ইউটিউব চ্যানেলটির নাম গহীনের বার্তা। একই নামে ফেসবুকেও পেজ চালু আছে, তবে গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে কার্যক্রম বন্ধ। নিয়মিত ভিডিও আপলোড হওয়া ইউটিউব চ্যানেলটির চলতি বছরের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট দেখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন এমন দাবিতে এই চ্যানেলে চলতি বছর ১০ টি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ অথচ জয়ের গ্রেফতারের কোনো তথ্য গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেই আসেনি। এসব ভিডিওতেও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। থাম্বনেইলে জয়ের গ্রেফতারের সম্পাদিত ছবি এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার ফুটেজ সংগ্রহ করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। ইউটিউবে এসব ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় পৌনে সাত লাখ বার।
দাবির ভিত্তি অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা
গহীনের বার্তা চ্যানেলটিতে জয়ের গ্রেফতার প্রসঙ্গে যে দশটি ভিডিও এ বছর প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দুইটি জানুয়ারিতে, চারটি ফেব্রুয়ারিতে, তিনটি মার্চে এবং একটি চলতি মাসে (মে) প্রকাশিত হয়েছে। এসব ভিডিও বিশ্লেষণ করে স্বতন্ত্র কোনো ব্যক্তিকে ভিডিওগুলোতে দেখা যায়নি৷ চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এসব ভিডিওতে নিজেদের কোনো মতামতও দেননি। ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেলের ভিন্ন ভিন্ন বক্তার ভিডিও সংগ্রহ করে এসব ভিডিওতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ইউটিউবের নয়টি চ্যানেলের ১৫ টি ভিডিওকে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিডিও নেওয়া হয়েছে নাগরিক টিভি নামের একটি চ্যানেল থেকে।
সংগৃহীত ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট দেখেছে, এসব ভিডিওর কোনোটিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এবং এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তার এ সংক্রান্ত কথিত একটি নথি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, কোনোটিতে শেখ হাসিনার গত বছরের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনো ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে এফবিআই তদন্ত করছে জয়ের বিষয়ে, কোনোটিতে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যসহ অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে শিরোনাম এবং থান্বনেইলে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তবে একটি ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বক্তা জ্যাকব মিল্টনকে বলতে শোনা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে জয় ১৪ বার গ্রেফতার হয়েছেন। এই ভিডিওটি সংগ্রহ করা হয়েছে নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেল থেকে, যা চ্যানেলটিতে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়। যদিও এই দাবির পক্ষে প্রায় দেড় বছরের পুরোনো এই অনুষ্ঠানে কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। আরেকটি ভিডিও যেটিও নাগরিক টিভির গত ০৩ মে এর একটি অনুষ্ঠান থেকে নেয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থাপক নাজমুস সাকিবকে দাবি করতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার এই দুই দেশে জয় আইনি ঝামেলায় পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আসতে হয়েছে এমন দাবিও উপস্থাপন করতে দেখা গেলেও জনাব সাকিব এসব বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাননি তার অনুষ্ঠানে। অর্থাৎ, চলতি বছরে প্রকাশিত গহীনের বার্তা চ্যানেলটির ভিডিওগুলোতে কোনো তথ্যপ্রমাণই ছাড়াই জয় গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
ক্রমিক | তারিখ | থাম্বনেইল | শিরোনাম | ভিউ | সূত্র (ইউটিউব চ্যানেল) |
১ | ৫ জানুয়ারি | গ্রেফতার হলো হাসিনার ছেলে জয়, ৭ জানুর নৌকা ডুবে গেল | জেল বন্দী জয় চোরা ওয়াশিংটন ডিসিতে | ৮১, ০০০ | Channel US Bangla |
২ | ২২ জানুয়ারি | অবৈধ বাড়িতে ধরা জয় চোরা৷ USA তে আটকা পড়লো জয় | USA তে নতুন বাড়িসহ জয়বাংলা হলো জয় চোরা! | ৯৬,০০০ | New York Voice, Dr. Fayzul Huq |
৩ | ০৪ ফেব্রুয়ারি | ইউনূসের চিঠিতে গ্রেফতার জয়। ঠেলা সামলাও হাসিনা | ইউনূসের ১ চিঠিতেই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রে’ফ’তার জয় চোরা | ১৫,০০০ | UK Kasba TV, Saqeeb’s opinion |
৪ | ২০ ফেব্রুয়ারি | জেলে বন্দী জয় চোরা। মহা বিপদ সংকেত হাসিনার। | জয়কে জয়বাংলা করে দিলো আমেরিকা | ২৫০,০০০ | Nagorik TV |
৫ | ২১ ফেব্রুয়ারি | গ্রেফতার হলো হাসিনার ছেলে জয়। মহা বিপদে হাসিনা। | সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জেল বন্দী জয় চোরা | ১৫,০০০ | Nagorik TV |
৬ | ২৪ ফেব্রুয়ারি | ওয়াশিংটনে জেল বন্দী জয়৷ হাসিনার ওপর আসছে নিষেধাজ্ঞা। | হাসিনার সুযোগ্য পুত্রকে ওয়াশিংটনে জয়বাংলা | ৮২,০০০ | Nagorik TV, Nagorik TV |
৭ | ১৮ মার্চ | গ্রেফতার হলো হাসিনার ছেলে জয়। মহা বিপদে হাসিনা। | জয়কে জয়বাংলা করতে মাঠে নেমেছে আমেরিকা | ২৮,০০০ | Manchitro, Zahed’s Take |
৮ | ২০ মার্চ | ওয়াশিংটনে জেল বন্দী জয়৷ হাসিনার ওপর আসছে নিষেধাজ্ঞা। | জয়কে জয়বাংলা করে আমেরিকার ফাইনাল খেলা শুরু | ৮১,০০০ | Nagorik TV |
৯ | ২৩ মার্চ | আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করায় জয়ের জেল। বিপদ সীমার সর্বোচ্চ চূড়ায় হাসিনা। | আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করায় জয়কে জয়বাংলা! | ৩০,০০০ | Manchitro, Voice Bangla |
১০ | ০৭ মে | অর্থ পাচার মামলায় গ্রেফতার জয়। বিপদের সর্বোচ্চ চূড়ায় হাসিনা। | অর্থ পাচার মা’ম’লায় USA গ্রে’ফ’তার জয় | ৪,৮০০ | Nagorik TV |
এফবিআইয়ের নথি যখন ভুয়া দাবি প্রচারের হাতিয়ার
গহীনের বার্তা নামের চ্যানেলটিতে চলতি বছর যে কয়টি ভিডিওর মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গ্রেফতারের দাবি প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে প্রথম প্রকাশিত ভিডিওটি পাওয়া যায় ০৫ জানুয়ারি। এই ভিডিওতেই একটি নথির ছবির মাধ্যমে জয়ের গ্রেফতারের দাবি করা হয়৷ বাকি ভিডিওগুলোয় কোনো তথ্য প্রমাণই দেখানো হয়নি। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট কথিত এই নথির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। “জেল বন্দী জয় চোরা ওয়াশিংটন ডিসিতে” শিরোনামে প্রকাশিত এই ভিডিওটি সংগ্রহ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম রহমান মাসুমের ইউটিউব চ্যানেল Channel US Bangla থেকে। জনাব মাসুমের চ্যানেলে ভিডিওটি এখন আর নেই। তবে তিনি ভিডিওটির লিংক তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছিলেন যা এখনো সচল রয়েছে৷ তার ভিডিওটি ডাউনলোড করে সেদিনই ইউটিউবের আরেকটি চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়েছে। জনাব মাসুম তার ভিডিওতে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেন, জয়ের বাজেয়াপ্ত হওয়া ৩০০ মিলিয়ন ডলার মামলার নথি প্রকাশ করা হয়েছে সেদিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি। মাসুম এও জানান যে, এটি প্রকাশ করেছেন New York Voice নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের মালিক নাজমুল হাসান বাবু নামে এক ব্যক্তি। আমরা একইদিন নিউইয়র্ক ভয়েস চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওটি খুঁজে বের করেছি। এই ভিডিওতে জনাব নাজমুল হাসান একটি নথির ছবি দেখান, দাবি করেন শেখ হাসিনা ও জয়ের বাজেয়াপ্ত হওয়া ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিষয়ে ওয়াশিংটনে হওয়া মামলার নথি এটি। আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, একই নথির ছবি অন্তত ০৪ জানুয়ারি থেকেই ফেসবুকে পোস্ট হচ্ছিল।
‘Sheikh Hasina Wajed, Sajeeb Ahmed Wajed Joy, Bangladesh Victim, Forfeiture matter’ শিরোনামের এই নথিটি ডেবরা লাপ্রেভোট্টে নামে এক নারী প্রস্তুত করেছেন। কেস আইডি উল্লেখ করা হয়েছে 275-WF-237566। নথিটি পড়ে জানা যাচ্ছে, ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ডেবরা লাপ্রেভোট্টের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের (ডিওজে) সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস যোগাযোগ করেছিলেন। লিন্ডা বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া ফান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে পাচারের সাথে জড়িত একটি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। লিন্ডা জানান যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের জুলাই মাসে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং শেখ হাসিনার চুরি করা বা চাঁদাবাজির কিছু অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে বা তার মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার করেছেন। নথিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ৩০০,০০০,০০০ ডলারের বেশি চুরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তদন্তের জন্য এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসকে অনুরোধ করার তথ্য উল্লেখ রয়েছে এই নথিতে। এর প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ০৪ জানুয়ারি ডেবরা লাপ্রেভোট্টের সাথে ডিওজে এর একটি মিটিং নির্ধারিত রয়েছে বলেও জানানো হয় নথিতে।
এই নথি পড়ে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো নথি নয়৷ বিশেষ করে, এই নথিতে থাকা অন্তত দুইটি তথ্য এই সন্দেহের পক্ষেই যায়। যেমন, নথিতে শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, এও উল্লেখ আছে যে ২০০৭ সালের জুলাইয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷ আমরা যাচাই করে দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তি পান। অন্যদিকে, নথিতে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত একটি মিটিংয়ের বিষয়েও বলা হয়েছে। এই বিষয়গুলো থেকে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, নথিটি ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে প্রস্তুত করা হয়েছিল।
নথিতে দুইজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ আছে, ডেবরা লাপ্রেভোট্টে এবং মার্কিন বিচার বিভাগের (ডিওজে) সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, লিন্ডা স্যামুয়েলস ২০১৩ সালে মারা গেছেন। অন্যদিকে, ডেবরা লাপ্রেভোট্টে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এফবিআইয়ের সুপারভাইসরি স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের পক্ষ থেকে ডেবরা লাপ্রেভোট্টের সাথে কথা বলেছি আমরা। তার কাছে এই নথির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের কাছে মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে) কর্তৃক ২০০৯ সালের ০৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এই বিজ্ঞপ্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। এই ব্যাংক হিসাবগুলোতে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা ছিল। এ বিষয়ে হওয়া মামলার নাম্বার 1:09-cv-00021(JDB)।
ডেবরা রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটকে বলেছেন, জয় এবং শেখ হাসিনার নামে থাকা নথিতে যে অভিযোগ উল্লেখ আছে তার বিপরীতে কোনো তথ্যপ্রমাণ তারা সেসময় পাননি। জয় ২০১৬ সালে এক ফেসবুক পোস্টেও একই তথ্য জানান। ডেবরা আমাদের বলেছেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে আরাফাত রহমান কোকোর নামে প্রায় একই ধরণের অর্থ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে তদন্ত করে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।
অর্থাৎ, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ হাসিনার বিষয়ে প্রচারিত নথিটি কোনো মামলার নথি নয়, এটি শুধুমাত্র একটি অভিযোগ পত্র ছিল। সাড়ে ১৬ বছরের পুরোনো এই কাগজকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে জয়ের গ্রেফতার হওয়ার দাবির সাথে জড়িয়ে প্রচার করা হয়েছে।
সম্পাদিত ছবি দিয়ে দর্শক আকর্ষণের চেষ্টা
গহীনের বার্তা চ্যানেলটিতে জয়ের গ্রেফতারের দাবিতে প্রচার হওয়া ভিডিওগুলোর থাম্বনেইলে ‘জয়কে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে’ এমন দৃশ্যের চারটি ছবি দেখতে পেয়েছি আমরা। চারটি ছবিই রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, মূল ছবিগুলোতে জয়ের উপস্থিতি নেই। এগুলো বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময়ে আটকের ছবি। এসব ছবিতে আটক ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে জয়ের মুখমণ্ডল বসিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে।
মূল ছবিগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দৌহিত্র সে দেশে গ্রেফতার হলে বা তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিকসহ দেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হতো। কিন্তু এমন কোনো সংবাদ মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে আসেনি৷ তাছাড়া জয়ের নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে নিয়মিতই বিভিন্ন পোস্ট করা হচ্ছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে গত ঈদুল ফিতর তিনি ঢাকায় উদযাপন করে গেছেন। তাই তার গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি একেবারেই অবান্তর।
গহীনের বার্তা ইউটিউব চ্যানেলটি ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর চালু করা হয়৷ ১ লাখ ৪৭ হাজার সাবস্ক্রাইবারের এই চ্যানেলে এখন অবধি প্রায় ১৪শ ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। চটকদার থাম্বনেইল, বিভ্রান্তিকর এবং ভুল তথ্য সম্বলিত শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের ফুটেজের মাধ্যমে নিয়মিতই এই চ্যানেলে ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে।
এসব ভিডিওর বিস্তারিত আলোচনা কেউ দেখে থাকলে এটা অন্তত বলে দেয়া যায় যে সে শিরোনাম বা থাম্বনেইলে বিভ্রান্ত হয়নি। কিন্তু গবেষণা এবং ইউটিউব বিষয়ে পারিপার্শ্বিক তথ্য বা পরামর্শগুলোর প্রেক্ষিতে এটা নিশ্চিত যে, সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রেন্ঞ্চ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা জানাচ্ছে, ৫৯ শতাংশ ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট লিংকে ক্লিক না করেই তা শেয়ার করে দেন। এক্ষেত্রে তারা আকৃষ্ট হন শিরোনাম বা থাম্বনেইলের মতো বিষয়গুলোয়। ইউটিউবে প্রতি সেকেন্ডে অসংখ্য ভিডিও আপলোড হচ্ছে। তার ভেতর থেকে কাঙ্ক্ষিত ভিডিওটি আপনার কাছে পৌঁছে দিতে ভিডিও প্রকাশকারী শিরোনাম এবং থান্বনেইলের মতো বিষয়গুলোয় বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। ইউটিউবে ভিউয়ারদের কাছে কন্টেন্ট আকৃষ্ট করতে হরহামেশাই শিরোনাম এবং থাম্বনেইল নিয়ে কাজ করার পরামর্শ উঠে আসছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিস্তারিত ভিডিওতে যা নেই তাই শিরোনাম বা থাম্বনেইলে দিতে হবে৷ এতে করে দর্শকরা যেমন প্রতারিত হবেন তেমনি ইউটিউবের থাম্বনেইল সংক্রান্ত নীতিমালাও ভঙ্গ করা হবে। ইউটিউবের এই নীতিমালায় স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, এমন কোনো থাম্বনেইল ব্যবহার করা যাবে না যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে, যা দেখে একজন দর্শক ভাবতে পারেন তারা কিছু একটা দেখতে যাচ্ছেন যা আসলে ভিডিওতে নেই। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভ্রান্তিকর থাম্বনেইল ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন ভঙ্গের শামিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভিডিও এবং চ্যানেলটি রিপোর্ট করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।