সম্প্রতি, অভিনেতা মারজুক রাসেল “উচিত কথা বললে শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়। তাহলে কি বাংলাদেশে শিবির যারা করে তারাই শুধু উচিত কথা বলে?” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত পোস্টটিতে যা আছে
উক্ত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, Marzuk Russell নামের একটি পেজের একটি পোস্টে করা মন্তব্যকে উক্ত তথ্যের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। Marzuk Russell নামের সেই ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে পোস্টদাতা নিজেই কমেন্ট বক্সে লিখেন “উচিত কথা বললে শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়। তাহলে কি বাংলাদেশে শিবির যারা করে তারাই শুধু উচিত কথা বলে?”

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিবির নিয়ে করা আলোচিত এই পোস্টটি অভিনেতা মারজুক রাসেলের নয় বরং তার নামে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজের মন্তব্য ঘর থেকে আলোচ্য ভুল দাবিটির সূত্রপাত হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Marzuk Russell নামের ফেসবুক পেজটিতে পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে পোস্টদাতা লেখেন, “উচিত কথা বললে শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়। তাহলে কি বাংলাদেশে শিবির যারা করে তারাই শুধু উচিত কথা বলে?”

উক্ত পেজটির বায়ো এবং ডিটেইলস সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, এটি একটি ফ্যান পেজ।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Marzuk Russell নামের ভিন্ন একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এটিতে মোট ১৮ হাজারেরও বেশি লাইক এবং ১ লক্ষ ১২ হাজারেরও অধিক ফলোয়ার রয়েছে। এছাড়া, পেজটিতে গত ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি অভিনেতা মারজুক রাসেলের একটি লাইভ ভিডিও। লাইভে এসে মারজুক রাসেল জানান, উক্ত পেজটি তার নিজের। এছাড়াও তিনি জানান, “দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে কতগুলো জনপ্রিয় ফ্যানপেজ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং সংস্থাকে উদ্দেশ্য করে তাদের নিজস্ব মতামত প্রচার করছে। যার কারণে সাধারণ মানুষজন বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন আমার কোনো পেজ ছিল না। তবে ’ত্যালফ্যাল ছাড়া যে রান্ধে’, ‘পাশা ভাই’ এমন বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি অনিয়মিত পেজ ছাড়া ফেসবুকে আর কোনো সক্রিয়তা ছিলো না। তবে তিনি এই পেজ খুলে লাইভ করে এটি তার অফিসিয়াল পেজ বলে জানান। পাশাপাশি তিনি তার নামে চালানো অন্য পেজের বিষয়ে সাইবার সিকিউরিটি বিভাগে মৌখিক ভাবে বলে রেখেছেন বলে জানান।
অর্থাৎ, Marzuk Russell নামের যে ফেসবুক পেজকে সূত্র উল্লেখ করে আলোচিত মন্তব্যটি ছড়ানো হচ্ছে সেই পেজটি অভিনেতা মারজুক রাসেলের নয়।
পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর Lylah নামের একটি ফেসবুক পেজে হুবহু একই ক্যাপশনের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে মন্তব্যটি মারজুক রাসেলের- এমন কোনো সূত্র উল্লেখ ছিল না।
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান, যে আলোচিত মন্তব্যটি অনেক আগে থেকেই ফেসবুকে বেনামে প্রচারিত হয়ে আসছে ও সম্প্রতি মারজুক রাসেলের নামের সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, ছাত্রলীগ বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালু করার দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে। সাম্প্রতিক এই ইস্যুতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিবির ও হিজবুত তাহরির সদস্য বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে। যদিও এসব সংগঠনের সাথে নিজেদের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মূলত, গত ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে একটি পোস্ট অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। সেই পোস্টের মন্তব্য ঘরে পোস্টদাতা নিজেই “উচিত কথা বললে শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়। তাহলে কি বাংলাদেশে শিবির যারা করে তারাই শুধু উচিত কথা বলে?” শীর্ষক একটি মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে সেই মন্তব্যটিকে মারজুক রাসেলের মন্তব্য ভেবে নেটিজেনরা সেটি শেয়ার করেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই মন্তব্যটি যে পেজ থেকে করা হয়েছে সেটি মারজুক রাসেলের আসল পেজ নয় বরং সেটি তার নামে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজ। প্রকৃতপক্ষে মারজুক রাসেল এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে ধর্ম ও ক্রিকেটকে জড়িয়ে একটি মন্তব্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে পরিচালিত ফ্যান পেজ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিয়ে করা একটি মন্তব্য মারজুক রাসেলের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Facebook Page: Marzuk Russel
- Facebook Page: Marzuk Russel
- Facebook Page: Lylah
- BBC বাংলা: “ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থানে থমথমে বুয়েট, রোববার যা যা ঘটল”