সাংবাদিক তাসনিম খলিলকে নয়, লন্ডনে মারধর করা হয়েছে ভিন্ন ব্যক্তিকে 

গত ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য সফররত তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন-এর স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ (সোয়াস) ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে বিক্ষোভ করেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু বিক্ষোভকারী একজন ব্যক্তির ওপর চড়াও হচ্ছেন। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়, হামলার শিকার ব্যক্তি নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে

এক্সে প্রচারিত একই দাবি দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লন্ডনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তি সাংবাদিক তাসনিম খলিল নন। বরং, ভিন্ন এক ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও তাসনিম খলিলের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, মারধরের ঘটনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট অ্যাক্টিভিস্ট সুশান্ত দাশ গুপ্তও রয়েছেন। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক পোস্টে দাবি করা হয়, মারধরের শিকার ব্যক্তির নাম ‘ফাহিম উশার’। পোস্টটিতে ‘Fahim Ushher’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট এবং তার একটি ছবিও যুক্ত করা হয়।

এই সূত্র ধরে ফাহিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোতে তিনি নিজেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া, ‘Ahmed SR Chowdhury’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘Fahim Ushher’ অ্যাকাউন্ট ট্যাগ করা একটি পোস্টে ফাহিমের ছবি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সেই ছবির সঙ্গে ভিডিওতে দেখা ব্যক্তির তুলনা করলে চেহারার মিল পাওয়া যায়, পাশাপাশি তাসনিম খলিলের সঙ্গে পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

Face Comparison: Rumor Scanner. 

অন্যদিকে, ফেসবুকে নিজের ওপর হামলার দাবির প্রতিক্রিয়ায় তাসনিম খলিল লিখেছেন, “ঘুম থেকে উঠলাম উত্তরায়। দুপুর বেলা এক বন্ধুকে নিয়ে মাওয়া গেলাম ইলিশ মাছ খাইতে। সন্ধ্যা বেলা আরেক বন্ধুর সাথে কফি খাইলাম গুলশানে। রাতে ঘুমাইতে যাওয়ার আগে ফেসবুকে জানতে পারলাম লন্ডনে নাকি আমার উপর আক্রমণ হয়েছে।” অর্থাৎ, ঘটনার সময় তিনি লন্ডনে নয়, বাংলাদেশে ছিলেন।

এছাড়া, মাহফুজ আলমের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সফরে তাসনিম খলিল ছিলেন বলে কোনো তথ্যও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, আলোচিত সেমিনার শেষে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়ি বের হলে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গাড়ি ভেবে কয়েকজন সেটির সামনে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। পুলিশি হস্তক্ষেপে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলে গাড়ির ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। তবে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের দাবি, ওই গাড়িটিতে মাহফুজ আলম ছিলেন না।

সুতরাং, লন্ডনে ভিন্ন ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও তাসনিম খলিলকে মারধরের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img