সিলেটে পেট্রোল পাম্প বন্ধ ও ঢাকা-চট্টগ্রামে রেশনিং করে ফুয়েল দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি “সিলেটে গতকাল থেকে প্রায় ১৬ টি পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে।  বাকিগুলোও বন্ধ হবার পথে, ঢাকা এবং চট্টগ্রামেও রেশনিং করে ফুয়েল দেয়া শুরু হইসে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ১৬ টি পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে রেশনিং করে ফুয়েল দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৯ মার্চ “জ্বালানি তেলের সংকট সমাধানসহ ৬ দাবিতে সিলেটে ট্যাংকলরি মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “সিলেটে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকলেও মাত্র ৬০ হাজার লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে সিলেটের বন্ধ থাকা গ্যাসফিল্ডগুলো চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন পাম্পের মালিকেরা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। এ জন্য তাঁরা আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছেন।” অর্থ্যাৎ সিলেটে জ্বালানি সংকটের বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এছাড়া সিলেটে জ্বালানি সংকটের কারণে পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল NTV এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই “ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশনকে শোকজ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘দেশে জ্বালানি তেলের কোনো সংকট নেই। পেট্রল পাম্পগুলোকে তেল কম দেওয়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যেসব পেট্রল পাম্প এ ধরনের ঘোষণা দিচ্ছে, তারা নিজ দায়িত্বে দিচ্ছে। বিপিসি বা বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এছাড়া একইদিনে মূলধারার আরেকটি গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে “দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই: বিপিসি” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, রাজধানীসহ দেশের পেট্রল পাম্পে ডিজেল ও অকটেনের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রয়েছে।

এনটিভি ও যুগান্তরের এই প্রতিবেদন দুইটি থেকে বুঝা যায়, রাজধানীসহ দেশের পেট্রল পাম্পে ডিজেল ও অকটেনের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রয়েছে এবং দেশে জ্বালানি তেলের কোনো সংকট না থাকায় কোনো পেট্রল পাম্পকে তেল কম দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অর্থ্যাৎ সারাদেশের মতোই সিলেটের পেট্রল পাম্পগুলোর জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

অপরদিকে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৬ জুলাই “ট্যাংক ভরে জ্বালানি দিচ্ছে না কোনো কোনো ফিলিং স্টেশন” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গ্রাহকদের কাছে জ্বালানি তেল ডিজেল ও অকটেনের বিক্রি সীমিত করেছে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ফিলিং স্টেশন  ট্রাস্ট। প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকার অকটেন এবং গাড়িতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকার ডিজেল বা অকটেন বিক্রি হচ্ছে। তবে ট্রাস্ট ছাড়া রাজধানীর অন্য চারটি ফিলিং স্টেশনে আগের মতোই জ্বালানি তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

এদিকে গ্রাহকদের কাছে এভাবে জ্বালানি বিক্রির দায়ে ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় সরকারি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা

অর্থ্যাৎ, ঢাকায় রেশনিং করে জ্বালানি বিক্রির ঘটনা ঘটলেও সেটি কেবল একটি ফিলিং স্টেশনে হয়েছে এবং এই কারণে প্রতিষ্ঠানটি কারণ দর্শানোর নোটিশও পেয়েছে। 

এই ঘটনা ছাড়া মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে রেশনিং করে ফুয়েল দেওয়া সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ১৮ জুলাই দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সামাল দিতে সরকারের নতুন করে নেওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল, দেশের সব পেট্রোল পাম্প সপ্তাহে একদিন করে বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র উল্লেখ ছাড়াই সিলেটে ১৬ টি পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে রেশনিং করে ফুয়েল দেওয়ার একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, সিলেটে ১৬ টি পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে রেশনিং করে ফুয়েল দেওয়ার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়; এটি সম্পূর্ণ গুজব।

তথ্যসূত্র

Daily Prothom Alo: জ্বালানি তেলের সংকট সমাধানসহ ৬ দাবিতে সিলেটে ট্যাংকলরি মিছিল

NTV Online: ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশনকে শোকজ

Daily Jugantar: দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই: বিপিসি

Dhaka Post: পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকবে সপ্তাহে একদিন

আরও পড়ুন

spot_img