সম্প্রতি “বাবা মায়ের বাড়িতে আর সন্তানের আইনত অধিকার আর থাকবে না, ছেলের থাকা বা না থাকাটা নির্ভর করবে বাবা মায়ের ওপর। শেষ বয়সে বাবা মায়ের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রমে না হয়ে যেন নিজের গড়া বাড়িতেই হয় তাই এই রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট থেকে এমন কোনো রায় দেওয়া হয়নি বরং ভারতের দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম The Times of India তে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর “Son has no legal right in parents’ house, can stay at their mercy: Delhi high court” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারতের দিল্লির হাইকোর্ট একটি রায়ে বলেন, পিতা-মাতার নিজের অর্জিত বা নির্মিত বাড়িতে সন্তানের থাকার কোনো আইনী অধিকার নেই। যদি পিতামাতা চান তবেই সন্তান বাড়িতে থাকতে পারবেন। আবার এর মানে এই নয় যে, সন্তানদের বাড়ি থাকার অনুমতি দিয়েছে বলে সন্তানের সারাজীবনের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতা-মাতাকে বহন করতে হবে।
পরবর্তীতে ভারতীয় আরেকটি গণমাধ্যম The Economics Times ও ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর “Son has no legal right in parent’s house, can stay at their mercy: Delhi High Court” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রতিবেদন দুইটির কোথাও বৃদ্ধাশ্রমের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যম zeenews.india.com এর ওয়েবসাইটে একই রায় নিয়ে “বাবা-মায়ের কেনা বা তৈরি করা বাড়িতে ছেলের কোনও আইনি অধিকার নেই!” প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দিল্লি হাইকোর্টের এই রায় ভারতের অন্য হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতগুলোতেও প্রযোজ্য হবে।
অপরদিকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের এমন কোনো রায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৬ সালে ভারতে বাবা-মা বনাম ছেলে-বৌয়ের মামলায় রায় দিতে গিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট একটি রায় দেয়। এই রায়ে দিল্লি হাইকোর্ট জানায়, পিতা-মাতার নিজের অর্জিত বাড়িতে সন্তানের থাকার কোনো আইনী অধিকার নেই। যদি পিতামাতা চান তবেই সন্তান বাড়িতে থাকতে পারবেন। আবার এর মানে এই নয় যে, সন্তানদের বাড়ি থাকার অনুমতি দিয়েছে বলে সন্তানের সারাজীবনের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতা-মাতাকে বহন করতে হবে। দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়টিকে সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশের দাবিতে একটি বাংলা ডিজিটাল ব্যানার ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা প্রচার করে।
পরবর্তীতে একই তথ্য সম্বলিত ব্যানারটি বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরাও প্রচার করতে থাকে। ফলে তথ্যটি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় ভেবে ব্যবহারকারীদের মধ্যের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
বিভ্রান্তির নমুনা
যেমন এই ব্যানারটি ফেসবুকে প্রচার করে আতাউল প্রধান নামে এক ব্যক্তি লিখেন, “প্রত্যেক বাবাই শান্তি তে ও সেবায় বেঁচে থাকুক।। সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ।”
রানা সোহেল নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বর্তমানের ছেলে মেয়েদের জন্য এই আইনটা খুবই জরুরী।” বাবুল আক্তার বাবলু নামে একজন লিখেছেন, “এটাই হওয়া প্রয়োজন।”
একই দাবি ভারতেও ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান aajtak.in এটিকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ, বাবা মায়ের বাড়িতে আর সন্তানের আইনত অধিকার আর থাকবে না শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Economics Times: Son has no legal right in parent’s house, can stay at their mercy: Delhi High Court
- zeenews.india.com: বাবা-মায়ের কেনা বা তৈরি করা বাড়িতে ছেলের কোনও আইনি অধিকার নেই!