এনায়েতপুর থানায় হামলায় গর্ভবতী নারী পুলিশ সদস্য নিহতের গুজব

গত ০৩ আগস্ট বিকেলে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন ডাক দেয়া হয়। এর সূত্র ধরে ০৪ আগস্ট দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্র-জনতা ও পুলিশ। ঐদিনই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ১৫ জন নিহত পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন এবং তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে এক নারী পুলিশ সদস্যের ছবিসহ ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

গর্ভবতী নারী পুলিশ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে নিহত ১৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে কেউ নারী ছিলেন না এবং প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন এক নারী পুলিশ সদস্যের। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইট “সিরাজগঞ্জে থানায় হামলা: নিহত ১৫ পুলিশের লাশ হস্তান্তর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, গত ৪ অগাস্ট এনায়েতপুর থানায় আন্দোলনকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ঘটনাস্থলে এবং পরবর্তীতে ০২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতদের মধ্যে একজন ওসি, পাঁচ এসআই, একজন এএসআই এবং আটজন কনস্টেবল ছিলেন।

ঘটনাস্থলে মারা যাওয়া ১৩ পুলিশ সদস্য হলেন,  এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই রইজ উদ্দিন খান, এসআই প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, এসআই মো. তহছেনুজ্জামান, এসআই আনিছুর রহমান মোল্লা, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আযম, কনস্টেবল রিয়াজুল ইসলাম, কনস্টেবল রবিউল আলম,  কনস্টেবল হাফিজুল ইসলাম, কনস্টেবল আব্দুস সালেক, কনস্টেবল লোকমান আলী এবং কনস্টেবল শাহিন উদ্দিন।

প্রতিবেদনে ঢাকার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত দুইজনের মধ্যে একজনের নাম (এসআই নাজমুল) নাম প্রকাশ করা হলেও অপর কনস্টেবলের নাম পরিচয় জানা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

উক্ত ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার অভিযোগপত্র থেকে হাসপাতালে নিহত অপর পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানা যায়। নিহত ঐ পুলিশ সদস্য হলেন কনস্টেবল হুমায়ুন কবির। অর্থাৎ নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় থেকে এটা নিশ্চিত যে এনায়েতপুর থানার হামলার ঘটনায় কোনো নারী পুলিশ সদস্য নিহত হননি। উক্ত মামলায় থানায় হামলার ঘটনায় কোনো নারী পুলিশ সদস্য নিহতের তথ্য বলা হয়নি। তবে মামলায়, ওই দিন এনায়েতপুর থানায় নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর করে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রকাশিত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের তালিকায় এনায়েতপুর থানার পাশাপাশি পুরো পুলিশ বাহিনীতে কোনো নারী পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রচারিত ছবির নারী পুলিশ সদস্যের সম্পর্কে জানতে অনুসন্ধানে Choiti Chitra নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবির নারী পুলিশ সদস্য সম্পর্কে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টকারী ভাইরাল ছবির নারীকে নিজের বোন দাবি করে জানান, আলোচিত ছবির নারীর নাম পৃথিবী চাকমা। তিনি বর্তমানে ঢাকায় পরিবারের সাথে আছেন এবং সুস্থ আছেন। মৃত্যুর গুজবে মানুষকে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করেন।

Screenshot collage: Rumor Scanner

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে Prithibi Chakma নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০৯ আগস্ট এক পোস্টে (আর্কাইভ) জানানো হয়, তিনিই (পোস্টকারী) প্রচারিত ছবির নারী পুলিশ সদস্য এবং তিনি সুস্থ আছেন। তিনি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় নয় বরং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (উত্তর বিভাগ) এ কর্মরত আছেন বলে জানান।  

অর্থাৎ, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় দুর্বৃত্তদের হামলায় কোনো নারী পুলিশ সদস্য নিহত হননি। নিহত নারী পুলিশ সদস্য দাবি করে যে নারীর ছবি প্রচার করা হচ্ছে তিনি সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় কর্মরত নন।

সুতরাং, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ছিলেন শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/Update

৩১ অক্টোবর, ২০২৪: এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনায় আরও দুইজন পুলিশ সদস্যের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর তথ্য এবং উক্ত ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একজন নারী পুলিশ কনস্টেবলকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে এই তথ্যগুলো প্রতিবেদনে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img