২০২৩ সালে ১৯১৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার 

সদ্য বিদায়ী বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারিত ১৯১৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।

২০২৩

রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (৫৯৭) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩১ শতাংশ। ২০২২ সালে রাজনৈতিক বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ২৪৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছিল রিউমর স্ক্যানার। এ বছর প্রথম নয় মাসেই এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২৩ সাল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী বছর হওয়ায় এই সময়ে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক বিষয়ক ভুল তথ্য প্রচারের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জড়িয়ে গেল বছরে ৩২০টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি গণমাধ্যম, রাষ্ট্র, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং তাদের নেতৃত্বকে উদ্ধৃত করে বা জড়িয়ে ভুয়া মন্তব্য বা তথ্য প্রচারের প্রবণতা লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার সংখ্যা ৪৯টি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বাতিল সংক্রান্ত ৩৫টি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ৩০টি এবং রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিকৃত করে ৩২টি ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে। 

রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে গেল বছরে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৫৯টি, খেলার বিষয়ে ২২৩টি, জাতীয় বিষয়ে ১৭১টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৪২টি, শিক্ষা বিষয়ে ১০৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ৭৯টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ৬৫টি, আর্থিক প্রতারণা বিষয়ে ৫৫টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে ২৯ টি এবং অন্যান্য বিষয়ে ৮৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক (১২১টি) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা মোট রাজনৈতিক ভুল তথ্যের ২০ শতাংশ। এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে ৩১টি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিষয়ে ৩০টি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিষয়ে ২৯টি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়ে ২৩টি, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ১৭ টি, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে ১৬টি, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ১৪টি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে ছড়ানো ০৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এর বাইরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে জড়িয়ে ১৯টি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের বিষয়ে ২০টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

গুজবের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ৬৪টি এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৩৮টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

বিদায়ী বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ৪০ টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর একদিনেই ১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। গেল বছরে কোনো ঘটনায় একদিনে এটিই ছিল সর্বোচ্চ ভুল তথ্য ছড়ানোর সংখ্যা।

প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমকে ঘিরে ২০২৩ সালে দেশের শিক্ষাক্রম ছিল আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু। গেল বছর নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো ০৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান লিডসউইন লিমিটেডের পক্ষ থেকে পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে (লিঙ্ক) রিউমর স্ক্যানার।

গেল বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়, শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা৷ এ সময় উক্ত ঘটনার বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ৫৯টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ২০২৩ সালে একক কোনো ঘটনায় এটিই সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা। 

২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় ছেলেদের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এই ক্রিকেট মহাযজ্ঞকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৫২টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। গত বছরে একক কোনো ঘটনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা। 

এছাড়া, বিদায়ী বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত তুরস্ক ও সিরিয়ায় একাধিক ভূমিকম্পের ঘটনায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৩৬টি ভুল তথ্য (লিঙ্ক) শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

২০২৩ সালে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ১৪৫টি ভুল তথ্য (নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ১০৫টি, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহারে ২০টি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম এডিট করে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার ২০টি) প্রচার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে জাতীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র নাম সবচেয়ে বেশি (৪০) ব্যবহার করা হয়েছে, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ২৮ শতাংশ। ‘প্রথম আলো’র পরই আরেক জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলা’র নাম বেশি (২৭) ব্যবহার করা হয়েছে, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ১৯ শতাংশ।

উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বিষয়ক সকল ভুল তথ্যের যাচাই প্রতিবেদনসহ ডায়নামিক ইনফোগ্রাফিকের সাহায্যে এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক নানান তথ্য নিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি বিশেষ একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করতে যাচ্ছে রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানার একটি ফ্যাক্ট-চেকিং বা তথ্য-যাচাইয়ের উদ্যোগ যার প্রধান লক্ষ্য দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ যাত্রা শুরুর পর পরের বছরের (২০২১) ২৮ জুলাই আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) এর সদস্যপদ লাভ করে রিউমর স্ক্যানার।

বার্তা প্রেরক
মোঃ ছাকিউজ্জামান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা 
[email protected]

আরও পড়ুন

spot_img