সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে বিসিএসে প্রথম হয়েছেন দাবিতে কালবেলা সংবাদ প্রকাশ করেনি

সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাধীন ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে। আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর নাম। গত ৮ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। 

এরই প্রেক্ষিতে, “সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে। আবেদ আলীর প্রশ্ন সাপ্লায়ের ১০৫ জন লিস্টের ১১ নাম্বারে সুশান্ত পালের নাম।”- শীর্ষক একটি তথ্য জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলার বরাতে প্রচার করা হয়েছে। 

এছাড়া, একই তথ্যে কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডও প্রচার হতে দেখা যায়৷ 

দাবি করা হচ্ছে- প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসি’র আলোচিত ড্রাইভার আবেদ আলীর দেওয়া প্রশ্ন পেয়ে বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন কুষ্টিয়া কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের ডেপুটি কমিশনার সুশান্ত পাল। আবেদ আলীর দেওয়া ১০৫ জনের তালিকায় সুশান্ত পালেন নাম রয়েছে- শীর্ষক তথ্যে জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলা সংবাদ প্রকাশ করেছে। 

সুশান্ত পাল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফটোকার্ড যুক্ত করে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে বিসিএসে প্রথম হয়েছেন কিংবা প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন দাবিতে জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলা কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং প্রশ্ন ফাঁসে ক্যাডার হওয়াদের কোনো তালিকাও এখন অবধি প্রকাশ করেনি পুলিশ, বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া আলোচিত দাবিটি কালবেলার বরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, গণমাধ্যমটির প্রিন্ট সংস্করণ, ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেজেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য কালবেলা অনলাইন বিভাগের প্রধান পলাশ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বলেন, কালবেলা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। 

পাশাপাশি, কালবেলার ফেসবুক পেজে নিয়মিত প্রকাশিত ফটেকার্ডের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের পার্থক্য লক্ষ করা যায়। 

Photocard Comparison By Rumor Scanner 

এরপর পিএসসি’র আলোচিত ড্রাইভার আবেদ আলীর দেওয়া প্রশ্নে ক্যাডার হওয়ার তালিকার বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে নিদিষ্ট তালিকা প্রকাশের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, ইত্তেফাক এর ওয়েবসাইটে গত ১০ জুলাই “ফাঁস করা প্রশ্নে ৩ বিসিএস ক্যাডারের তথ্য মিলেছে, তদন্ত চলছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিপিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা মামলায় গত ৯ জুলাই পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। দায় স্বীকার করা অন্য আসামিরা হলেন- পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডেসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।

জবানবন্দিতে পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান বলেছেন, তিনি ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ১০ জন প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। এর মধ্যে তিনজন বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি করছেন। এছাড়াও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রেলের বিভিন্ন নিয়োগে তার হাত ছিল। 

এছাড়া, একই দিনে দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাচ থেকে ক্যাডারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া প্রশ্ন ফাঁস চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এই তালিকা প্রকাশ করা হবে। 

অর্থাৎ, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ক্যাডার হওয়াদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান। এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ অবধি পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। 

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিটি কোনো সূত্র উল্লেখ না করেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়। (, , )

মূলত, সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪ এ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাধীন ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে। গত ৮ জুন পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরই প্রেক্ষিতে “সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে। আবেদ আলীর প্রশ্ন সাপ্লায়ের ১০৫ জন লিস্টের ১১ নাম্বারে সুশান্ত পালের নাম।”- শীর্ষক একটি তথ্য জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলার বরাতে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া একই দাবির সাথে “প্রশ্নফাস কান্ডে দোষী সাব্যস্ত হলেন সুশান্ত পাল”- শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডও প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলা এমন তথ্যে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। এছাড়া, প্রশ্নফাঁসে ক্যাডার হওয়াদের কোনো তালিকাও এখন অবধি প্রকাশ করেনি পুলিশ।

সুতরাং, সুশান্ত পাল প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন শীর্ষক দাবিতে কালবেলা নামে প্রচারিত বিষয়টি ভুয়া। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img