সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপেছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের সীমান্ত এলাকা। এরই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে গত ২৮ জানুয়ারি তারিখে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘যুগান্তর’ এ “‘সেন্টমার্টিনে থাকা যাবে না পর্যটক, সরাতে হবে স্থানীয়দেরও’” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনামের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “কে না বলছিলো সেন্টমার্টিন দিয়ে ক্ষমতা থাকার ইচ্ছা নেই | তবে কি তাহলে বিক্রি করে দিয়েছে!?” ক্যাপশনে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত সংবাদ শিরোনামটি কোনো প্রশাসনিক ঘোষণার নয়, বরং এটি প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কবল থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদের দেওয়া পরামর্শ৷ সরকারের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের দ্বীপটি ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচিত স্ক্রিনশটে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি তারিখে মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তরে “‘সেন্টমার্টিনে থাকা যাবে না পর্যটক, সরাতে হবে স্থানীয়দেরও’” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি পাওয়া যায়।
সংবাদটি পড়ে জানা যায়, ”সেন্টমার্টিনে অতিরিক্ত পর্যটক যাওয়ার ফলে দূষণের কবলে পড়েছে দ্বীপটি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দ্বীপের চারপাশের প্রবাল। দ্বীপকে বাঁচাতে চাইলে সেন্টমার্টিনে কোনো পর্যটক রাতযাপন করা যাবে না। হোটেল-মোটেলও থাকতে পারবেন না। স্থানীয়দেরও সেন্টমার্টিন থেকে সরাতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদ। সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে দুটি পরামর্শ দিয়ে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই মহাপরিচালক বলেন, সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করতে প্রথমত দূষণ একেবারেই বন্ধ করতে। দ্বিতীয়ত দ্বীপটিতে পর্যটকরা যাবেন কিন্তু রাতযাপন করতে পারবেন না। একদমই থাকা যাবে না। বিরক্ত একেবারেই করা যাবে না। পর্যটকরা যাবেন এবং চলে আসবেন। সেখানে কোনো হোটেল-মোটেল রাখা যাবে না। যেহেতু সেন্টমার্টিনকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা) ঘোষণা করেছে সরকার সেহেতু এখানে থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করা যাবে না। এমনকি যারা ওখানে বসবাস করছেন স্থানীয় মানুষ সরকারের উচিত তাদেরও অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা। কারণ সেখানে কোনো মানব বসতির সুযোগ থাকবে না। যেহেতু বিরল একটি দ্বীপ শুধুমাত্র দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ঘুরতে যাবেন এবং ঘুরে চলে আসবেন। এ রকম যদি করা যায় তাহলে প্রবাল ধ্বংস বন্ধ হবে।” মূলত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদের এরূপ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে করা সংবাদ এটি।
Screenshot : Jugantor
তাছাড়া, উক্ত সংবাদটি প্রায় ৬ মাস পূর্বের, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার অঞ্চলে গুলাগুলির ফলে উদ্ভূত হওয়া পরিস্থিতিতে সেন্ট মার্টিনে গত ১৪ জুন তারিখে খাবার সরবরাহ করা হয়।
এছাড়া, উক্ত পোস্টে ব্যবহৃত সংবাদ শিরোনাম প্রশাসনিক নির্দেশ ভেবে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে লক্ষ্য করা যায়। যার মধ্যে অনেককেই দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করতে লক্ষ্য করা যায়।
Collage : Rumor Scanner
মূলত, দূষণ ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদ দুইটি পরামর্শ দিয়েছিলেন গত ২৭ জানুয়ারি। পরামর্শগুলোতে তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করতে সেন্টমার্টিনে থাকা যাবে না পর্যটক এবং সরাতে হবে স্থানীয়দেরও। এরই প্রেক্ষিতে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর সংবাদ প্রকাশ করে৷ কিন্তু, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের ফলে সেন্ট মার্টিনে উদ্ভূত হওয়া পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যুগান্তরের ঐ প্রতিবেদনের শিরোনামের স্ক্রিনশট নিয়ে দাবিটিকে প্রশাসনিক ঘোষণা মর্মে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, পরিবেশগত কারণে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের থাকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এবং স্থানীয়দের সরানো সংক্রান্ত এক বিশেষজ্ঞের পরামর্শকে প্রশাসনিক নির্দেশ মর্মে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jugantor – ‘সেন্টমার্টিনে থাকা যাবে না পর্যটক, সরাতে হবে স্থানীয়দেরও’
- Prothom Alo – সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের জন্য খাদ্যপণ্য পাঠানো হলো জাহাজে
- Rumor Scanner’s own analysis