জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে এখন অবধি অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। দিরভর সংঘর্ষের পর ঐদিন সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। হামলাকারীদের গ্রেফতারে জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।
এরই প্রেক্ষিতে, অভিযানে গোপালগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং র্যাব কর্তৃক অস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ত্র উদ্ধারের এই ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয় এবং ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটি গত বছরের আগস্টে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানায় লুট হওয়া অস্ত্র সেনাবাহিনীর মাধ্যমে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনার।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার লৌহজং প্রতিনিধি শওকত হোসেনের ফেসবুক প্রোফাইলে গত ১৮ আগস্ট প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

পোস্টের ক্যাপশন অনুযায়ী, ভিডিওটি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানায় লুট হওয়া অস্ত্র সেনাবাহিনী উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তরের দৃশ্যের।
উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে একই দিন আজকালের খবরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ০৫ আগস্ট সরকার পতনের পর, মুন্সীগঞ্জ সদর থানা ও ট্র্যাফিক পুলিশ কার্যালয় থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা সার্কিট হাউজ কক্ষে উদ্ধার হওয়া এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ লুট হাওয়া বিভিন্ন সরঞ্জাম পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ বিভিন্ন সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে রাইফেল,পিস্তল,শর্টগান সহ বিভিন্ন ধরনের মোট ১৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র,৩ হাজার ৯৩৪ রাউন্ড গোলাবারুদ। এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৯ হাজার ৫০০ টাকার,নগদ অর্থ ও পুলিশের পোষাক সামগ্রী। একই দিন জেলার টঙ্গীবাড়ী থানা থেকে লুট হওয়া ৭৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ হাজার ৮৯১টি গোলাবারুদ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
একই তথ্য একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও (১,২,৩) উঠে এসেছে।
আমরা বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি প্রথম ফেসবুকে পোস্ট করা সাংবাদিক শওকত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি নিশ্চিত করেন ঘটনাটি গত বছরের আগস্ট মাসে মুন্সিগঞ্জের।
সুতরাং, যৌথ বাহিনীর অভিযানে গোপালগঞ্জ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Md Sowkat Hossan- Facebook Post
- Ajkaler Khobor- মুন্সীগঞ্জের থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
- Md Sowkat Hossan- Statement