ঢাকায় ইসলামী মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে যেসব অপতথ্য ছড়ালো

গত ০৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ এর আয়োজন করেন তাবলিগ জামাতের প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারীরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন। এদিন সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ও ট্রাকে ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনে যোগ দেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এদিন লাখো মানুষের জমায়েত ঘটে। এদিন মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আসা বহিরাগতদের দ্বারা হয়রানির অভিযোগ তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মহাসমাবেশে এসে ঢাবি ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের ‘ওয়াশরুমে প্রবেশ’ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যত্রতত্র ‘মূত্র বিসর্জনেরও’ মতো অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরের অফিসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ফটোকার্ড ও স্ক্রিনশটের মাধ্যমে ছয়টি দাবি প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে এগুলোর কোনোটিই সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো প্রচার করেনি বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

“ঢাবিতে খোলা জায়গায় মূত্রত্যাগ, নিষেধ করলে এক আলেম বলেন, ‘একটু কষ্ট সহ্য করেন, আল্লাহপাক উত্তম যাজা দান করবেন’” এমন শিরোনামে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ফটোকার্ডের আদলে একটি তৈরি একটি ফটোকার্ড ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে। দেখুন এখানে, এখানে।  

Screenshot: Facebook 

যদিও প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে এমন কোনো ফটোকার্ডের অস্তিত্ব মেলেনি। উল্টো পত্রিকাটি ফেসবুকের এক পোস্টের মাধ্যমে এই ফটোকার্ডটিকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

প্রথম আলোর ফটোকার্ড দাবিতে আরেকটি ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্ট (, ) নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানারের। এই ফটোকার্ডের শিরোনাম ছিল, “মেট্রোরেলের শত-শত টিকিট উধাও, তৌহিদি জনতাকে টিকিট জমা দেওয়ার অনুরোধ কর্তৃপক্ষের।”  

Screenshot: Facebook 

এই ফটোকার্ডটিও প্রথম আলো প্রকাশ বা প্রচার করেনি। তবে গণমাধ্যম সূত্রে সেদিনের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মেট্রোরেলে বাড়তি চাপ থাকার তথ্য জানা যায়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে মেট্রোরেলে করে উদ্দেশে রওনা দেন। তবে এমআরটি পাস ও র‍্যাপিড পাসধারীদের সমস্যা কম হলেও সিঙ্গেল জার্নি টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন ছিল।

এদিকে নাশিদ শিল্পী আবু উবায়দা তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করেছেন, যার শিরোনাম “মুতের গন্ধে গাঁজা খাওয়ার জন্য চিপায় যাওয়া যাচ্ছে না, শাহবাগীদের তীব্র ক্ষোভ।”  

Screenshot: Facebook 

ফটোকার্ডটি প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা হলেও পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে এমন কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি৷ এমন শব্দচয়নও সাধারণত প্রথম আলো ব্যবহার করে না। 

প্রথম আলো এবং যমুনা টিভির ফটোকার্ডের আদলে একই ছবি ব্যবহার করে আরো দুইটি পোস্ট প্রচার হতে দেখা যায় গত ০৫ নভেম্বর। প্রথম আলোর আদলে তৈরি ফটোকার্ডটির শিরোনাম  “ঢাবির রোকেয়া হলে জোরপূর্বক প্রবেশ একদল তাবলীগ কর্মীর, হিন্দু মেয়েদের হল থেকে বের করে দেওয়া হুশিয়ারী।” এ সংক্রান্ত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

অপরদিকে, যমুনা টিভির আদলে তৈরি ফটোকার্ডটির শিরোনাম “ঢাবির রোকেয়া হলে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা, কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘দ্বীনের দাওয়াত দিতে এসেছি’।” এ সংক্রান্ত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। 

Collage: Rumor Scanner 

তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রথম আলো বা যমুনা টিভি এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেনি। যমুনা এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়ে উক্ত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া বলে জানিয়েছে।  

শুধু ফটোকার্ডই নয়, এই সম্মেলন ঘিরে গণমাধ্যমের ভুয়া ভিডিও প্রতিবেদনের বানোয়াট স্ক্রিনশট ব্যবহার করেও অপতথ্যের প্রচারের বিষয়টি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। “ঢাবির কিছু হিন্দু ছাত্রী দ্বারা সমাবেশে আসা মাদ্রাসার ছাত্র হ্যারাস হ্যারেসমেন্ট।” শীর্ষক শিরোনামে একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পোস্ট করা হয়েছে দাবিতে একটি স্ক্রিনশট প্রচার করা হচ্ছে৷ ফেসবুকে এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।  

Screenshot: Facebook 

তবে একাত্তর টিভি এমন শিরোনামে বা উক্ত দাবিতে কোনো ভিডিও প্রকাশ করেনি৷ সেদিনের সম্মেলন নিয়ে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলের দুইটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে।  

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img