সম্প্রতি “ঘটনাটি অনেক পুরাতন, তবে যতবারই চোখে পড়ে আমি থমকে দাঁড়াই। ভালোবাসার কাছে একজন মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে এটাও তার একটি প্রমাণ।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাক্তনের যন্ত্রণা শীর্ষক ছবি ও গল্পটি সত্য নয়, বরং একটি ব্যাঙ্গাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশকারী ওয়রবসাইট অন্য ঘটনায় গ্রেফতারকৃত এক নারীর ছবি ব্যবহার করে এই গল্পটি মজার ছলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে World News Daily Report নামে একটি স্যাটায়ার ওয়েবসাইটে “USA: WOMAN ARRESTED FOR CALLING HER EX-BOYFRIEND 77 000 TIMES IN A WEEK” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবি ও গল্পটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর লিন্ডা মারফি নামের এক তরুণী তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে ৩ টি ফোন থেকে ক্রমাগত এক সপ্তাহে ৭৭ হাজার ৬৩৯ বার ফোন, মোট ১৯৩৭টি ইমেইল, ৪১ হাজার ২২৯টি মেসেজ, ২১৭টি ভয়েস মেসেজ এবং ৬৪৭টি চিঠিও পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতে তার প্রাক্তন অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ লিন্ডাকে গ্রেফতার করে।
প্রতিবেদনটিতে লিন্ডা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার নামের এক মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে জানানো হয়। তবে প্রতিবেদনটিতে ঘটনার সময়কাল সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তাদের স্লোগান “Where fact’s doesn’t matter”।
ওয়েবসাইটটির “About us” এর “Disclaimer” সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, তারা বলছেন, “এই ওয়েবসাইটটিতে অসম্পূর্ণ তথ্য, ভুল বা টাইপোগ্রাফিক ত্রুটি থাকতে পারে। ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট, এবং এই ওয়েবসাইটের পরিচালনার সাথে জড়িত অন্য যেকোন ব্যক্তি, বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই যে কোনও সময় এই ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত তথ্য এবং বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন আনতে পারে। WNDR কোনো ভুল তথ্যের জন্য দায়ী থাকবে না, সেটা কোনো থার্ড পার্টির কারণে হোক বা টেকনিক্যাল কারণেই হোক না কেন।
WNDR এর তাদের ব্যঙ্গাত্মক প্রকৃতির ও কাল্পনিক কন্টেন্টগুলোর দায় অস্বীকার করে না। তবে, এই ওয়েবসাইটের সকল প্রতিবেদনে বর্ণিত চরিত্র সমূহ কাল্পনিক এবং বাস্তব ঘটনার সঙ্গে কোনো চরিত্রের মিল পাওয়া গেলে তা সম্পূর্ণ কাকতালীয়।”
পরবর্তীতে says নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই “Was This Woman Really Arrested For Calling Her Ex 77,639 Times?” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ২০১৪ সালের এবং World news Daily Report এর প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাক্তনকে বিরক্ত করার দায়ে গ্রেফতারকৃত লিন্ডা মারফির প্রকৃত নাম সিয়েরা মেরি স্টিড।
অপরদিকে World news Daily Report এ তার ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি মূলত পাঁচ বছর আগের অর্থ্যাৎ ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটিতে ম্যাকডোনাল্ডসে অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে গ্রেফতারের।
পাশাপাশি says.com এর এই প্রতিবেদনটির সূত্র ধরে সিয়েরা মেরি স্টিডের ফেসবুক আইডিতে ২০১৪ সালের ৩০ জুন দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়
পোস্টটিতে তিনি বলেছেন, “আপনি যদি আমার ৫ বছর আগের মুখের ছবি দিয়ে বানানো কাওকে উত্যক্ত করার বানোয়াট গল্প সম্বলিত কোনো মিম অনলাইনে দেখে থাকেন, দয়া করে আমাকে সেটা পাঠাবেন না। আমি বিষয়টি জানি এবং পাত্তা দিচ্ছি না। আপনার উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ। শুভ রাত্রি।”
মূলত, প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় প্রেমিকা কর্তৃক প্রেমিককে ৩ টি ফোন থেকে ক্রমাগত এক সপ্তাহে ৭৭ হাজার ৬৩৯ বার কল, মোট ১৯৩৭টি ইমেইল, ৪১ হাজার ২২৯টি মেসেজ, ২১৭টি ভয়েস মেসেজ এবং ৬৪৭টি চিঠি দেওয়ার ঘটনাটি সর্বপ্রথম World news Daily Report নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। যেটি মূলত একটি স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মক কন্টেন্ট নির্মাণকারী ওয়েবসাইট। পাশাপাশি প্রতিবেদনটিতে যে লিন্ডা মারফি দাবিতে নারীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটিতে ২০১০ সালে ম্যাকডোনাল্ডসে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতারকৃত এক নারীর ছবি। ঐ নারীর প্রকৃত নাম সিয়েরা মেরি স্টিড।
পূর্বেও একই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিকবার প্রচার করা হয়েছিলো। সে সময়গুলোতে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।