সম্প্রতি, ইসলামপন্থীদের কর্তৃক হিন্দু নারী-পুরুষকে বাসা থেকে তুলে এনে রাস্তায় ফেলে মারধরের দাবিতে একটি ছবি এক্সে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

এক্সে প্রচার এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামপন্থীদের কর্তৃক হিন্দু নারী-পুরুষকে বাসা থেকে এনে রাস্তায় ফেলে মারধরের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এমন কোনো ঘটনার নয় বরং, প্রচারিত ছবিটি গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে দুই সংগঠনের ব্যানারে হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনার সময়কার। এতে কারো মৃত্যু হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১৫ জানুয়ারি “Protest programme comes under attack on NCTB premises” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার৷

ফটোগ্রাফার শুভ্র কান্তি দাসের তোলা এই ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর এনসিটিবি ভবন চত্বরে দুই গ্রুপের কর্মসূচি চলাকালে হামলার ঘটনার সময়কার ছবি এটি।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচির চলাকালে হাতাহাতি ও হামলা হয়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন সকাল থেকে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবিতে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামের একটি সংগঠন।
অন্যদিকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একদল মানুষ পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতিটি পুনর্বহালের দাবিতে এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি পালন করতে যায়।
প্রথম আলো জানিয়েছে, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে সমবেত মানুষেরা এনসিটিবির সামনে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে মাঝে অবস্থান নেয়। তখন দুই পাশ থেকে দুই পক্ষ পরস্পরবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল। ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দেখা যায়, বেলা একটার কিছু সময় পর কিছু লোক সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে আসা মানুষের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন আহত হন, তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন।
এছাড়া, একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ২৪, ডয়েচে ভেলে সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
অর্থাৎ, আলোচিত এই ঘটনার সাথে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এই ঘটনায় হত্যার যে দাবি করা হচ্ছে তাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সুতরাং, গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচির চলাকালে হামলার ঘটনার ছবিকে ইসলামপন্থী কর্তৃক হিন্দু নারী-পুরুষকে বাসা থেকে এনে রাস্তায় মারধরের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo- Protest programme comes under attack on NCTB premises
- Rumor Scanner’s Own Analysis