷ 

Comparison: Rumor Scanner.

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওচিত্রটির সময়কাল ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং এটি বড় দরগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত কন্সটেবল মোঃ মোমিনুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণকৃত। 

পরবর্তীতে, গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘বাসচাপায় প্রাণ গেলো হাইওয়ে পুলিশ সদস্যের’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রেও একই তথ্য জানা যায়৷ 

অর্থাৎ, ভিডিওচিত্রের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং থানায় ঢুকে ওসিকে হত্যার কোনো ঘটনার নয়।

সুতরাং, থানায় ঢুকে ওসিকে হত্যার দাবিতে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীদের শোকের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি সাজানো

সম্প্রতি, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যনার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য কোনো ঘটনার নয় বরং, স্ক্রিপ্টেড বা অভিনীত ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি ‘হাসির আড্ডা 2’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে করা পোস্টটি পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook (হাসির আড্ডা 2)

ভিডিওটি মন্তব্য ঘর পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড বলে প্রতীয়মান হয়।

Collage: Rumor Scanner

উক্ত ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি থেকে নিয়মিত স্ক্রিপ্টেড ভিডিও প্রচার করা হয়।

এছাড়া, ফেসবুক পেজ ‘হাসির আড্ডা 2’ ’-এর “অ্যাবাউট” বিভাগে দেখা যায়, পেজটির লোকেশন হিসেবে গাজীপুর উল্লেখ রয়েছে। পেজটির ইন্ট্রোতে লেখা রয়েছে-

“আমাদের ভিডিওগুলা কেউ সিরিয়াস ভাবে নেবেন না এটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য ধন্যবাদ pageফলো দিয়ে পাশে থাকবেন। আপনাদের বিনোদন দেয়ার জন্য আমরা অনেক কষ্ট করতেছি”

Screenshot: Facebook (হাসির আড্ডা 2)

পেজটির “ট্রান্সপারেন্সি” বিভাগ যাচাই করে দেখা গেছে, পেজটি ২০২২ সালের ২ জুন ‘Funny বাংলার মেজো ভাই’  নামে তৈরি করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৮ মার্চ পেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘Chatir bajar Funny binodon’ । তবে, একই বছরের ২৩ মার্চ ‘হাসির আড্ডা ২’ এবং ২৯ জুলাই ‘হাসির আড্ডা 2’ রাখা হয়।

Screenshot: Facebook (হাসির আড্ডা 2)

সুতরাং, স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে সত্য দাবিতে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

স্ত্রী-শ্যালকের বিরুদ্ধে একই নামের ভিন্ন এক ব্যক্তির প্রতারণার অভিযোগের সংবাদে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিনের ছবি প্রচার

সম্প্রতি, ‘স্ত্রী-শ্যালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ডা. সালেহ উদ্দিনের’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফিচারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এর একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিবেদনের ফিচার অনুযায়ী এটা বোঝাচ্ছে যে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার স্ত্রী ও শ্যালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।

দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ) ।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার স্ত্রী-শ্যালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেননি বরং, উক্ত অভিযোগে  ডা. সালেহ উদ্দিন সাঈদ নামের এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এই ঘটনায় সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে যুগান্তর এক ব্যক্তির পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির ছবি প্রচার করেছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক স্ত্রী ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। তিনি জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. সালেহ উদ্দিন সাঈদ । গত ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ তুলে ধরেন।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের। অন্যদিকে একই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (,,) সংবাদ সম্মেলন করা এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এটি নিশ্চিত যে এই ব্যক্তি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নয়। দুই ব্যক্তির চেহারায়ও সুস্পষ্ট অমিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

উল্লেখ্য, ড. সালেহ।উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর ছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স পাশ করেন এবং ১৯৬৯ সালে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। পর তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারে যোগ দেন। 

অর্থাৎ, দুই ব্যক্তির নামের মিল থাকার কারণেই যুগান্তর তাদের প্রতিবেদনে ডা. সালেহ উদ্দিন সাঈদ এর পরিবর্তে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের ছবি প্রচার  করে। যদিও গণমাধ্যমটি পরবর্তীতে তা সংশোধন করে নেয়।

সুতরাং, স্ত্রী-শ্যালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে করা সংবাদ সম্মেলন নিয়ে যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডা. সালেহ উদ্দিন সাঈদের ছবিকে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র