সতর্ক বার্তা: ভিডিওতে সংবেদনশীল ও সহিংস কন্টেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে একটি খুনের ঘটনা প্রদর্শিত হয়েছে। এই ধরনের কন্টেন্ট মানসিকভাবে পীড়াদায়ক হতে পারে। পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, ভিডিওটি দেখার আগে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিন এবং কেবলমাত্র প্রয়োজন অনুভব করলে ভিডিওতে প্রবেশ করুন।
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও নরসিংদী কাউরিয়া পাড়া ঈদগাহ গেটে ছাত্রলীগ কর্মীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মোহাম্মদপুরের জেনাভা ক্যাম্প দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন – এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
নরসিংদী দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন – এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে প্রচারিত এক্স পোস্ট – এখানে (আর্কাইভ)।
৩০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, একজন যুবককে মুখ, হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। যুবকটির পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট এবং তার উর্ধাঙ্গে কোনো পোশাক ছিল না। কিছুক্ষণ পর একজন আক্রমণকারী হলুদ হাতলযুক্ত একটি লম্বা ছুরি দিয়ে ওই যুবকের গলায় আঘাত করেন, যার ফলে রক্তপাত শুরু হয়। আঘাতের পর যুবকটি যন্ত্রণায় চিৎকার করেন। এরপর আক্রমণকারী আবারও একাধিকবার আঘাত করে।

এছাড়া, নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ সমর্থককে হত্যার দাবি করে আরেকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, যেখানে দেখা যায়, জিন্স ও টি-শার্ট পরিহিত এক যুবক রাস্তায় পড়ে আছেন। তার গলার কাছে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, এবং তার মাথার কাছে একজন মহিলা বসে আছেন। চারপাশে উৎসুক জনতা ভিড় করে আছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প বা নরসিংদীর কাউরিয়া পাড়া ঈদগাহ গেটে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটেনি। ভাইরাল ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সালে ভেনিজুয়েলায় মাদক চক্রের হাতে গায়ানিজ খনিশ্রমিককে হত্যার দৃশ্য। এছাড়া, ১ অক্টোবর নরসিংদীতে হানিফ মিয়া নামের একজনকে হত্যার ঘটনা ঘটলেও তার সাথে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে “Documenting Reality” নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের সেন্সরবিহীন ভিডিও পাওয়া যায়, যা একই ঘটনার দীর্ঘ সংস্করণ।
এই ভিডিও থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে পুনরায় রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে অস্ট্রেলিয়ান নিউজ পোর্টাল “news.com.au”-তে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে ভিডিওটির স্থিরচিত্রসহ বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনিজুয়েলায় মাদক চক্রের হাতে এক কিশোরের নির্মমভাবে হত্যা হওয়ার একটি ভিডিও সামনে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের আঁধারে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে মাটিতে শুইয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং তার মুখ সবুজ কাপড়ে বাঁধা। এক ব্যক্তি স্প্যানিশ ভাষায় বাড়ি, টাকা ও ভেনিজুয়েলা সম্পর্কে কথা বলছিলেন। পরে তিনি একটি বড় ছুরি দিয়ে কিশোরটির কানে আঘাত করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভেনিজুয়েলার “মেগাবান্ডাস” নামে মাদক চক্রের কর্মকাণ্ড।
প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গায়ানার স্থানীয় গণমাধ্যম “Television Guyana Evening News” নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে ভিডিওতে থাকা কিশোরটিকে গায়ানার নাগরিক বলে দাবি করা হয়েছে।
গায়ানার সংবাদমাধ্যম “কাইতুর নিউজ”-এর ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভেনিজুয়েলায় “সিন্ডিকাটো” নামে মাদক চক্রের হাতে এক গায়ানিজ খনিশ্রমিককে শিরচ্ছেদ করা হয়েছে। নিহত খনিশ্রমিকের নাম ছিল রোমাসসিন্ডো, যিনি হোসোরো এলাকার বাসিন্দা ৯ছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই খনিশ্রমিককে মাটিতে শুইয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, পারিশ্রমিকের দাবি করায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।
অর্থাৎ, ভিডিওটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই, এটি ভেনিজুয়েলায় সংঘটিত একটি মাদক চক্রের নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আরিফা রহমান রুমা সম্প্রতি এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছেন, ভিডিওতে থাকা যুবক একজন আওয়ামী লীগ কর্মী এবং তাকে জামায়াতে ইসলামী হত্যা করেছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিডিওটি নরসিংদী পৌর শহরের কাউরিয়াপাড়া এলাকায় গত ১ অক্টোবর ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ডের। নিহতের নাম হানিফ মিয়া (৩৫)। হানিফের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল, এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার মামাতো ভাই নাঈম ও নাদিম চাইনিজ কুড়াল ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। নিহতের পরিবার ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নাঈম ও নাদিম একই এলাকার মৃত হাবিব উল্লাহর ছেলে। দেড় মাস আগে পারিবারিক বিরোধের জেরে হানিফ তার মামা হাবিব উল্লাহকে হত্যা করেছিল, এবং সেই প্রতিশোধ হিসেবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন কিংবা নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হানিফ মিয়ার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পারিবারিক শত্রুতার বিষয়টিই মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
সুতরাং, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প বা নরসিংদী কাউরিয়া পাড়া ঈদগাহ গেটে ছাত্রলীগ কর্মী বা আওয়ামী লীগ সমর্থককে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Documenting Reality – beheadedbymachetechops.mp4
news.com.au – Cartel cruelty laid bare in brutal video of boy’s execution
Television Guyana Evening News – GUYANESE MINER REPORTEDLY BEHEADED IN VENEZUELA 1 18 2018
Kaieteur News – Guyanese miner reportedly beheaded in Venezuela
Shawon Ahamed Sa’ad – Facebook Post
Ajker Patrika – মামাকে হত্যার দেড় মাস পর মামাতো ভাইদের হাতে যুবক খুন