পবিত্র মাহে রমজান পালনের মধ্যে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ঘটনার বিষয়ে আলোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। দাবি করা হচ্ছে, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ৯ নং দেওটি ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামের একটি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়া অবস্থায় ককটেল নিক্ষেপ করেছে প্রায় শতাধিক হিন্দু যুবক। কতিপয় পোস্টে এমন দাবিও এসেছে যে৷ মসজিদে প্রবেশ করেও হামলা চালানো হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে তারাবির নামাজের সময় মসজিদে বা মসজিদে ঢুকে হিন্দু যুবকরা কোনো হামলা করেনি এমনকি মসজিদে হামলারই কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং পূর্ব শত্রুতার জেরে মসজিদের সামনে এবং মসজিদ সংলগ্ন একটি দোকানে ঘটা হামলার ঘটনাকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। এই হামলার ঘটনায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা সকলেই মুসলিম বলে এই সংক্রান্ত মামলার বাদীই রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন।
নোয়াখালীর আলোচিত এই ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে এ সংক্রান্ত দাবিগুলোর সূত্রপাত খুঁজে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার৷
গত ৩০ মার্চ রাতে মোঃ আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুকে লাইভ ভিডিও প্রচার করেন। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, আটককৃতরা ডাকাতি করতে এসে ধরা পড়েছে৷ এরা মসজিদে তারাবির নামাজের সময় ককলেট মেরেছে। মসজিদে বোমা মেরেছে।
তবে লাইভ প্রচারের সময় ভিডিওর ক্যাপশনে কোনো তথ্য দেওয়া না থাকলেও সেদিন মধ্যরাতে ক্যাপশনে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনাটি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ৯ নং দেওটি ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামে ঘটেছে।
প্রায় একই সময়ে ইয়াসিন আরাফাত নামে এক ব্যাক্তি একই ঘটনার দুইটি ভিডিও (১, ২) প্রচার করে একই ক্যাপশন দেন।
এসব পোস্টে ঘটনার জন্য দায়ী হিন্দু যুবক শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া না থাকলেও মসজিদে হামলার দাবিটি উল্লেখ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, ০২ এপ্রিল ঘটনাটির বিষয়ে করা এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, উক্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে অমুসলিমদের জঙ্গি সংগঠনের কিছু সদস্য।
পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল থেকে হিন্দু যুবকেরা এই হামলা চালিয়েছে শীর্ষক দাবিটি এই ঘটনার ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে ফেসবুক প্রচার হয়ে আসছে৷
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমানের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত মামলার নথি সংগ্রহ করেছে। মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মামলায় যে ১১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আসামি করা হয়েছে তাদের কেউই হিন্দু নয়।
আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে এই মামলার বাদী জনাব মোঃ আবুল কাশেম ও সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর সাথে কথা বলেছি৷ তারা দুজনই জানিয়েছেন যে এই ঘটনায় হিন্দু ধর্মের অনুসারী কোনো যুবকের সংশ্লিষ্টতা নেই।
নথিটি পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার যে বিবরণ জানা যায় তা হলো পূর্ব শত্রুতার জেরে গত ২৯ মার্চ সেই এলাকায় প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ৩০ মার্চ রাতে বাদীর ছেলে রুবেল তারাবির নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পর রামদেবপুর পুরাতন জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তার উপর ও জনৈক আবুল হোসেনের মুদি দোকানের ভেতরে হামলার শিকার হয়৷
অর্থাৎ, মামলার নথি থেকে এটা জানা যাচ্ছে যে, সেদিন মসজিদে কোনো হামলা হয়নি এবং এই ঘটনার কোনো হিন্দু যুবকের সংশ্লিষ্টতা নেই৷ বাদী ও সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জও বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছেন৷
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ঘটনার বিষয়ে ছবি ও ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ৯ নং দেওটি ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামের একটি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়া অবস্থায় ককটেল নিক্ষেপ করেছে প্রায় শতাধিক হিন্দু যুবক। কতিপয় পোস্টে এমন দাবিও এসেছে যে, মসজিদে প্রবেশ করেও হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৩০ মার্চ সোনাইমুড়ীতে মসজিদে কোনো হামলা হয়নি। মসজিদের সামনে এবং মসজিদ সংলগ্ন একটি দোকানে এক যুবকের ওপর ঘটা এই হামলার ঘটনায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা সকলেই মুসলিম। এই ঘটনার সাথে হিন্দুদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ সংক্রান্ত মামলার নথি, মামলার বাদী এবং সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, নোয়াখালীতে তারাবির নামাজের সময় মসজিদে শতাধিক হিন্দু যুবক হামলার চালিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷
তথ্যসূত্র
- Statement from Bakhtiar Uddin Chy.
- Statement from Abul Kashem
- Rumor Scanner’s own investigation