বুধবার, সেপ্টেম্বর 27, 2023
spot_img

বায়োলজিক্যালি কুমিরের মৃত্যু ঘটেনা দাবিতে কুমিরের জীবনচক্র নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, “বায়োলজিক্যালি কুমিরের মৃত্যু ঘটেনা!! কুমির এমন এক প্রাণী যার বৃদ্ধি ঘটতেই থাকে এবং এর দেহ বৃদ্ধি পেতেই থাকে। অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে অবশেষে কুমিরের মৃত্যু মৃত্যু ঘটে।” শীর্ষক ডিজিটাল ব্যানার সংবলিত একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot from Facebook 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমির জৈবিকভাবে অমর নয় বরং পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণিদের মতো কুমিরের জীবনকালও একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবদ্ধ। তবে কুমির তার জীবনচক্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি পেতে থাকার দাবিটি সত্য। কিন্তু এই বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অসীম নয়, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

প্রথমত, আমাদের সমাজের একটি বহুল প্রচারিত মিথ হচ্ছে বায়োলজিক্যালি কুমিরের কখনো মৃত্যু হয়না(Biologically Immortal)। তবে সত্য হচ্ছে যে,পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণিদের মতো কুমিরের জীবনকালও একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবদ্ধ। অর্থাৎ এরা জৈবিকভাবে অমর নয়। তবে, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের যেমন জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় পর বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে মৃত্যু ঘটতে দেখা গেলেও কুমিরের বেলায় এরকমটি ঘটেনা। 

সাধারণত একটি কুমির জৈবিক বার্ধক্যের (Biological Ageing) কারণে মৃত্যুবরণ করেনা বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্য এবং বাসস্থানের অভাব, শিকারির আক্রমণ, রোগ-বালাইসহ পরিবেশের আরো কিছু নেতিবাচক প্রভাবে কুমিরের মৃত্যু ঘটে। 

দ্বিতীয়ত, একটি কুমির তার জীবনচক্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এই কথাটি সত্য হলেও কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার কিন্তু অসীম নয় বরং একাধিক বিশ্বস্ত তথ্যসূত্রের বরাতে জানা যায়, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে, একটি কুমির অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মারা যায়না বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্য এবং বাসস্থানের অভাব, অসুখ, দুর্ঘটনা, শিকারির কবলে পড়া সহ নানা কারণে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মৃত্যুবরণ করে। এখন পর্যন্ত কুমিরের বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে ১৪০ বছর।

বার্ধক্য (Biological Ageing) বলতে কী বুঝায়?

পৃথিবীতে বিরাজমান প্রায় সমস্ত জীবন্ত প্রজাতিরই জীবনচক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে বার্ধক্য। এটি হচ্ছে জীবদেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ক্রমশ অবনতির অবস্থা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রায় প্রতিটি প্রাণীকেই সম্মুখীন হতে হয় পেশির দুর্বলতা, দেহের এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানান ধরনের বার্ধক্যজনিত সমস্যার। মানুষসহ প্রায় সকল প্রাণীরই মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই বার্ধক্য। সাধারণত কোষীয় পর্যায়ে (Cellular Stages) বার্ধক্য বলেতে কোষগুলির বিভাজন বন্ধ হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত কোষের মারা যাওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে।

Screenshot from mapageweb.umontreal.

Medical News Today এর একটি আর্টিকেলে বলা হয়, আমাদের ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে DNA এবং প্রোটিনের যে প্রসারিত অংশ রয়েছে সেটিকে বলা হয় টেলোমেরেস (Telomeres)। প্রতিবার যখন আমাদের কোষ বিভাজিত হয় ততবারই এটির দৈর্ঘ্য ছোট হতে থাকে। এভাবে একটা সময় পর যখন টেলোমেরেস এর দৈর্ঘ্য একটি নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে ছোট হয়ে যায় তখন সেই বিভাজিত কোষগুলোকে বয়স্ক হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ এই কোষগুলো ভবিষ্যতে আর বিভাজিত হতে পারেনা এবং একটা সময় পর কোষের মৃত্যু ঘটে।

screenshot from Medical News Today

বিজ্ঞানীদের মতে, টেলোমেরেস দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে যাওয়ার পেছনে শারীরিক ব্যায়াম, ঘুম, ডিপ্রেশন এবং নির্দিষ্ট কিছু জিনের মিউটেশনসহ আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। যাইহোক, টেলোমেরেস এর দৈর্ঘ্য আমাদের আমাদের জৈবিক বার্ধক্যের প্রকৃত কারণ কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে যেসকল ফ্যাক্টর টেলোমেরেস এর দৈর্ঘ্য কমার সাথে জড়িত সেগুলো সীমিত করা গেলে সেটি আমাদের তারুণ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আরো কিছুর ভূমিকা রাখতে পারে। 

কুমিরেরা কি বয়সজনিত কারণে মারা যায়?

যদিও পৃথিবীতে কোনো জীবই আজীবনের জন্য বেঁচে থাকতে পারেনা এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটা সময় পর প্রত্যেকেরই মৃত্যু অবধারিত; তবে পৃথিবীতে এমন কিছু জীব বিরাজমান রয়েছে যারা বার্ধক্যের দ্বারা খুব একটা প্রভাবিত হয়না। বলা হয়ে থাকে কুমির এমনই একটি প্রাণী যারা জৈবিক বার্ধক্যের জন্য মারা যায়না। প্রাণীবিষয়ক ওয়েবসাইট AZ Animal এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিম থেকে জন্ম নেয়া কুমিরদের মধ্য থেকে মাত্র ১% কুমিরই পরবর্তীতে বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ এদের বেঁচে থাকার হার খুবই কম। তবে অনুকূল পরিবেশে একটি কুমির সচরাচর ২৫ থেকে ৭৫ বছর বাঁচতে পারে। তবে এদের ১০০ বছর পর্যন্ত বছর পর্যন্ত বাঁচার সক্ষমতাও রয়েছে। 

উক্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, কুমিরেরা সাধারণত তাদের জৈবিক বয়সের কারণে মারা যায়না। তার পরিবর্তে তারা দৈহিকভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত বাহ্যিক কোনো নেতিবাচক প্রভাবে তারা মারা না যায়।

Screenshot from AZ Animal

তাছাড়া কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রাণী বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘The Reptile Guide’ এ বলা হয়েছে, একটু কুমির মারা যাওয়ার দিন পর্যন্ত বাড়তে থাকে।  যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান ধীর হয়ে যায়, তবে এটি কখনই পুরোপুরি বন্ধ হয় না।  এর মানে হল যে তাত্ত্বিকভাবে, প্রজাতি যত বড়, তারা তত বেশি বয়সী।

Screenshot from ‘The Reptile Guide’

তাছাড়া, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, জন্মের ৩-৪ বছর বয়সে একটি কুমির বছরে প্রায় ১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পরবর্তীতে এদের বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমে আসলেও টা সারা জীবন ধরেই চলমান থাকে।

Screenshot from Encyclopaedia Britannica 

তবে, যেহুতু কুমিরের দৈহিক এই বৃদ্ধির হার একটা সময় পর কমতে থাকে তাই তাত্ত্বিকভাবে একটা কুমিরের বৃদ্ধি একটা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অবশ্যই থেমে যাবে। কিন্তু কুমিরের বৃদ্ধির হার একেবারেই শূন্যের কোটায় নেমে আসতে যে সময় লাগে সেই পর্যায়ে যাওয়ার পূর্বেই বেশিরভাগ কুমির অন্য কারণে মারা যাওয়ার ফলে সেটা আর পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। অর্থাৎ কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধি তাদের সারাজীবন ধরে চললেও দৈহিক বৃদ্ধির হার অসীম নয়। 

কুমিরের দীর্ঘ জীবনকাল সম্পর্কে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত American University of Sharjah এর গবেষক রুকাইকা সিদ্দিকীর একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, কীভাবে একটি কুমিরের অন্ত্রে থাকা এই Anti-aging ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। উক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, যে কুমিরের কুমিরের রক্তরসে শক্তিশালী Anti-aging ক্ষমতার পাশাপাশি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। অনুমান করা হয় কুমিরের এই Anti-aging এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী ক্ষমতার পেছনে তাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া দায়ী। 

তবে, কুমিরের বার্ধক্যের ব্যাপারে প্রাণীবিষয়ক ওয়েবসাইট Animel Queries এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও বলা হয় যে কুমিরেরা বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়না তবে একটি কুমিরের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের পর বার্ধক্যের দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায় এবং তারা বয়সের সাথে তাদের জীবনীশক্তি হারায়, তবে তারা এখনও হিংস্র প্রাণী থেকে যায় যারা বেঁচে থাকা পর্যন্ত বড় হতে থাকে।

Screenshot from Animel Queries

তাছাড়া উক্ত প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা বলা হয়, “এটি আবারও বলা গুরুত্বপূর্ণ যে কুমির অমর প্রাণী নয়, যদিও এটি একটি সাধারণ বিশ্বাস। প্রকৃতপক্ষে, যদিও তারা বয়সের সাথে সাথে সারাজীবন বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে অন্য সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর মতো, কুমিরের শরীরেও বয়সের সাথে সাথে অবনতি ঘটে।” 

Screenshot from AZ Animal

তাছাড়া প্রাণী বিষয়ক ওয়েবসাইট AZ Animal এ একই ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা দাঁত হারাতে শুরু করে। দাঁত ছাড়া এরা শিকার ও খেতে অক্ষম তাই এটি শেষ পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাছাড়া এরা ছানি হওয়ার জন্যও সংবেদনশীল।  এটি তাদের শিকারের ক্ষমতাকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

কুমির কি বায়োলজিক্যালি অমর?

Screenshot from thereptileguide

আমরা প্রত্যেকেই জানি, প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রাণীই অমর না। তবে কুমিরেরা স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য জীবনের মতো বার্ধক্যে মারা যায় না। বয়সের হিসেবে অন্যান্য প্রাণীরা যেই হারে বার্ধক্যে পৌঁছায় কুমিরের ক্ষেত্রে সেটা খুবই নগণ্য। Negligible Senescence হচ্ছে এমন একটি টার্ম যা কেবল ঐসকল জীবের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় যারা সচরাচর জৈবিক বার্ধক্য প্রকাশ করেনা। 

কুমির (Both crocodiles and alligators) অমর কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা বিভক্ত রয়েছেন। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে বাইরের পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত না  হলে তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে, অন্যরা যুক্তি দেয় যে তারা সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর মতো বার্ধক্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এই বিষয়ে এখনও কোন সমন্বিত প্রমাণ নেই, এবং সেইজন্য, এটি শুধুমাত্র অনুমান অনুমান করা হয় যে এই প্রাণীগুলির কোনটিরই  সীমাবদ্ধ জীবনকাল নেই।

Screenshot from animalqueries

অন্যদিকে, কুমিরের বার্ধক্যের হার খুবই কম হলেও একাধিক বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বার্ধক্যের দৃশ্যমান লক্ষণ উপলব্ধি করা যায় এবং তারা বয়সের সাথে তাদের জীবনীশক্তি হারায়, তবে তারা এখনও হিংস্র প্রাণী থেকে যায় যারা বেঁচে থাকা পর্যন্ত বড় হতে থাকে।

সাধারণত কুমির তার জীবদ্দশায় অনেকবার নিজেদের দাঁত হারায়। তবে যখনই কোনো কুমিরের দাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন সেটি নতুন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর কুমিরের নতুন দাঁত গজানোর ক্ষমতা কমে আসে। AZ Animal এর তথ্যমতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা দাঁত হারাতে শুরু করে। দাঁত ছাড়া এরা শিকার করা এবং খেতে অক্ষম বলে এটি শেষ পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। 

পরিশেষে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় কুমির জীবনকালের মধ্যেই আবদ্ধ। তবে এদের প্রকৃত জীবনকাল নির্দিষ্ট না। সচরাচর এরা ৭০ বছরের কাছাকাছি সময় বাঁচলেও বাহ্যিক কোনো রোগবালাই, খাবারের অভাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে এরা এরচাইতে বেশি সময় ও বাঁচতে পারে। 

পৃথিবীর কোনো প্রাণীকে কি বায়োলজিক্যালি অমর বলা যায়?

Australian Academy of Science এর মতে,আজ অবধি, শুধুমাত্র একটি প্রজাতি আছে যাকে জৈবিকভাবে অমর(Biologically Immortal) বলা হয়েছে। কারণ Turritopsis dohrnii নামের এই ছোট, স্বচ্ছ জেলিফিশ প্রজাতির প্রাণীরা সারা বিশ্বের মহাসাগরেই বিচরণ করে থাকে এবং প্রয়োজনে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে তাদের জীবনচক্রের আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং বাহ্যিক কোনো কারণ দ্বারা প্রভাবিত না হলে সারাজীবন বেঁচে থাকতে পারে।

সাধারণত  যদি কোনো জেলিফিশের শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগে, তবে এরা সঙ্গে সঙ্গে ‘পলিপ দশা’য় চলে যায় এবং চারপাশে মিউকাস মেমব্রেন তৈরি করে গুটি বাঁধে পলিপের আকারে। এই পলিপ অবস্থায় এরা তিন দিন পর্যন্ত থাকে। আর এভাবেই এরা বয়স কমিয়ে ফেলে।

কিন্তু, একটা কথা হচ্ছে জেলিফিশ কিন্তু একেবারেই অমর নয়। অন্য কোনো বড় মাছ এদের খেয়ে ফেললে কিংবা বড় কোনো রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা সৈকতে আটকে যাওয়ার মতো কোনো দুর্ঘটনার কবলে পরে প্রায় সময়েই এদেরকে মৃত অবস্থায় সমুদ্র উপকূলে খুঁজে পাওয়া যায়।

Turritopsis dohrnii (Image Source: American Museum of Natural History)

তবে, বাহ্যিক কোনো কারণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হলে তাত্ত্বিকভাবে এরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে বিধায় বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ Turritopsis dohrnii জেলিফিশ প্রজাতিকে অমর প্রাণী  (biologically immortal) বলে থাকে। 

তবে জেলিফিশ ছাড়াও পৃথিবীতে আরো একটি প্রাণী রয়েছে যাদেরকে জৈবিকভাবে অমর বলা হয়। আর এরা হচ্ছে Hydra। জেলিফিশ এর মতো এই প্রাণীরাও নিজেদেরকে পলিপ দশায় নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া পৃথিবীতে আরো এমন কিছু জীব রয়েছে যারা একটা দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে। তবে এদেরকে জৈবিকভাবে অমর হিসাবে গণ্য করা হয় না। এদের মধ্যে  Lobster, Ming, Bristlecone pines বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মূলত, কুমির জৈবিকভাবে অমর নয়। কুমির তার জীবনচক্রে সারাজীবন ধরেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এই কথাটি সত্য হলেও কুমিরের দৈহিক বৃদ্ধির হার সারাজীবন একরকম থাকেনা। আর একটি কুমির অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মারা যায়না বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্য এবং বাসস্থানের অভাব, শিকারির আক্রমণ, রোগ-বালাইসহ পরিবেশের আরো অন্যান্য কিছু নেতিবাচক প্রভাবে কুমিরের মৃত্যু ঘটে। তবে ফেসবুকে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারিত দাবিগুলোতে কুমির জৈবিকভাবে অমর এবং জীবনচক্রে কুমির অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে বলে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, বায়োলজিক্যালি কুমিরের মৃত্যু ঘটেনা দাবিতে কুমিরের জীবনচক্র নিয়ে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img