বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়নি

সম্প্রতি, ‘বিএনপি দমনের ষড়যন্ত্র করছে সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৯৫ হাজার বার। এতে তিন হাজারেও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দমনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি একত্রে জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১৪ নভেম্বর Bd VIP News নামের এক ইউটিউব চ্যানেলে ‘বিএনপি দমনের ষড়যন্ত্র করছে সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আরও দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পূর্বের কিছু কার্যক্রম দেখানো হয় ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, ‘সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে যাতে পরবর্তীতে আরও উচ্চপদে যাওয়া যায়। কারণ, সেনাবাহিনীর সকল উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে প্রতিরক্ষা দপ্তর। আর এই দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সুতরাং সেনাবাহিনী যদি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকে তাহলে এইজন্য অবশ্যই সরকারকে দায় নক্তে হয়। বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম করার অভিযোগ এসেছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এই বিষয়গুলো তুলে ধরে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ জন কংগ্রেস সদস্য। একই সাথে উল্লেখ করা হয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একাধিক সদস্যকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Somoy TV’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০৪ জুন ‘মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রতিহত করবে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে সেসময়ে দেশের জনগণের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুর দিকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ০৪ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শনকালে বিচ্ছিন্নতা বাদীদের সশস্ত্র তৎপরতা ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের কেউ ক্ষতি করছে বা জনগণের ক্ষতি করছে, সেটাকে রোধ করতে গিয়ে যদি আমাদের শক্ত অবস্থানে যেতে হয় তাহলে আমরা অবশ্যই যাবো। মরণ কামড় কেউ দিলে আমরাও তা প্রতিহত করবো, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা শান্তিপূর্ণ সব সমাধান চাই।

এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রেক্ষিতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসা নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

মূলত, ২০২৩ সালের ০৪ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শনকালে বিচ্ছিন্নতা বাদীদের সশস্ত্র তৎপরতা ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া সময় টিভিতে সংবাদ প্রচারিত হয়। সম্প্রতি, এই ভিডিওসহ পূর্বের ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে ভিডিও তৈরি করে ভিত্তিহীনভাবে দাবি করা হয় ‘সেনাবাহিনী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দমনের ষড়যন্ত্র করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সেনাবাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’ তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না। 

সুতরাং, ভিন্ন এবং অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে ‘‘সেনাবাহিনী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দমনের ষড়যন্ত্র করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সেনাবাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img