ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জড়িয়ে ০৩ আগস্ট কোটা আন্দোলনকারীদের শাহবাগ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া তথ্য

গত ০৩ আগস্ট চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া গণমিছিল কর্মসূচির সমর্থনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদেরে সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের একাংশ শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে, মূল ধারার গণমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সূত্র ব্যবহার করে ‘শাহবাগ থেকে পালিয়েছে আন্দোলনকারীরা’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

শাহবাগ

উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা পালিয়েছেন দাবিটি সঠিক নয় এবং ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনও এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে পালিয়েছেন দাবিতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে ইনডিপেনডেন্ট টিভি’র ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউবে এ বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

শাহবাগে সেদিনের ঘটনা বিষয়ে জানতে পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ০৩ আগস্ট ‘শাহবাগ মোড়ে অবস্থান আন্দোলনকারীদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয় সেখানে আরও ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভের পর সাড়ে ছয়টার দিকে থেকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ শহীদ মিনার থেকে টিএসসি এলাকায় রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। আরেকটি অংশ শাহবাগ অভিমুখে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন।

আরেক জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠ ০৩ আগস্ট ‘শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবরোধ তুলে নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা রাত ১০টার দিকে চলে যান। তবে উক্ত প্রতিবেদনে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে পালিয়েছেন এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না।

এছাড়াও জাতীয় দৈনিক যুগান্তর ‘তিন ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যার দিকে শাহবাগে অবস্থান নেন। রাত নয়টার দিকে তারা শাহবাগ ছেড়ে চলে যান। তবে, এই প্রতিবেদনেও আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে পালিয়েছেন এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিল না।

মূলত, গত ০৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারের পদত্যাগে একদফা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। পরে রাত সাড়ে নয়টার পর ১০টার দিকে শাহবাগ থেকে চলে যান। এরই প্রেক্ষিতে, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সূত্র ব্যবহার করে ‘শাহবাগ থেকে পালিয়েছে আন্দোলনকারীরা’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, গত ০৩ আগস্ট আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে পালিয়ে যাননি৷ প্রকৃতপক্ষে, তারা বিক্ষোভ আন্দোলন শেষে স্বাভাবিকভাবেই শাহবাগ ত্যাগ করে। এছাড়া, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনেও আলোচিত দাবিতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নাম ব্যবহার করে ‘শাহবাগ থেকে পালিয়েছে আন্দোলনকারীরা’ শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img