গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ নয়ন। সম্প্রতি, তার মৃত্যু ঘিরে ‘ছেলেটি জুলাই প্রতারণার আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল। শহীদ বাবদ পাওয়া ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে দীর্ঘ ৭ মাস পর ফিরে এসে বিয়ে করলেন। প্রতিমাসে ভাতাও পাবেন। আর সাথে কোটায় সরকারি চাকরিও পেয়েছেন তার বউ। #আবু_সাঈদ_মার্কা_সংস্কার’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ভোলার নয়ন বাড়ি ফিরে এসে বিয়ে করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ভোলা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিহত নয়নের পরিবারের নিকট চিঠি প্রেরণের সময় তার বাবা মায়ের ভুল নাম উল্লেখ করার সুযোগ নিয়ে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে এক ভিন্ন ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৩০ নভেম্বর ভোলা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভোলার আহত ও শহীদদের স্মরণে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত স্মরণসভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করে পাঠানো এক চিঠিতে দেখা যায় সেখানে শহীদ নয়নের বাবার এবং মায়ের ভুল নাম দেওয়া হয়েছে। শহীদ নয়নের বাবার নাম মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এবং মাতার নাম মমতাজ বেগম। তবে চিঠিতে বাবা এবং মায়ের নামে জায়গায় মোঃ আনসার মিয়া এবং রিজিয়া বেগম উল্লেখ করা হয়। মূলত চিঠিতে ভুলবশত শহীদ নয়নের বাবা-মায়ের নামের জায়গায় একই ওয়ার্ডের ভিন্ন আরেক নয়ন (প্রবাসী) এর বাবা-মায়ের নাম লেখা হয়।
এছাড়া, উক্ত দাবিতে প্রচারিত দম্পতির ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি নয়ন নন। প্রকৃতপক্ষে, ছবির ব্যক্তি হচ্ছেন অহিদুজ্জামান সাকিব নামে ভিন্ন একজন।
পরবর্তীতে, ভোলার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ‘দৈনিক আজকের ভোলা’ এর ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর “ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে জুলাই বিপ্লবের শহীদকে জীবিত করার চেষ্টা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদক এবং সাংবাদিকের গত ৯ আগস্ট এর ফেসবুক পোস্ট সহ একাধিক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট থেকে ৯ আগস্ট নয়নের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও, অনুসন্ধানে পরের দিন ১০ আগস্ট শহীদ নয়নের জানাজার নামাজের ছবি এবং ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি বানোয়াট তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
