শুক্রবার, মে 23, 2025

এটি চলতি রমজানে ভারতে মুসলিমদের নামাজে বাধা ও নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও নয়

সম্প্রতি, রমজান মাসেও ভারতের মুসলমানদের নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি চলতি রমজান মাসে ভারতে মুসলমানদের নামাজ আদায়ে বাধা ও নির্যাতন চালানোর কোনো ঘটনার নয় বরং, দেশটির হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে কট্টরপন্থী হিন্দু কর্তৃক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে মুসলমানদের জুম্মার নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়ার ২০২১ সালের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Woke Malayalam’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে ভিডিওটি সম্পর্কে মালায়ালাম ভাষায় লেখা হয়েছে, “হিন্দু চরমপন্থীদের বাধার মাঝেও গুরুগ্রামে জুমার নামাজ আদায় করলেন মুসলিমরা। আজ (০৩.১২.২০২১) হরিয়ানার গুরুগ্রামের সেক্টর ৩৭ এলাকায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা জুমার নামাজ বন্ধ করার চেষ্টা করলেও পুলিশের নিরাপত্তায় নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। টানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরে সরকার অনুমোদিত স্থানগুলোতে জুমার নামাজ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে তারা হাজির হচ্ছে। ইমাম হাজি শহসাদ খান নামাজ শেষে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জন্য দোয়া করেন। প্রতিবাদ জানাতে আসা প্রায় ৪০ জনকে পুলিশ আটকে দেয় এবং সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)

পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্রে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ‘India: Hindu groups continue to disrupt Muslim prayers in Gurgaon’ শীর্ষক শিরোনমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ঘটনার সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নয়াদিল্লির কাছে গুরুগ্রামে দুই মাসের বেশি সময় ধরে কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠী কর্তৃক মুসলমানদের প্রকাশ্যে জুম্মার নামাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত শুক্রবারে সেক্টর ৩৭-এ বিক্ষোভকারীরা নামাজের স্থানে (জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে) ট্রাক রেখে এবং ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে নামাজে বিঘ্ন ঘটায়, যা পুলিশের সামনেই ঘটে। মসজিদের অভাবের কারণে মুসলমানরা আগে অনুমতি নিয়ে খোলা স্থানে নামাজ পড়লেও, সাম্প্রতিক বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ স্থানের অনুমতি বাতিল করেছে। মুসলিম কাউন্সিল নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি পেলে খোলা স্থানে নামাজ পড়া বন্ধ করতে ইচ্ছুক।

২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে ‘Gurgaon: Tension in an Indian city over Muslim prayers’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত তিন মাস ধরে, প্রতি শুক্রবার, প্রান্তিক হিন্দু ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর একটি দল নিয়মিতভাবে ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি অভিজাত শহরতলী গুরুগ্রামের জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে মুসলমানদের নামাজে বাধা দিতে একত্রিত হচ্ছে। 

সুতরাং, ২০২১ সালের ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে কট্টরপন্থী হিন্দু কর্তৃক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে মুসলমানদের জুম্মার নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে সম্প্রতি রমজান মাসেও ভারতের মুসলমানদের নামাজ আদায়ে বাধা ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img