সম্প্রতি, বাগবাজার ঘাট নামক এলাকায় ব্যাগে করে লাশ ফেলতে এসে দুইজন নারী জনতার হাতে ধরা পড়েছেন এবং পরবর্তীতে উপস্থিত জনতা তাদেরকে পুলিশের কাছে সমর্পণ করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাগে করে লাশ ফেলতে এসে দুই নারীর ধরা পড়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার কুমারটুলী ঘাট এলাকায় ট্রলিতে মৃতদেহ নিয়ে গঙ্গার ঘাটে ফেলতে আসা মা-মেয়ের আটক হওয়ার পর ধারণ করা।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি Kuheli Gutta নামের একটি ভারতীয় এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, ভিডিওটি কলকাতার কুমারটুলি ঘাটে ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ এসে ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যাগটির তালা ভাঙলে ভেতরে একজন নারীর মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও পোস্টটিতে জানানো হয়, ব্যাগটি বহণকারী দুই নারী সম্ভবত এটি গঙ্গায় ফেলতে এসেছিলেন।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কুমারটুলী ঘাট এলাকায় ট্রলিতে করে মৃতদেহ নিয়ে গঙ্গার ঘাটে ফেলতে এলে স্থানীয়দের হাতে আটক হন দুই নারী। পরবর্তীতে উপস্থিত জনতা তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আটক হওয়া দুই নারীর নাম আরতি ঘোষ ও ফাল্গুনী ঘোষ। তাঁরা সম্পর্কে মা-মেয়ে। ব্যাগে থাকা মরদেহটি সুমিতা ঘোষ নামেরে আরেকজন নারীর। সুমিতা ঘোষ, ফাল্গুনী ঘোষের পিসিশাশুড়ি ছিলেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে চট্টগ্রামের ওমরগণি এম.ই.এস কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানোর কার্যক্রমের ছবি পোস্ট করা হয়৷ এই পোস্টের একটি পোস্টারে এক নারী পুলিশ সদস্যের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। পোস্টারে দাবি করা হয়, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার উক্ত নারী সদস্যকে ২০২৪ সালের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র জনতা- পুলিশের সহিংসতার সময় হত্যা করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের আগস্টে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে নিহত পুলিশ সদস্যের মধ্যে কেউ নারী ছিলেন না এবং প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন এক নারী পুলিশ সদস্যের। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত।
প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যম সূত্রগুলোতে উক্ত থানায় হামলার ঘটনায় কোনো নারী পুলিশ সদস্য নিহত হননি। এনায়েতপুর থানার হামলা নিয়ে পরবর্তীতে মামলা হলে মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, রেহেনা পারভীন নামে একজন নারী কনস্টেবল শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে বলে জানা যায়। তবে তিনি জীবিত আছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রকাশিত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের তালিকায় এনায়েতপুর থানার পাশাপাশি পুরো পুলিশ বাহিনীতে কোনো নারী পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। আলোচিত ছবির নারী পুলিশ সদস্য পৃথিবী চাকমা বর্তমানে ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে কর্মরত। তিনি নিজে ফেসবুকে পোস্ট করে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি সুস্থ আছেন এবং এনায়েতপুর থানার ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গর্ভবতী নারী পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রচারিত ছবির নারীর সঙ্গে উক্ত ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
পূর্বেও একই দাবিতে একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক সমকালের আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, বিপিএল এর অর্ধেকের বেশি টাকা এখনো বাকি আফ্রিদির। ফোনে তামিমকে গালিগালাজ করলেন আফ্রিদি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপিএলে পুরো পারিশ্রমিক না পেয়ে তামিমকে গালিগালাজ করেননি আফ্রিদি এবং উক্ত দাবিতে সমকালও কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে গণমাধ্যমটির ভিন্ন একটি ফটোকার্ডের শিরোনাম বদলে দিয়ে ভুয়া এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার লোগো লক্ষ্য করা যায় এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০২ মার্চ, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গত ০২ মার্চ গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে “ডিপিএলে ‘দুই ক্লাবে’ তামিম। স্বার্থ সংঘাত দেখেন না।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। তবে এই ফটোকার্ডে প্রচারিত শিরোনাম বদলে দিয়ে “বিপিএল এর অর্ধেকের বেশি টাকা এখনো বাকি আফ্রিদির। ফোনে তামিমকে গালিগালাজ করলেন আফ্রিদি।” বাক্য প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, সমকালের এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদিত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
সমকালের এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিপিএল শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। এবারের আসরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলবেন তামিম ইকবাল। দলটির অধিনায়কও তিনি। আবার জানা গেছে, তামিম ডিপিএলে প্রোমোশন পাওয়া নতুন দল গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের ‘নির্বাহী’। বিপিএলে ফরচুন বরিশালে খেলেছেন তামিম। ওই দলের মালিক মিজানুর রহমান গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের মালিকানা নিয়েছেন।
এই প্রতিবেদনসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের একই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তবে গত ০২ মার্চ অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর এক সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, বিপিএলে চিটাগং কিংসের শুভেচ্ছাদূত ও মেন্টর হিসেবে চুক্তির পুরো অর্থ না পেয়ে এবং বারবার চেষ্টা করেও দলের কর্ণধারের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে বিসিবির দারস্থ হয়েছেন শহিদ আফ্রিদি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে ই-মেইল করে সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে দুই দেশের প্রধানের কাছেও চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক। তবে এই প্রতিবেদনে তামিম ও আফ্রিদির মধ্যে ফোনালাপের বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
সুতরাং, “বিপিএলে পারিশ্রমিক না পেয়ে তামিমকে গালিগালাজ করেননি আফ্রিদি, সমকালের নামে সম্পাদিত ফটোকার্ড” শীর্ষক শিরোনামে সমকালের নামে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি ‘আলহামদুলিল্লাহ তারাবির নামাজ শেষ করে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করলেন হাজারো মুসল্লী’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে৷
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তারাবির নামাজ শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করার ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৩ সালের পুরোনো একটি ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মূল ভিডিওটির ০৫:১১ থেকে০৫:৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের পরে ০০:০১ থেকে ০০:১৩ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সংযোজন করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷ উক্ত অংশে দেখা যায়, সে বছর রমজান মাসে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ আয়োজিত “দেশ ও জাতির কল্যাণে ইমামদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে জাতীয় ইমাম সমাজের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক আযহারীর সভাপতিত্বে উপস্থিত সকলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন।
পরবর্তীতে, গণমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল ‘প্রধানমন্ত্রী হৃদয় দিয়ে ইসলামকে ভালোবাসেন -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিতে থাকা ব্যক্তিবর্গ, পেছনে থাকা ইফতার মাহফিলের ব্যানারের ছবি ও অন্যান্য বিষয়বস্তু থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে Sunnah TV Bangladesh এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রাপ্ত ভিডিও এবং উক্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু একই আয়োজনের৷ প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ আয়োজিত দেশ ও জাতির কল্যাণে ইমামদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়৷
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়৷
সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে তারাবির নামাজ শেষে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া দাবিতে ২০২৩ সালের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘চাঁপাইনবাবগন্জে বোমা হামলা করছে জঙ্গিরা’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷ দাবি করা হচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বরঘরিয়ায় আল-কায়েদার স্থানীয় শাখা আনসার আল ইসলাম ভারতে ব্যবহার করার জন্য আইইডি তৈরি করার সময় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং দেশের গণমাধ্যমগুলোকে এই ঘটনার খবর প্রকাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সদর উপজেলার বরঘরিয়া বাজারে আনসার আল ইসলাম কর্তৃক ভারতে ব্যবহারের জন্য বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। বরং, স্থানীয় রাজনীতিতে পূর্বশত্রুতার জেরে ককটেল বোমা বিস্ফোরণের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে পূর্বশত্রুতার জেরে ৭ টি ককটেল বিস্ফোরণ; আহত ৬’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওচিত্রটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওচিত্রটির মিল রয়েছে৷
Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদের সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিবের সাথে বারঘরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান হারুনর রশীদের বিরোধ চলছিলো৷ এর জের ধর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে হারুনর রশীদকে লক্ষ্য করে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় রাকিবের লোকেরা এবং পরে পিটিয়ে তার বাম পা ভেঙে দেয় তারা। এই ঘটনায় হারুনর রশীদসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছে।
সুতরাং, স্থানীয় রাজনীতিতে পূর্বশত্রুতার জেরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে আনসার আল ইসলাম নামক জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক ভারতে ব্যবহার জন্য বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার হজ পালনের দৃশ্যের নয়, বরং এটি ২০২৩ শেখ হাসিনার ওমরাহ হজ পালনের ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরু আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘Rtv News’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর “মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | Sheikh Hasina | Rtv News” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির স্থান, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ভিডিও থাকা ব্যক্তিদের মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর ‘PM performs Umrah in Makkah’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়৷
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় তিন দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মক্কায় পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারামে ওমরাহ পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে কাবা শরীফের চারদিক ‘তাওয়াফ’ এবং ‘সাফা-মারওয়া’ সায়ী করেন।
এছাড়া, সেসময় দেশের অন্যান্যগণমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদন (১,২,৩) প্রকাশ করে।
সুতরাং, শেখ হাসিনার ২০২৩ সালের ওমরাহ হজ পালনের দৃশ্যকে তার সাম্প্রতিক সময়ের হজ পালনের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই রয়েছেন। এর মধ্যে সম্প্রতি, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে শেখ হাসিনার সাথে আলোচনায় যুক্ত হতে এলাহাবাদ পৌঁছেছে বিশ্ব নেতারা দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনায় যুক্ত হতে এলাহাবাদ পৌঁছেছে বিশ্ব নেতারা’ কিছু কিছু পোস্টে আরও দাবি করা হয়, ‘আজ রাত নয়টায় সবাইকে সরাসরি লাইভ দেখার আমন্ত্রণ’
উক্ত দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হতে এলাহাবাদ পৌঁছেছেন” শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও, যা অন্তত ২০২৩ সাল থেকে ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি, শেখ হাসিনার সাথে আলোচনায় যুক্ত হতে বিশ্ব নেতারা ভারতের এলাাহাবাদে গিয়েছেন দাবির প্রসঙ্গে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, এটি ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শ্রী উজ্জ্বল ভূঁইয়ার উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত গাড়িবহরের দৃশ্য।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার প্রোফাইল থেকে জানা যায় যে, তিনি ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, ২০২২ সালের ২৮ জুন তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়ে শপথ গ্রহণ ও দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর, ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই তাকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
তবে, ভিডিওটি তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নিরাপত্তাযুক্ত গাড়িবহরের দৃশ্য কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়নি।
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ভিডিওটির সঙ্গে প্রচারিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
তাছাড়া, সম্প্রতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্ব নেতাদের আলোচনা বা সাক্ষাতের বিষয়ে গণমাধ্যম বা কোনো বিশ্বস্ত সূত্রেও তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের একটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ব্যবহার করে “বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হতে এলাহাবাদ পৌঁছেছেন বিশ্ব নেতারা” শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে ‘সালেহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিশ্চিত হয়েছে।'(অনূদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে একটি পোস্ট প্রচার করা হয়েছে। উক্ত পোস্টে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আদলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের লিঙ্কও সংযুক্ত করা হয়েছে। উক্ত লিঙ্কে থাকা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সালেহউদ্দিন আহমেদকে চ্যানেল২৪ এ উপস্থাপক পিযুষ বানসার সাথে তার লাইভ টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে করা বক্তব্যের জন্য মামলা করেছে। এছাড়াও দাবি করা হয়, তিনি লাইভ সাক্ষাৎকারে কম সময়ে বেশি টাকা কামানোর একটি সাইটের প্রমোশন করেছিলেন। কথিত উক্ত প্রতিবেদনটিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর লোগোও উপরে প্রদর্শিত হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে প্রচারিত দাবি সঠিক নয় এবং বিডিনিউজ২৪ এরূপ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং ভুয়া একটি ওয়েবসাইটে বিডিনিউজ২৪ এর লোগো সংযুক্ত করে ভিন্ন ঘটনার স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত কথিত প্রতিবেদনটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত কথিত উক্ত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কথিত উক্ত প্রতিবেদনটিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর লেগো থাকলেও ‘denver-roofing.com’ শীর্ষক ভিন্ন একটি ডোমেইন নাম দেখা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ওয়েবসাইটটি বিডিনিউজ২৪ এর আসল ওয়েবসাইট নয়।
কথিত উক্ত প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, “লাইভ সম্প্রচারের সময়, সালেহউদ্দিন আহমেদ সত্য প্রকাশ করে ফেলেন এবং পরে অনুতপ্ত হন। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। তাঁর “অজান্তেই” বলে ফেলা কথাগুলো অনেক দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে বার্তা পাঠাতে শুরু করে। তবে, অনুষ্ঠান চলাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক কল আসে, যেখানে অনুষ্ঠানটি অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। সৌভাগ্যক্রমে, “চ্যানেল ২৪” অনুষ্ঠানের পরিচালককে রাজি করিয়ে সেই সম্প্রচারের একটি কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে, এই প্রতিবেদনও দ্রুত মুছে ফেলা হতে পারে, যেমন সম্প্রচারটি থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই পাঠকদেরকে সালেহউদ্দিন আহমেদের দেওয়া লিঙ্কটি অনুসরণ করে বিস্তারিত জানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
এরপর কথিত মুছে ফেলা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয় যেখানে দাবি করা হয় চ্যানেল২৪ এর প্রতিনিধি পিযুষ বানসা’র সাথে সালেহউদ্দিন আহমেদ নিজের আয়ের উৎস নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন তিনি ‘নিয়ারেস্ট এজ’ নামের একটি সাইটে টাকা ইনভেস্ট করে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন এবং এভাবে কয়েক মাসে মিলিয়নিয়ার হওয়া সম্ভব। এসময় উক্ত সাইটটির লিঙ্কও কথিত সাক্ষাৎকারটিতে হাইপারলিঙ্ক করে দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি চ্যানেল২৪ এর উক্ত সাক্ষাৎকারের ছবি দাবিতে কয়েকটি স্ক্রিনশট সংযুক্ত করা হয়।
এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে চ্যানেল২৪ এ এরূপ কোনো সরাসরি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। কথিত টাকা কামানোর সাইট ‘নিয়ারেস্ট এজ’ এর লিঙ্কে ক্লিক করলে দেখা যায় এটি কথিত প্রতিবেদন প্রচার করা একই ওয়েবসাইটেরই ভিন্ন একটি পৃষ্ঠায় নিয়ে এসেছে। উক্ত সাইটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের উক্তি দাবিতে দুইটি উক্তিও সংযুক্ত করা হয় যেখানে বলা হয় তারা উক্ত সাইটটি ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে। উল্লেখ্য যে, সাইটটিতে ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বদলে প্রধান কাউন্সেলর দাবি করা হয়। এছাড়াও দাবি করা হয় যে প্রতিদিন ৯৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২,১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যাবে। এরপর নাম, ইমেইল ও মোবাইল নাম্বার দিতে বলা হয়৷ উক্ত তথ্যগুলো দিলে ১ দিনের ভেতর যোগাযোগ করা হবে বলে জানানো হয়।
পরবর্তীতে চ্যানেল২৪ এর উক্ত সাক্ষাৎকারের স্ক্রিনশট দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৬ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটি মুক্তমঞ্চ নামক অনুষ্ঠানে ড. সালাহউদ্দিন আহমেদের অতিথি হিসেবে আলোচনা করার দৃশ্যের ছিল।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত অনুষ্ঠানের কি-ফ্রেমের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কি-ফ্রেমের তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি মূলত উক্ত অনুষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে উক্ত অনুষ্ঠানটিতে সালাহউদ্দিন আহমেদকে আলোচিত সাইটটি প্রমোট করতে দেখা যায়নি বরং তার ক্যারিয়ারের নানা ক্ষেত্র ও ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। এছাড়াও কথিত প্রচারিত প্রতিবেদনে সঞ্চালকের নাম পিযুষ বানসা দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রচারিত স্ক্রিনশটটিতে প্রদর্শিত সঞ্চালকের নাম জান্নাতুন নাঈম। এছাড়াও ফেসবুকে প্রচারিত প্রতিবেদনটির প্রিভিউয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদকে পুলিশ হাতকড়ি পরিয়ে আটক করে নিচ্ছে এমন দৃশ্য প্রদর্শিত হলেও কথিত উক্ত প্রতিবেদনেও এর সপক্ষেও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
Screenshot : Whois
উক্ত ওয়েবসাইটটির ডোমেইনের তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এটি ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিলে রেজিস্ট্রার করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বরে হালনাগাদ করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিলে এটি মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
তাছাড়া, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত কথিত উক্ত প্রতিবেদনের দাবি মিথ্যা ও সাইটটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়।
সুতরাং, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে তার লাইভ টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সহজে টাকা কামানোর সাইটের বিষয়ে কথা বলায় মামলা করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে বিডিনিউজ২৪ সংবাদ প্রতিবেদন করেছে শীর্ষক দাবি মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারীদের সর্বোচ্চ অধিকার দিয়েছিলেন। নারীর নির্যাতন মামলার নাম শুনলে ভয় পেয়ে অনেক পুরুষ সোজা ছিলো। কিন্তু আজ কি হচ্ছে নারী নির্যাতন নারী ধর্ষ*ণের হাহাকারে ডুবে আছে পুরো বাংলাদেশ। আপনার নিজের বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করেন আগে ভালো ছিলেন নাকি এখন ভালো আছেন?’ শীর্ষক শিরোনামে এক নারীর আঘাতপ্রাপ্ত শরীরের একাধিক ছবিসহ একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবির ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নারী নির্যাতনের কোনো ঘটনার নয় বরং, এগুলো ২০১৯ সালে জামালপুরে স্বামীর হাতে স্ত্রীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনার ছবি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘নারী কথা – Voice For Women’ নামক ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২২ মে প্রকাশিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল রয়েছে৷
উক্ত পোস্টে দাবি করা হয়, স্ত্রীর মৃত বাবার জমি জোর করে লিখিয়ে নিতে যৌতুক লোভী শিক্ষক স্বামী, শ্বশুর মিলে রড দিয়ে পিটিয়ে তালা বন্ধি করে রাখে ২৬ বছরের শিক্ষিকা স্ত্রীকে।
উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কী ওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনায় অনলাইন গণমাধ্যম জাগো নিউজ২৪ ডট কমের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৯ মে ‘শিক্ষিকা স্ত্রীকে বেদম পেটালেন শিক্ষক স্বামী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের ফিচারে ব্যবহৃত ছবির সাথেও আলোচিত ছবিগুলোর হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের কারণে শিক্ষক স্বামীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শারমিন আক্তার (২৬) নামে এক শিক্ষিকা। স্বামী ও শ্বশুর তার পিঠ ও হাত থেকে কোমর পর্যন্ত রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
উক্ত ঘটনা নিয়ে সেসময় মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোতেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনে ভিন্ন এঙ্গেল থেকে একই নারীর ভিন্ন একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবির নির্যাতনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০১৯ সালে জামালপুরে স্বামীর হাতে স্ত্রীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের নারী নির্যাতনের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থার কারণে দেশব্যাপী অপরাধের হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই, ডাকাতির পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ধর্ষণের সংবাদও শোনা যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘রোজায় দিনে নেতাকর্মীদের বলাৎকার বন্ধ রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জামায়াত আমিরের’ শীর্ষক শিরোনামে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রোজায় দিনে নেতাকর্মীদের বলাৎকার বন্ধ রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জামায়াত আমিরের’ শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে ডিবিসি নিউজ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ডিবিসি নিউজের ডিজাইন নকল করে ভুয়া এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ডিবিসি নিউজ এর লোগো রয়েছেন এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১ মার্চ, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ডিবিসি নিউজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের হুবহু মিল রয়েছে। অর্থাৎ, উক্ত ফটোকার্ডটির শিরোনামের ‘খাবার হোটেল’ লেখাটির স্থলে সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ‘নেতাকর্মীদের বলাৎকার’ শীর্ষক লেখাটি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, ‘রোজায় দিনে নেতাকর্মীদের বলাৎকার বন্ধ রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জামায়াত আমিরের’ শীর্ষক শিরোনামে ডিবিসি নিউজের নামে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।