ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ডসহ বাংলাদেশে গ্রেফতারের ঘটনায় ট্রাম্প কোনো টুইট করেননি

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ৮ নভেম্বর সামাজিক মাধ্যমে শেখ হাসিনার কথিত ফোনালাপ ফাঁস হয়। কথিত ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের আদলে একজনকে ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে দলীয় নেতাকর্মীদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি হাতে মিছিল করার নির্দেশ দিতে শোনা যায়। পরবর্তীতে ১০ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন।

এই প্রেক্ষাপটে, আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ০৯ নভেম্বর রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ডসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, অবৈধভাবে মিছিল ও সমাবেশের চেষ্টা করার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স-এ একটি পোস্ট করেছেন দাবিতে একট তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।



উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি কেন্দ্রিক গ্রেফতারের ঘটনা নিন্দা জানিয়ে কোন এক্স পোস্ট করেননি। বরং, ট্রাম্পের নাম ব্যবহার করে তৈরি একটি ফ্যান অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে এই দাবি ছড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত এক্স পোস্ট খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১০ নভেম্বর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি করা হয়। তবে অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসল অ্যাকাউন্ট নয়। অ্যাকাউন্টটিতে ডোনাল্ড জুনিয়র ট্রাম্প নামের পাশে ‘Update’ শব্দ লেখা রয়েছে। অর্থাৎ, এটি ট্রাম্প বা তার বিষয়ে নিয়মিত আপডেট প্রদানকারী অ্যাকাউন্ট বলে প্রতীয়মান হয়।  

Collage: Rumor Scanner

এক্সের হেল্প সেন্টারে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক্স-এ মানুষ প্যারোডি, ধারাভাষ্য, এবং ফ্যান অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে, কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে যাতে অ্যাকাউন্টগুলো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে। অ্যাকাউন্টের নাম এবং বায়োতে “প্যারোডি,” “ফেক,” “ফ্যান,” এমন শব্দ অন্তর্ভুক্ত করে স্পষ্ট করতে হবে যে এসকল অ্যাকাউন্ট মূল ব্যক্তি বা ব্র্যান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও, এক্স প্ল্যাটফর্মে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট দেখা যায়। এর মধ্যে ইলন মাস্ক, ভ্লাদিমির পুতিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নামেও ফ্যান বা প্যারোডি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট আবার নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে ভেরিফাই হতেও দেখা যায়। ২০২১ সালে এক্স প্ল্যাটফর্ম তাদের পেইড সাবস্ক্রিপশন মডেল চালু করে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা একটি নির্দিষ্ট মাসিক ফি প্রদান করে ব্লু টিক ভেরিফিকেশন অর্জন করতে পারেন।

অর্থাৎ, আলোচিত এক্স পোস্টটির সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই। তার নাম ব্যবহার করে তৈরি একটি ‘আপডেট’ অ্যাকাউণ্ট থেকে করা পোস্টকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা পোস্ট ভেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়া, ট্রাম্পের মূল এক্স অ্যাকাউন্টে শহীদ নূর হোসেন দিবস বা আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কারণে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে ড্রোনাল্ড ট্রাম্প এক্স পোস্ট করেছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Donald J. Trump 🇺🇸 Update : X Account

আরও পড়ুন

spot_img