বুধবার, অক্টোবর 4, 2023
spot_img

বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের এলসি গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া

সম্প্রতি “বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের এলসি গ্রহণ না করতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সার্কুলার জারী” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের এলসি গ্রহণ না করতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কোনো সার্কুলার জারি করেনি বরং ডলারের পরিবর্তে রুপিতে লেনদেন করার পুরোনো নির্দেশনার একটি ছবি নতুন করে প্রচার করে এই দাবিটি করা হচ্ছে।

এলসি (LC) কী?

Letter of credit বা LC অর্থ হলো প্রত্যয়পত্র। সংক্ষেপে এলসি হলো আমদানিকারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা। অর্থাৎ, আমদানিকারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে আমদানিকারকের ব্যাংক যে পত্র ইস্যু করে তাকে প্রত্যয়পত্র বা এলসি বলে

অনুসন্ধানে, দাবির সাথে সংযুক্ত ছবিটিতে (নোটিশের) দেখা যায় এটি গত ২৪ আগষ্টের; অর্থাৎ প্রায় তিনমাস আগের। এছাড়াও নোটিশে উল্লিখিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ”বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে মার্কিন ডলার/অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”।

অর্থাৎ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভোগা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে রুপি বা টাকা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের ‘স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ (এসবিআই)। সোমবার দেশটির সর্ববৃহৎ সরকারি ব্যাংকটি তার শাখাগুলোতে দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এতে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যকার ব্যবসার ক্ষেত্রে রুপি ও টাকায় চুক্তি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এই তথ্য ও তারিখ অনুযায়ী কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, কলকাতার সংবাদমাধ্যম “বিশ্ববাংলা সংবাদ”-এ গত ২০ সেপ্টেম্বর “ডলার নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে টাকায় বাণিজ্য করতে সম্মত SBI” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে টাকা ও রুপিতে (ডলারের পরিবর্তে) বাণিজ্য করতে নির্দেশ দিয়েছে ভারতের বৃহত্তম ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া- এসবিআই।

এছাড়াও, দেশীয় ইংরেজি গণমাধ্যম “নিউ এজ” এর অনলাইন সংস্করণে গত ২১ সেপ্টেম্বরে “SBI asks exporters not to settle trades with Bangladesh in dollars” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রপ্তানিকারকদের বাংলাদেশের সাথে ডলারে বাণিজ্য না করার জন্য বলেছে (পরিবর্তে রুপি-টাকায় করতে বলেছে)।

মূলত, ডলার সংকটে পড়ে এলসি খোলা কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ছোট কিছু ব্যাংক এখন কোনো ধরণের এলসি খুলছে না। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত আগস্ট মাসের সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার টাকা-রুপিতে লেনদেনের নির্দেশনার একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে “বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের এলসি গ্রহণ না করতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সার্কুলার জারী” করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়া বিষয়ক পোস্ট প্রচারের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাড়া মিলছে না গ্রাহকদের দিক থেকেও। এছাড়াও, দেশে ডলার সংকটেও পোশাক শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কোনো ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত এলসি খুলতে না পারার অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। বর্তমানে এলসির ক্ষেত্রে ব্যাংকে ডলারের মূল্য নির্ধারণ ১০৫ টাকা ৩৫ পয়সা করা হয়েছে। যা দুই মাস আগেও ছিল ৯৬ টাকা। 

প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্র (এলসি) দায় মেটানোর মতো কোনো ডলার নেই। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় থেকে আসা ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানি দায় এবং গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে আমদানির নতুন এলসি খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

সুতরাং, গত আগস্ট মাসের সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার টাকা-রুপিতে লেনদেনের নির্দেশনার একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে “বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের এলসি গ্রহণ না করতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সার্কুলার জারী” করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img