‘মুসলিম নারীদের কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর’ শীর্ষক মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথ করেননি

২০১৫ সাল থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম নেতা ও দেশটির উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ “মুসলিম নারীদের লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে

আদিত্যনাথ

সম্প্রতি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

বিভিন্ন বছরে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন ২০১৫ (আর্কাইভ), ২০১৬ (আর্কাইভ), ২০১৭ (আর্কাইভ), ২০১৮ (আর্কাইভ), ২০১৯ (আর্কাইভ),  ২০২০ (আর্কাইভ), ২০২২ (আর্কাইভ) এবং ২০২৩ (আর্কাইভ)।

বিভিন্ন বছরে উক্ত দাবিতে ওপার বাংলা থেকে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন ২০১৫ (আর্কাইভ), ২০১৭ (আর্কাইভ), ২০১৮ (আর্কাইভ), ২০১৯ (আর্কাইভ), ২০২০ (আর্কাইভ), ২০২১ (আর্কাইভ), ২০২২ (আর্কাইভ) এবং ২০২৩ (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ২০১৫ সালে গণমাধ্যমে প্রচারিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন নয়া দিগন্ত (ফেসবুক), ইনসাফ, বাঙ্গি নিউজ , বঙ্গ-নিউজ , সিলেটের খবর

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুসলিম নারীদের কবর থেকে তুলে ধর্ষণ সংক্রান্ত মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথ করেননি বরং ২০০৭-০৮ সালে তার উপস্থিতিতে তারই দলের ভিন্ন এক ব্যক্তি উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা অল্ট নিউজের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর “একটি সমাবেশে, আদিত্যনাথ হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি কখনো একসাথে বসবাস করতে পারে না বলেন, সহবক্তা মুসলিম নারীদের ধর্ষণের আহ্বান জানান” (অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭-০৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সিদ্ধার্থনগরে হিন্দু যুব বাহিনী আয়োজিত হিন্দু চেতনা র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‍্যালিতে বর্তমানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার সংগঠন হিন্দু যুব বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর ভাষণে দাবি করেন হিন্দু সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতি কখনো একসাথে বাস করতে পারে না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একই র‌্যালিতে যোগী আদিত্যনাথের সহবক্তা মুসলিম নারীদের কবর থেকে বের করে ধর্ষণের দাবি জানান।

প্রতিবেদনটিতে যুক্ত বক্তব্যের ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে মুসলিম নারীদের ধর্ষণ সংক্রান্ত মক্তব্যটির সময় ক্যামেরার এক ফ্রেমে আদিত্যনাথকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া আলোচ্য মন্তব্যকারীর কণ্ঠের সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের কণ্ঠের আমিলও লক্ষ্যা করা যায়। 

অর্থাৎ, মুসলিম নারীদের ধর্ষণ সংক্রান্ত মক্তব্যটি তিনি করেননি। 

এছাড়া একই দাবি ভারতে ছড়িয়ে পড়লে ২০২০ সালে ভারতের দুইটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা অল্ট নিউজ এবং দ্য কুইন্ট এ বিষয়ে ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দুইটি সংস্থাই জানায়, আলোচ্য মক্তব্যটি যোগী আদিত্যনাথের নয় বরং তার সহবক্তার।

তবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম প্রধান নেতা এবং দেশটির উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিভিন্ন সময় মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন। যেমন ২০১৫ সালে তিনি বলেছিলেন, যদি তিনি সুযোগ পান তবে প্রত্যেক মসজিদে গৌরী-গণেশের মূর্তি স্থাপন করবেন।   

মূলত,  ২০০৭-০৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে আয়োজিত হিন্দু চেতনা র‍্যালিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম প্রধান নেতা এবং দেশটির উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপস্থিতিতে তার সংগঠন হিন্দু যুব বাহিনীর একজন নেতা মুসলিম নারীদের লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ করা সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে উক্ত মন্তব্যটি ২০১৫ সাল থেকে যোগী আদিত্যনাথের করা মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। 

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে যোগী আদিত্যনাথ হিন্দু যুব বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০২২ সালে তিনি সংগঠনটির সমস্ত ইউনিট বিলুপ্তির ঘোষণা করেন।

সুতরাং, “মুসলিম নারীদের লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর” শীর্ষক মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img