সম্প্রতি, সদ্য প্রয়াত এনামুল হক জজ মিয়া ৯ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন দাবিতে দেশীয় কয়েক মূলধারার গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে।
গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো দেখুন; ‘প্রথম আলো’, ‘দেশ রূপান্তর’, ‘ইনকিলাব’‘ ইনকিলাব(২), ইনকিলাব(৩), ‘বাংলানিউজ২৪, ও ‘আলোকিত বাংলাদেশ’‘।
একই দাবিতে ২০২১ সালে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো দেখুন; ‘সময় নিউজ‘, ‘নিউজজি২৪‘, ‘বাংলাদেশ জার্নাল‘ ও ‘পূর্ব-পশ্চিম‘।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এনামুল হক জজ মিয়া ৯ বছর নয় বরং ৪ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসন হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জাতীয় সংসদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের নামের তালিকা থেকে জানা যায় তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এনামুল হক জজ মিয়া।
তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদের মেয়াদকাল কত ছিল?
জাতীয় সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় জাতীয় সংসদ ও চতুর্থ জাতীয় সংসদের মেয়াদকাল ছিল যথাক্রমে ১ বছর ৫ মাস এবং ২ বছর ৭ মাস। অর্থাৎ সর্বমোট ৪ বছর।
এছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চে দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা ‘কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে “ফিরে দেখা ১০টি সংসদ নির্বাচন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম সংসদ এর মেয়াদকাল পূরণ করে।”
প্রতিবেদন থেকে জানা জানা যায়, তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিলো ১৭ মাস।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি জয়লাভ করে। এ সংসদের মেয়াদ ছিলো ২ বছর ৭ মাস।
এনামুল হক জজ মিয়া যেহেতু তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সেহেতু তিনি ৪ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাছাড়া, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য আর গফরগাঁও প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “জজ মিয়া ৪ থেকে ৪.৫ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন। ৯ বছর সংসদ সদস্য থাকার খবরটি ভুল”।
তাছাড়া, উইকিপিডিয়াতে এনামুল হক জজ মিয়ার নামে একটি পেইজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেইজটিতে জজ মিয়ার পরিচিতির জন্য তৈরীকৃত প্রোফাইলে বলা হয়েছে, “এনামুল হক জজ মিয়া ভাই/ ময়মনসিংহ ১০ আসনের সাংসদ/ কাজের মেয়াদ ৭ মে ১৯৮৬- ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০”
অর্থাৎ,সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সূত্রে এটা নিশ্চিত যে এনামুল হক জজ মিয়া তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচন ব্যতীত অন্য কোনো সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হননি। অর্থাৎ এনামুল হক জজ মিয়ার ৯ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের দাবিটি ভিত্তিহীন।
উল্লেখ্য, মূলধারার গণমাধ্যম ইনকিলাব, বাংলানিউজ২৪ ও ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ এর প্রতিবেদনে এনামুল হক জজ মিয়া ময়মনসিংহ-৮ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে তিনি ময়মনসিংহ-১০ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তৃতীয় সংসদে ময়মনসিংহ-৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ হাসিম উদ্দীন আহাম্মদ।
এবং ৪র্থ সংসদে ময়মনসিংহ-৮ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ ফখরুল ইমাম।
জাতীয় সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের নামের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
মূলত, এনামুল হক জজ মিয়া ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসন হতে জাতীয় পার্টির সমর্থনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদের মেয়াদকাল ছিল যথাক্রমে ১ বছর ৫ মাস এবং ২ বছর ৭ মাস। সে হিসেবে এনামুল হক জজ মিয়া সংসদ সদস্য হিসেবে সর্বমোট ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য, সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে, সম্প্রতি জাতীয় পার্টির সাবেক এই সংসদ সদস্যের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশীয় বেশকিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে তিনি ৯ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন এবং ময়মনসিংহ-৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
সুতরাং, সদ্য প্রয়াত সাবেক এমপি এনামুল হক জজ মিয়া টানা ৯ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন এবং ময়মনসিংহ-৮ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- কালের কন্ঠ: ফিরে দেখা ১০টি সংসদ নির্বাচন
- ওয়েবসাইট: Parliament.gov.bd
- রিউমর স্ক্যানারের নিজস্ব অনুসন্ধান