সম্প্রতি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া সংক্রান্ত একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে একাধিক পোস্টে ঘটনাটি বাংলাদেশের দাবি করে এ বিষয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়ার খবরটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত একটি বিজ্ঞপ্তিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে কোন দেশের ঘটনা তা উল্লেখ না করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া সংক্রান্ত সমজাতীয় শিরোনামে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত আলোচিত সংবাদটি খুঁজে পাওয়া যায়।
এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন জনকণ্ঠ, রিদ্মিক নিউজ, জুম বাংলা, শেয়ার নিউজ২৪।

সংবাদগুলোর বিস্তারিত অংশ পড়ে জানা যাচ্ছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার সীমা নির্ধারণ করার ঘটনাটি ভারতের। এই বিধিনিষেধের অধীনে, একজন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারবেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক এবং পাঞ্জাব ও সিন্ধু ব্যাঙ্ককে সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা ভারী জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কালার মার্চেন্টস সমবায় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আহমেদাবাদের কালার মার্চেন্টস কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৬ মাস বলবৎ থাকবে।
অন্যদিকে, আরবিআই -এর তরফে জানানো হয়েছে, এই ব্যাংকের গ্রাহকরা মোট সঞ্চয় থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারবেন না।
পরবর্তীতে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, Reserve Bank of India এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত আলোচিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোর মিল রয়েছে।

একই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন DNA India, এই সময়।
কিন্তু দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে স্থান বা দেশ উল্লেখ না থাকায় সেই সংবাদটির লিংক গণমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশের পর শুধু শিরোনাম দেখে পাঠকরা সংবাদটি বাংলাদেশের বলে ধরে নিয়েছেন, বাংলাদেশ কেন্দ্রিক মন্তব্যও করেছেন, যা স্পষ্ট বিভ্রান্তির শামিল।

দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
মূলত, সম্প্রতি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া সংক্রান্ত একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে একাধিক পোস্টে ঘটনাটি বাংলাদেশের দাবি করে এ বিষয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত এক নোটিশ থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতের তিনটি ব্যাংককে সম্প্রতি মোটা টাকার জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কালার মার্চেন্টস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেও। আহমেদাবাদের কালার মার্চেন্টস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের আর্থিক পরিস্থিতির বিচার করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় একজন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারবেন। এই সংবাদটিই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে শিরোনামে স্থান বা দেশ উল্লেখ না থাকায় সেই সংবাদটির লিংক গণমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশের পর শুধু শিরোনাম দেখে পাঠকরা সংবাদটি বাংলাদেশের বলে ধরে নিয়েছেন, বাংলাদেশ কেন্দ্রিক মন্তব্যও করেছেন, যার ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
সুতরাং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া সংক্রান্ত ভারতের একটি সংবাদকে বাংলাদেশের দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Reserve Bank of India: Press Releases
- Rumor Scanner’s own analysis