কক্সবাজারের চকরিয়ায় ধর্ষণের শিকার মুসলিম নারীকে এক্সে হিন্দু দাবিতে প্রচার 

সম্প্রতি, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ১৪ বছরের এক হিন্দু  তরুণীকে ১০ জন মুসলিম গণধর্ষণ করেছে দাবিতে একটি ভিডিও এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হয়েছে।

এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওর তরুণী কিংবা কক্সবাজারের চকরিয়ায় ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণী হিন্দু নন। প্রকৃতপক্ষে, ভুক্তভোগী তরুণী মুসলিম, তাকে মিথ্যাভাবে হিন্দু হিসেবে অপপ্রচার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সাংবাদিকের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

উক্ত দাবির একটি ভিডিওতে ‘Channel Inani’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। সেই সূত্রে অনুসন্ধানে ‘চ্যানেল ইনানী’ নামের ফেসবুক পেজ গত ০৬ জানুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্টে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত পোস্ট এবং ভিডিওতে দেওয়া বক্তব্য থেকে জানা যায়, ঘটনাটি গত ০৫ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে সময়ের কণ্ঠস্বর এর ওয়েবসাইটে গত ০৬ জানুয়ারি “সিএনজি থেকে নামিয়ে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “০৫ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালীর সংযোগস্থল বদরখালী ব্রীজ সংলগ্ন প্যারাবনে এক তরুনীকে সংঘবদ্ধ ভাবে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় থাকা ওই তরুণী জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে তার বোনের আকদ্ অনুষ্ঠান শেষে রাত ১০টার দিকে বদরখালী স্টেশন থেকে অটোরিকশা (সিএনজি) যোগে মহেশখালীর নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন।

বদরখালী-মহেশখালী ব্রীজের মাঝখানে গিয়ে সিএনজি চালক যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন জানিয়ে ভুক্তভোগী বলেন, পরে আবারো সিএনজি স্টেশনে আসার পথে কয়েকজন যুবক তাকে ব্রীজ সংলগ্ন প্যারাবনে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন যুবক তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় ধর্ষণ করেন।

তিনি আরও জানান, পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বদরখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরিবারের সাথে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসেন উন্নত চিকিৎসার জন্য।চকরিয়ার স্থানীয় এক সংবাদকর্মী ওই তরুণীকে উদ্ধারকারীদের একজন। তিনি জানান, ওই সিএনজির চালকের নাম সায়মন।”

গণমাধ্যম কিংবা উক্ত ভিডিও পোস্টে ওই ভুক্তভোগী তরুণীর কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। এ থেকে বোঝা যায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীনভাবে ওই তরুণীকে হিন্দু হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।

পরবর্তীতে হিন্দু দাবি বিষয়টি যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ওই তরুণীর পরিচয় জানতে চেয়ে চকরিয়া থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভুক্তভোগী নারীর পরিচয় জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন,“গত ০৫ জানুয়ারির এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী মুসলিম। উক্ত ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আমরা আটক করেছি। অভিযান চলমান রয়েছে।” 

এছাড়াও, ওই তরুণীকে উদ্ধারের সময় উপস্থিত থাকা স্থানীয় সাংবাদিক আল জাবের এর সাথেও কথা বলে রিউমর স্ক্যানার। ওই তরুণীকে হিন্দু দাবি করে প্রচার করা হয়েছে বিষয়টি উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি জানান, “ধর্ষণের শিকার তরুণী মুসলিম। হিন্দু দাবিটি মিথ্যাচার।”

সুতরাং, গত ০৫ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ধর্ষণের শিকার মুসলিম নারীকে এক্সে (সাবেক টুইটার) হিন্দু ধর্ম্বালম্বী দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img