সম্প্রতি, দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে দেড় বছর বয়সী দাবি করে আবদুর রহমান নামে এক শিশুর ছবি প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত ছবি প্রকাশ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো, ইত্তেফাক, দৈনিক আমাদের সময়, আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া
একই ছবি ব্যবহার করে আজকের (০৮ জুন) প্রিন্ট সংস্করণে সংবাদ প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক কালবেলা।
একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
কতিপয় গণমাধ্যমে শিশুটির বাবা মাহবুবুরকে জীবিত দাবি করে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন কালের কণ্ঠ, ডেইলি অবজারভার, সিল্কসিটি নিউজ, প্রভাত আলো, সোনার দেশ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কতিপয় গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে দেড় বছর বয়সী আবদুর রহমান নামে যে শিশুটির ছবি প্রচার করা হয়েছে সে আবদুর রহমান নয় বরং আবদুর রহমানের প্রায় আট বছর বয়সী মেঝো ভাই আবু হুরায়রার ছবিকে আবদুর রহমানের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, দুর্ঘটনায় শুধু শিশুটিই নয়, ঘটনাস্থলেই মারা গেছে তার বাবা মাহবুব আলম।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে Mahabubur Rahman Shozib নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল (০৭ জুন) বিকেলে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
জনাব সজীব লিখেছেন, “প্রথম আলো যে যাচাই বাছাই ছাড়াই নিউজ করে এটাও তার একটা প্রমান, বড় ছেলের ছবি আমি ভুলে পোস্ট করেছিলাম,আর ওই ছবিই সবাই পোস্ট করেছে, আর প্রথম আলো যাচাই ছাড়াই ছবির পাশে দেড় বছরের ছেলে লিখে দিয়েছে। প্রথম আলো ছবি দেখেও ভাবলো না এই ছেলের বয়স দেড় বছর না অনেক বড়।”
সজীবের অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একইদিন (০৭ জুন) দুপুরে তিনি এই দুর্ঘটনার বিষয়ে আরেকটি পোস্টে (আর্কাইভ) শুরুতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আলোচিত শিশুটির ছবি প্রকাশ করেন। তবে পরবর্তীতে পোস্ট এডিট করে মৃত শিশুটির ছবি যুক্ত করেন।
সজীব এই পোস্টে উল্লেখ করেন, “মালেক ভাইয়ের শাশুড়ীর জানাজায় এসে ফেরার পথে মাহাবুব ভাই ও তার ছেলে দাশুড়িয়ায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে, তার স্ত্রী ও আরেক ছেলেও গাড়ীতে ছিলো।”
পরবর্তীতে জনাব সজীবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে মাহবুব আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, তার মেজ ভাই আবদুল মালেক এবং ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান দেন। জনাব সজীব জানান, মাহবুব আলম তার প্রতিবেশী।
মাহবুব আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের (আর্কাইভ) প্রোফাইল পিকচারে গণমাধ্যমে প্রচারিত মাহবুবের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
জনাব সজীবের সহায়তায় মাহবুব আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ১০ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) মাহবুবের তিন সন্তানের ছবিই খুঁজে পাওয়া যায়। জনাব সজীব রিউমর স্ক্যানার টিমকে ছবির ব্যক্তিদের মধ্যে মাহবুবের তিন সন্তানকে চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন। ছবিতে চিহ্নিত ২য় সন্তানের সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিশুটির মিল আছে বলে প্রতীয়মান হয়।
পরবর্তীতে মাহবুবের মেজ ভাই আবদুল মালেকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ১৪ মে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ২য় সন্তানের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে গণমাধ্যমের আলোচিত শিশুটির ছবির মিল রয়েছে।
আরও অনুসন্ধান করে জনাব সজীবের সহায়তায় মাহবুবের ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ১৬ মে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) ৩য় সন্তানের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
তিথি তার পোস্টে উল্লেখ করেন, তার বড় ভাইয়ের ছেলে সন্তান হয়েছে।
তিথির পোস্টের সূত্র ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, ছেলেটির বর্তমান বয়স এক বছর এক মাস প্রায়।
জনাব সজীব রিউমর স্ক্যানার টিমকে Shah Alam নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল (০৭ জুন) প্রকাশিত একটি পোস্টের সন্ধান দেন। এই পোস্টে মাহবুব ও তার সন্তানের মৃতদেহের ছবি রয়েছে বলে জানান সজীব।
সার্বিক বিষয়ে নিশ্চিত হতে পরবর্তীতে প্রথমে মাহবুবের মেজ ভাই আবদুল মালেক এবং পরবর্তীতে তার ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। আবদুল মালেক রিউমর স্ক্যানারকে জানান, কতিপয় গণমাধ্যমে যে শিশুর ছবি প্রচার করা হয়েছে সেটি মারা যাওয়া শিশুটির নয়। মারা যাওয়া উক্ত শিশুর (আবদুর রহমান) একটি ছবিও তিনি আমাদের কাছে পাঠান।
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের সাথে মাহবুব আলমের ছোট বোন শাকিলা আফরিন তিথির কথা হয়৷ তিনি জানান, “যে ছবিটা গণমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে সে তো আমাদের কাছে জীবিত আছে। সে আমার ভাইয়ের দ্বিতীয় সন্তান। তার নাম আবু হুরায়রা। বয়স আট বছর হয়েছে। সে আহত হলেও এখন বিপদমুক্ত। যে মারা গেছে সে ভাইয়ের ছোট ছেলে। তার গত মাসে এক বছর পূর্ণ হয়েছে।”
মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে দেড় বছর বয়সী আবদুর রহমান নামে এক শিশুর ছবি প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি মারা যাওয়া শিশুটির নয়। মারা যাওয়া শিশু আবদুর রহমানের প্রায় আট বছর বয়সী মেঝো ভাই আবু হুরায়রার ছবিকে আবদুর রহমানের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, কতিপয় গণমাধ্যমে দুর্ঘটনায় শুধু শিশুটিই মারা গেছে বলে দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিশুটির সাথে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে তার বাবা মাহবুব আলম।
সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনায় ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে জীবিত মেজো ভাইয়ের ছবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Mahabubur Rahman Shozib: Facebook Post
- Statement from Mahabubur Rahman Shozib
- Statement from Abdul Malek
- Statement from Shakila Afrin Tithi
- Rumor Scanner’s own analysis